কখনো কখনো মনে হয় পৃথিবীতে যত ঝামেলা, যত দোষ, যত অশান্তি, যত বিপদ সব কিছুর মূলে যেন আমিই। কখনো কখনো নিজের জন্য মায়া হয়, আবার কখনো কখনো এই জেদ নিজেকে বড্ড ঘেন্না লাগে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন নিজের দিকে তাকাই, মনের অজান্তেই চোখের জল চলে আসে। নিজের ভুলের জন্য, নিজের আবেগের কারণে এতোটাই কষ্ট নিজেকে দেই, আধমরা মুখখানা দেখেই বড্ড মায়া হয়। কখনো কখনো মনে হয় পৃথিবীর সব অশান্তি শুধু আমার কারণেই আবার কখনো কখনো মনে হয়, হতভাগা এই আমার দোষটাই বা কি? মাঝে মাঝে মনে হয় আমার জীবনটাই একটা অভিশাপ। আমি এই পৃথিবীতে এক অভিশাপ হয়ে জন্মেছি। নিজেকে এতো যন্ত্রণা, প্রবঞ্চনা–গঞ্জনার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েও মনে হয় এই আমি যেন ভুল আর বাকি সবগুলো ঠিক। কখনো কখনো নিজের জন্য মায়া হয় আবার পরক্ষণেই মনে হয় পৃথিবীর নিকৃষ্ট মনের মানুষ আমি। জীবনে যত ঝড়, যত অশান্তি, অপমান, দুঃখ, হতাশা এসব আমারই প্রাপ্য। এই আমি এমন, পৃথিবীতে যা কিছু অশুভ, অমঙ্গল, আশংকা, ভুল–ভ্রান্তি– সব যেন আমার। আমি চাইলেও আর কারো জীবনে আশীর্বাদ হতে পারি না। আমি কি এবাবে পড়ে থাকব? নাকি ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করব? ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলালেই দেখা যায় আরও চেয়েও হাজার দুঃখ যাতনা পেয়েছে এমন হাজারো রয়েছে। তারাও তো মানুষ, তারাও তো নারী, তাদেরও স্বামী, সন্তান, সংসার ছিল। সুন্দর একটি পরিবার, সমাজ ছিল। তারও হাজার দুঃখের মাঝে কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে মানবিক হয়ে বাঁচতে হয়, মানুষের তরে মানুষের হয়ে বাঁচতে হয় তা দেখিয়ে দিতে পেরেছেন। ইতিহাসের পাতায় অমর সাক্ষী হয়ে রয়েছেন মাদার তেরেসা, বেগম রোকেয়াসহ অনেকে। আমি কেন পারব না? আমি কেন অভিশপ্ত জীবন নিয়ে বেঁচে থাকব? নিজেকে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে এত যন্ত্রণা, এত অশান্তি নিজেকে দেওয়ার পর নিজের আত্মা নিজেকে অভিশাপ দেয়। আমি কখনো এগুলো মেনে নিতে পারছি না। আমাকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এই পৃথিবী খুবই সুন্দর, এই সুন্দর পৃথিবীর আমি একজন সুন্দর মানুষ। আমি সুন্দর একটি মানবসত্তা পেয়েছি যাকে অযত্ন অবহেলায় মানব জীবনকে জর্জরিত করতে পারি না। আমার মনের ভ্রান্ত ধারণা মুচে যাক, আমি যেন অভিশপ্ত জীবনটাকে আশীর্বাদ পূর্ণ জীবনে রূপ দিতে পারি– সেটাই হউক আগামীর প্রত্যাশা।