আমরা বাংলাদেশকে বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত করার শপথ নিয়েছি

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৭ আগস্ট, ২০২৫ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন বলেছেনজুলাই আমাদের দেখিয়েছে যখন জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন কোনো ষড়যন্ত্র সফল হয় না, কোনো অপশক্তি আর টিকে থাকতে পারে না। জুলাই যোদ্ধারা সরকার, প্রশাসন ও সাধারণ জনগণের কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করেছেন। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মানুষের জন্য বাংলাদেশকে বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত করার শপথ নিয়েছি। এই ঘোষণা অত্যন্ত দুরূহ ও প্রতিনিয়ত যুদ্ধের কাজ। বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করতে সবাইকে পাশে থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রশাসনের একার পক্ষে কোন কিছু করা সম্ভব নয়। এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য আপনাদের মত বীরদেরকে আমাদের পাশে থাকতে হবে। যে সকল জুলাই যোদ্ধা বৈষমীহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন, সেটা আমরাও গড়তে চাই। আপনারা যারা আশাহত হয়েছেন, আমরাও কিন্তু মাঝেমধ্যে আশাহত হয়ে যাই। আমরা যাদেরকে শক্তি মনে করি তাদের মধ্যে বিবেকের সুর বেজে উঠছে। বাংলাদেশকে গড়ার জন্য জুলাই যোদ্ধাদের সমবেত হয়ে একই মঞ্চে আসতে হবে। গত মঙ্গলবার নগরীর সার্কিট হাউসে জুলাই শহিদ পরিবার এবং আহতদের নিয়ে আয়োজিত সম্মিলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার এ কথা বলেন। গণঅভ্যুত্থানে শহিদ, জুলাই যোদ্ধা ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তিনি।

জেলা প্রশাসনের আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, আহত জুলাই যোদ্ধারা এবং শহিদদের পরিবারের সদস্যরা।

আরো উপস্থিত ছিলেননগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) শারমিন জাহান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন, স্থানীয় সরকারের পরিচালক মনোয়ারা বেগম, উপপরিচালক মো. নোমান হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক।

সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর ২৪’র জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোন সরকারের বিরুদ্ধে নয়, বৈষম্য, দুর্নীতি, অত্যাচার, নির্যাতন, বিশ্বাস ভঙ্গের অভিমান, দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত অবিচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে হয়েছিল। কোটা আন্দোলনকে ইস্যু করে এগুলোর বিরুদ্ধে সর্বত্র জনরোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে তিনি জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্প্রিট সকলকে হৃদয়ে ধারণ করে রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবীব বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে পুলিশকে অনেক সময় অনেক ধরনের কাজ করতে হয়। পুলিশের গুলিতে অতীতে যে লোক মারা যায়নি, তা কিন্তু নয়। কিন্তু মানুষ সেগুলো মেনে নিয়েছে। ভেবেছে, হয়তো পুলিশের কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে বা আমাদের কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু এবারের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের যে ভূমিকা ছিল, আমরা যাঁরা পুলিশে আছি, আমরাও অত্যন্ত ব্যথিত। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কারও কারও মধ্যে কিছুটা পথভ্রষ্টতা দেখা গিয়েছিল। স্বাধীনতার পর তারা হয়তো সঠিক পথ পাননি, কাজ পাননি, এ জন্য হয়তো কেউ কেউ পথভ্রষ্ট হয়েছিলেন। আমি জুলাই আন্দোলনে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের বলব, এখনকার চেতনা কত দিন ধরে রাখতে পারবেন, আমি জানি না। কিন্তু সেটা ধরে রাখেন, একটু পড়াশোনায় সম্পৃক্ত হোন, কিছু করার চেষ্টা করেন।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু বলেছেনষড়যন্ত্রকারীদের বলে দেবেন, আপা আর আসবে না, কাকা আর হাসবে না। আপনারা যদি আপনাদের পরিণতি সঠিক চান, দেশটাকে যদি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যদি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে মুক্ত করতে চান, আপনাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, শত্রুরা আবার আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ অবস্থায় আপনারা আপনাদের ভাইদের কখনও ভুল বুঝবেন না। একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যারা যুদ্ধ করেছেন, তারা আজীবন ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। তাহলে কেউ আপনাদের পরাজিত করতে পারবে না। আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকেন, আপনাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না। আপনাদের সঙ্গে আমরা যারা প্রশাসনে রয়েছি, তখন আমাদেরও কিন্তু একই পরিণতি বরণ করতে হবে। তারা কিন্তু গোপনে সংগঠিত হচ্ছে। তাদের হাতে অনেক অর্থ রয়েছে, তাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। যে প্রত্যয় আপনারা ৫ আগস্টের আগে করেছিলেন, সে প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যান। আপনারাআমরা স্বপ্ন দেখছি নতুন বাংলাদেশের, তারা জাতিকে খামছে ধরার জন্য নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে। এ মুহূর্তে দলমত নির্বিশেষে দরকার ঐক্য। আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকেন তাহলে এ জাতীয় ঐক্য, জাতীয় চেতনা ভূলুণ্ঠিত হবে। এআই ব্যবহার করে দলগুলোর মধ্যে বিভ্রান্তি ছাড়ানো হচ্ছে মন্তব্য করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আপনারা জানেন না আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স দিয়ে আজকে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির, এনসিপির সঙ্গে বিএনপির, বিভিন্ন দলের মধ্যে বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করা হচ্ছে। এ ধরনের কনটেন্টগুলো ছড়িয়ে দিয়ে আপনাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করা হচ্ছে। আপনাদের ঐক্য যে বিনষ্ট করা হচ্ছে, এটা আপনারা খেয়াল করছেন না। আপনারা যদি এটা খেয়াল না করেন, শত্রুরা সুযোগ পেয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, এটা তাদের সাইবার ওয়ারফেয়ারের একটা অংশ। এই অংশকে আপনাদের প্রতিহত করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে শহিদদের আত্মত্যাগ জাতির অহংকার। তাদের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা জানাতে হবে কর্মে, নীতিতে এবং সাহসে। জেলা প্রশাসন তাদের পাশে আছে এবং থাকবে।

জেলা প্রশাসনসূত্র জানায়, অনুষ্ঠানের পূর্বে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে শহিদ শহীদুল ইসলাল ও মোহাম্মদ আলমের কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্যরা। এরপর অনুষ্ঠানের শুরুতে সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে জুলাই শহিদ পরিবারের সদস্য ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও সরকার প্রদত্ত উপহার তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ‘জুলাই অনির্বাণ ও দি আর্ট অব ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে বিয়ের অনুষ্ঠানে হামলার অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধচিটাগাং চেম্বারের বর্ধিত সদস্য ফি পুনর্বিবেচনার আহ্বান