দৈনিক আজাদী সম্পাদক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক এম এ মালেক বলেছেন, বিশ্বের অন্যতম সেবা সংগঠন রোটারি ক্লাবের সদস্যরা বিশ্বব্যাপী মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন। বিশেষ করে পোলিও নির্মূলে রোটারি ক্লাব যে অনন্য ভূমিকা রেখেছে তা পৃথিবীর মানুষ অনন্তকাল স্মরণ রাখবে।
রোটারি ক্লাব অব চিটাগাং এনশিয়েন্টের দশম অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মানুষের জন্য, মানবতার জন্য, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কিছু করতে রোটারি ক্লাবের সদস্যদের যে কার্যক্রম তা হাজার বছর অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এম এ মালেক বলেন, আমাদের জীবন শুধু নিজের জন্য নয়। জীবনের সবচেয়ে জরুরি প্রশ্ন হলো–আপনি অন্যের জন্য কী করছেন? আমরা আসলে বাঁচি তখনই, যখন অন্যের জন্য কিছু করতে পারি। যিনি সেবার মাধ্যমে অন্যকে সমৃদ্ধ করেন, তিনি এর প্রতিদান খুঁজে পান নিজের আত্মার প্রশান্তির মাঝে। সত্যি বলতে কী, আশাহীন মানুষ আশা ফিরে পাওয়ার পর তাদের মুখে যে হাসি ফুটে ওঠে, সেই দৃশ্যের চেয়ে সুন্দর কিছু আমি কখনো দেখিনি।
গতকাল শনিবার রাতে নগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রোটারি ক্লাব অব চিটাগাং এনশিয়েন্টের সভাপতি এম এ মতিন। সাবেক সভাপতি ফোরকান উদ্দীনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক গভর্নর এম এ আউয়াল ও সাবেক গভর্নর এম এ আহাদ।
এম এ মালেক বলেন, আমি জানি, মানুষের জন্য, মানবতার জন্য কিছু করার প্রেরণা থেকেই আপনারা এ ক্লাবের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। রোটারি ক্লাবের মোটো বা মূলমন্ত্র হচ্ছে ‘সার্ভিস এভাব অল’। এখানেও মানবতার সেবার কথা বলা হয়েছে। নিজস্ব স্বার্থের ঊর্ধ্বে সেবা।
নোবেলজয়ী ডক্টর আলবার্ট সোয়াইতজারকে উদ্ধৃত করে এম এ মালেক বলেন, তিনি ১৯৩৫ সালে এক স্কুলের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, আমি জানি না তোমাদের ভাগ্য কোন দিকে যাবে, তবে আমি একটি বিষয় নিশ্চিতভাবে জানি, তোমাদের মধ্যে তারাই প্রকৃত সুখী হবে, যারা সেবার পথ খুঁজে নিয়েছ এবং নিজেদের মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেছ। শুধু শিক্ষার্থী নয়, এ কথা আমাদের সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
পবিত্র কোরানের উদ্ধৃতি দিয়ে এম এ মালেক বলেন, মানুষের অসাধ্য কিছুই নেই, তবে তাকে চেষ্টা করতে হবে। আমরা মানবতার সেবার জন্য চেষ্টা করলে অবশ্যই সফলতা পাব। তিনি বলেন, লায়ন বা রোটারি করতে অগাধ টাকা–পয়সার দরকার হয় না, শুধু উদার মন থাকতে হয়।
তিনি বলেন, একদিন আমাদের চলে যেতে হবে। তবে যাওয়ার আগে পৃথিবীকে কতটুকু দিয়ে যেতে পারছি সেটার উপর আমাদের মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকা নির্ভর করবে। পৃথিবীতে নিজের একটি ‘ছাপ’ রেখে যাওয়ার জন্য তিনি রোটারি সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি সাবেক রোটারি গভর্নর এম এ আহাদ বলেন, সেবার চেয়ে বড় কোনো কিছু নেই। রোটারি সদস্যরা অনেক কাজ করেন। অনেক কাজ করেন লায়ন সদস্যরাও। রোটারি ক্লাব পোলিও নির্মূলে অনন্য অবদান রেখেছে আর লায়ন্স ক্লাব অন্ধত্ব দূরীকরণে দেখিয়েছে অসাধারণ সাফল্য। লায়ন এবং রোটারি একযোগে কাজ করলে পৃথিবীতে মিরাকল ঘটবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রোটারি ক্লাব অব চিটাগাং এনশিয়েন্টের চার্টার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আনোয়ার কবির কামরুল, অভিষেক অনুষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, ক্লাব সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, ক্লাব অ্যাডভাইজার আবদুল আজীজ, মোহাম্মদ আবদুর রহিম ও অরবিন্দু চৌধুরী। সভায় শরীফ ওসমান হাদি, সাবেক গভর্নর ড. মীর আনিসুজ্জামানসহ সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।












