‘বিয়ের নামে আমার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। জোরজবরদস্তি করে রোহিঙ্গা বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ত্রাণের লোভে আমার নামে করা হয়েছে রোহিঙ্গা কার্ড।’ ছাব্বিশ দিন কারাভোগ করার পর মুক্তি পেয়ে আজাদীকে এসব কথা বলেন রাঙ্গুনিয়ার সিরাজ খাতুন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৯ মাসের শিশু সন্তানসহ মুক্তি পান তিনি। তিনি বলেন, স্বজনদের কথায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ফিরে কাতার যেতে পাসপোর্ট করতে যাই। কিন্তু তারা আমাকে রোহিঙ্গা বলছিল। বলেছি, আমি রোহিঙ্গা না। কিন্তু তারা বিশ্বাস করেনি। বরং আমার ভোটার আইডি কার্ডসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে নেয় এবং পুলিশের হাতে তুলে দেয়। নিজের ভুলের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও পরে কারাগারে তাকে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে উল্লেখ করে সিরাজ খাতুন বলেন, রোহিঙ্গা নয়, আমি এখন বাঙালি হিসেবে বাঁচতে চাই।
সিরাজ খাতুনকে বিনা খরচে আইনি সহায়তা করেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম জিয়া হাবীব আহসান। তিনি আজাদীকে বলেন, বাঙালি ভেবে রোহিঙ্গা যুবক সিদ্দিকীর বৈবাহিক প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন সিরাজ খাতুন। এক পর্যায়ে তিনি তা বুঝতে পারেন। কিন্তু ফিরতে পারছিলেন না। এর মধ্যে প্রতারক সিদ্দিকী তাকে ছেড়ে চলে যান। সুন্দরভাবে বাঁচতে কাতারে যাওয়ার চিন্তা করেন সিরাজ খাতুন। সে অনুযায়ী ৩ জুন ডবলমুরিংয়ের পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে গেলে বিপত্তি ঘটে। আঙুলের ছাপে রোহিঙ্গা শনাক্ত হন। যা হওয়ার তাই হয়েছে। থানা হয়ে যেতে হয় কারাগারে।
তিনি বলেন, আমরা আদালতে তার জামিনের প্রার্থনা করি। ১৬ জুন আদালত সেটি আমলে নেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির জিম্মায় মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু জামিননামায় জনপ্রতিনিধি স্বাক্ষর করছিলেন না বলে তার মুক্তি হচ্ছিল না। গত সোমবার তিনি সাক্ষর করেন। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকালে তিনি মুক্তি পান। তিনি জানান, সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা হবে।
প্রসঙ্গত, দশ বছর আগে রাঙ্গুনিয়ার উত্তর পদুয়া এলাকায় একটি মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন রোহিঙ্গা যুবক সিদ্দিকী। পাশাপাশি অন্যের ফসলি জমিতে কাজ করতেন। এ সময় পূর্ব খুরুশিয়া গ্রামের মৃত নুর আলমের মেয়ে সিরাজ খাতুনের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরে তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু নানা জায়গায় ঘুরেও স্থির হতে পারছিলেন না তারা। এক পর্যায়ে আটক হন পুলিশের কাছে। পুলিশ তাদের পাঠায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। ত্রাণের আশায় তাকে রোহিঙ্গা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।