ইয়স্তেন গার্ডার
ইয়স্তেন গার্ডার নরওয়োজিয়ান ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, শিশু সাহিত্যিক এবং বুদ্ধিজীবী। দর্শনের ইতিহাসকে উপজীব্য করে তিনি রচনা করেন ‘সোফিস ওয়ার্ল্ড’ উপন্যাসটি। এ-উপন্যাসের মাধ্যমেই তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। বইটি এরই মধ্যে ৬০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে; ছাপা হয়েছে ৪০ মিলিয়নের বেশি কপি। গার্ডার, শিশুর চোখে বিশ্বকে দেখেন বলেই তাদের জন্য লেখেন। শিশুদের সামনে জগতের রহস্য খুলে দিতে পারঙ্গম লেখক তিনি। গার্ডার তার লেখায় মেটা-ফিকশনের রীতিটি গ্রহণ করেন, গল্পের ভেতর বলতে পারেন অন্য আরেকটি গল্প। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হচ্ছে, দ্য ডায়গোনসিস অ্যান্ড আদারস স্টোরিজ (১৯৮৬), সলিটেয়ার মিস্ট্রি (১৯৯০), সোফিস ওয়ার্ল্ড (১৯৯১), দ্য ক্রিস্টমাস মিস্ট্রি (১৯৯২), থ্রু অ্যা গ্লাস ডার্ক্ললি (১৯৯৩), বিবি বোকিন’স ম্যাজিক লাইব্রেরি (১৯৯৩), এ লেটার টু সেন্ট আগাস্টিন (১৯৯৮), মায়া (১৯৯৯), দ্য ক্যাসল ইন দ্য পিরেনিস (২০০৮) ইত্যাদি। লেখালেখির স্বীকৃতি স্বরূপ ‘নরওয়েজিয়ান ক্রিটিক প্রাইজ ফর লিটারেচার্থ, ‘নরওয়েজিয়ান বুক সেলার্স প্রাইজ’, ‘উইলি-ব্রান্ট অ্যাওয়ার্ড’, ‘দ্য রয়্যাল নরওয়েজিয়ান অর্ডার’ ইত্যাদি সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৫২ সালের ৮ আগস্ট জন্ম নেওয়া সাহিত্য ও দর্শনের ছাত্র ইয়স্তেন গার্ডার দুই দশক ধরে পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত। অনূদিত এ-সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছিলেন আনা মেটক্যাফ, যা ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার ১৩ মে ২০১০ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
আনা মেটক্যাফ: আপনার প্রকৃত পাঠক কে?
ইয়স্তেন গার্ডার: আমি আমার এডিটরের কথা চিন্তা করি, যখন লিখি। তিনি আমার ঘনিষ্ট বন্ধুও।
আনা মেটক্যাফ: খাটের পাশের টেবিলে কোন বইগুলি রেখেছেন?
ইয়স্তেন গার্ডার: প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, নক্ষত্রের রাসায়নিক ও ভৌত অবস্থান বিষয়ক বিজ্ঞান, এবং পৃথিবীতে প্রাণের বিবর্তন সম্পর্কিত কিছু বই পড়ছি এখন, এমনকী ঘুমোতে যাওয়ার আগেও আমাকে পড়তে হচ্ছে। আমাকে এ-বিষয়গুলি খুব টানে। যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন আমি এই মাটিপৃথিবীর গূঢ় ব্যাপারগুলি সম্পর্কে জানতে চাই।
আনা মেটক্যাফ: কখন বুঝতে পারলেন যে, আপনি লেখক হতে চলেছেন?
ইয়স্তেন গার্ডার: ঊনিশ বছর বয়সে, যখন আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম! অবাক করার মতোই ঘটনাটি! প্রথমে ভেবেছিলাম, এত আগে বিয়ে করে ফেলব! কিন্তু তার প্রেম এত তীব্র ছিল যে, সিদ্ধান্তটি আমাকে নিতেই হয়েছিল। প্রেমের তীব্রতার সঙ্গে তখন লেখালেখিটাও মাথায় ঢুকে গেছে, কিছুতেই না লিখে থাকতে পারি না; বারবার মনে হচ্ছিল, লেখালেখি আর ছাড়তে পারব না। তারপর থেকেই আমি আগের চেয়েও স্পষ্ট করে পাখির গান শুনতে পারি!
আনা মেটক্যাফ: কোনও সাহিত্যিক চরিত্রের সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পেয়েছেন?
ইয়স্তেন গার্ডার: টমাস মানের ‘দ্য ম্যাজিক মাউন্টেন’ উপন্যাসের হ্যান্স ক্যাস্তোর্পের সাথে কোথাও যেন কিছুটা মিলে যাই! মানের চরিত্রটি খুব সরল, ছলাকলাহীন কিন্তু কৌতুকপূর্ণ আর জিজ্ঞাসু।
আনা মেটক্যাফ: লেখালেখির ক্ষেত্রে কোন লেখকরা প্রভাবিত করেছেন?
ইয়স্তেন গার্ডার: হোর্হে লুইস বোর্হেস, দস্তয়েভস্কি, হারমেন হেস, আর নরওয়ের লেখক ন্যুট হ্যামসুন। আমি কখনও বলব না যে, আমি এদের মতো লিখতে পারি বা কখনও লিখব। পাশাপাশি, ছোটদের বইপত্র থেকেও আমি লেখার প্রেরণা পেয়েছি। এ এ মিল্েন, আন্তোয়ান দে সন্তযুপেরি, ডিকেন্স এবং উনিশ-শতকি নরওয়েজিয়ান লোককাহিনিগুলি নিরন্তর প্রেরণা যুগিয়েছে।
আনা মেটক্যাফ: আপনার প্রতিদিনকার লেখালেখির রুটিন কীরকম?
ইয়স্তেন গার্ডার: লেখার নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম নেই, নির্দিষ্ট সময়ও নেই। দিনেরবেলা আমি নানারকমের কাজে জড়িত থাকি; আমি পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। ‘সোফিস ওয়ার্ল্ড’ বইটি মাত্র তিনমাসে লিখেছিলাম, লেখার সেই সময় আমি শুধু ঘুমিয়েছি আর লিখেছি। কিছুই করিনি, কেবল লেখা আর ঘুম। এভাবে একটানা লিখে শেষ করেছি বইটি। আমি যখন লিখতে শুরু করি তখন প্রতিদিন টানা ১৪ ঘণ্টা কাজ করি।
আনা মেটক্যাফ: কোন বইটি জীবনকে বদলে দিয়েছে?
ইয়স্তেন গার্ডার: আমি এখানে দুটি বইয়ের নাম বলব। নরওয়ের লেখক য়োহান বোর্গেনের উপন্যাস ‘লিলিলর্ড’, বইটি ১৯৫৫-য় প্রকাশিত হয়েছিল; দ্বিতীয়টি, দস্তয়েভস্কির ‘ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট’, ১৮ বছর বয়সে পড়েছিলাম; বই দুটি আমার মতো এক কিশোরকে প্রাপ্তমনস্ক ব্যক্তিতে পরিণত করেছিল।
আনা মেটক্যাফ: আপনি কি কোনও কিছু নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত?
ইয়স্তেন গার্ডার: বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলাই এখন আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। চোখের সামনে চেনা পৃথিবী বদলে যাচ্ছে। কতকিছুই যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে! আমরা বিলুপ্তির স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছি আর ভয়ানক পরিণতিটি দেখতে পাচ্ছি।
আনা মেটক্যাফ: আপনার সবচেয়ে প্রিয় স্থান কোনটি?
ইয়স্তেন গার্ডার: আমার সর্বশেষ উপন্যাস ‘দ্য ক্যাসল ইন দ্য পিরেনিস’-এর পটভূমি, নরওয়ের দীর্ঘ সমুদ্রখাঁড়ির শাখার কাছে ‘সোঞ্জফিওর্ড’ নামক গ্ল্যাসিয়ার নিচের একটি গ্রাম, যেখানে আছে বহু পুরানো কাঠের তৈরি একটি হোটেল… এটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় স্থান। এই হোটেলই আমি লেখালেখি করতাম।