আমরা কীভাবে শুনি?

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক | শুক্রবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২২ at ১১:৩১ অপরাহ্ণ

মহান রাব্বুল আ’লামিন এর পক্ষ থেকে আমাদেরকে দান করেছেন মানব শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ ‘কান’। তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিকে এমন জায়গায় প্রতিস্থাপন করেছেন যাতে করে মানুষ সঠিকভাবে শব্দ শুনতে পারে। এটি আল্লাহতায়ালার একটি বড় নেয়ামত। মুয়াজ্জিনের সুমধুর কন্ঠে যখন আযান শোনা যায় তখন পুরো পৃথিবীটা হয়ে উঠে শব্দময়। একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান নামাজের দিকে যে আহবান করা হয় সেটা যদি আমরা যথাযথভাবে না শুনি তাহলে নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয়, অন্তঃসারশূণ্য মনে হয় নিজেকে। যারা জন্মগতভাবে বধির তারা পৃথিবীর কোন শব্দ, আল-কোরআনের কোনো আওয়াজ, জন্মদাতা পিতা-মাতার কোনো উপদেশ, শিক্ষকমন্ডলীর কোনো শিক্ষণীয় নির্দেশনা শুনতে পায় না। এটি মানব জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর অধ্যায়। প্রতিটি কর্ণে রয়েছে তিনটি অংশ- বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ এবং অন্তঃকর্ণ। বহিঃকর্ণে আবার দুটি অংশ রয়েছে- 1| auricle বা pinna 2| external auditory canal বাতাসে শব্দের উৎপত্তি হলে বহিঃকর্ণের এই দুটি অংশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উৎপত্তিস্থল থেকে যে শব্দটি বের হয় তা auricle গ্রহণ করে, পরবর্তীতে সেই শব্দতরঙ্গ external auditory canal এর মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে কানের পর্দা বা ear drum কে আঘাত করে । এখানে বলে রাখা ভালো- external auditory canal ২৪ মি.মি লম্বা একটি canal । এই canal এর শেষ পর্যায়ে থাকে একটি পাতলা স্বচ্ছ পর্দা- আর এটি হচ্ছেtympanic membrane । শব্দ তরঙ্গ মধ্যকর্ণে প্রবেশ করে এতে অবস্থিত তিনটি অস্থি বা হাড়- যাদেরকে বলা হয় যথাক্রমে malleus, incus I stapes কে আঘাত করে। tympanic membrane , যেটি malleus এর সাথে যুক্ত থাকে- শব্দ তরঙ্গের আঘাতে পর্দা কেঁপে উঠার সাথে সাথে উপরোক্ত তিনটি হাড়ও কেঁপে উঠে। সবার শেষে কম্পিত হয় stapes । এখানে মজার ব্যাপার হল: আমাদের দেহে সবচেয়ে ছোট হাড় হচ্ছে এই stapes । এটির কম্পনের ফলে একটি তরঙ্গমালা সৃষ্টি হয়। সেই তরঙ্গমালা অন্তঃকর্ণে অবস্থিত কিছু পানি জাতীয় তরল পদার্থ থাকে, যাদের বলা হয় perilymph ও endolymph – তাতে কম্পন সৃষ্টি করে। সেখান থেকে organ of corti – যেটিকে বলা হয় আমাদের দেহের auditory receptor- শব্দ তরঙ্গকে রিসিভ করে। organ of corti – সেই শব্দ অনুভূতি cochlear nerve এর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠায়। মস্তিষ্ক এই শব্দকে বিশ্লেষণ করে তার অর্থ উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আর এই ঘটনাগুলো ঘটে যায় মুহূর্তের মধ্যেই। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর দেয়া মহান নেয়ামত শব্দ শুনতে পাই খুব নিমিষেই। আর এই জটিল প্রক্রিয়া যতই আমরা বর্ণনা করছি ততই মহান রাব্বুল ইজ্জতের কাছে মাথা নুয়ে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আর মনে মনে বিড় বিড় করে বলি, কি নিখুঁত সৃষ্টি আমার আল্লাহ তায়ালার! এবং আমরা আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার মধ্যেই জানতে পেরেছি- শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গেরই নির্ধারিত কাজ আছে। কোন কিছুই অযথা নয়। সেই বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী, আসমান-জমিনের একচ্ছত্র সিপাহশালার আমার আল্লাহতায়ালা হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী। আর তিনি পবিত্র কোরআনের সূরা আল ইমরানের ১৯০ ও ১৯১ নং আয়াতে বলছেন, ‘নিসন্দেহে আসমানসমূহ ও যমীনের (নিখুঁত) সৃষ্টি এবং দিব রাত্রির আবর্তনের মাঝে জ্ঞানবান লোকদের জন্যে অনেক নিদর্শন রয়েছে।
যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের এই সৃষ্টি (নৈপুণ্য) সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা করে (এবং এসব দেখে তারা বলে), হে আমাদের রব, (সৃষ্টি জগত)- এর কোনো কিছুই তুমি অযথা পয়দা করোনি, তুমি অনেক পবিত্র, অতপর তুমি আমাদের জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে নিষ্কৃতি দাও’। আর এই মহামূল্যবান অঙ্গ যদি জন্মগতভাবে কোন কাজ না করে তবে পৃথিবীটা হয়ে উঠে বিষাদময়। বিভিন্ন কারণে শ্রবণশক্তি লোপ পায়, যেমন A) head trauma, B) advanced age (presbycusis), C) Physiological congenital defects, D) prolonged exposure to loud noises, E) ototoxic medications (i.e. aspirin, certain antibiotics, and chemotherapy) F) autoimmune diseases, G) ménière’s disease, H) ear infections, I) tumors of the inner ear and cochlear nerve (acoustic neuroma)। এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের যথাযথ ব্যবহার না করার ফলে কাল কেয়ামতের কঠিন ময়দানে আল্লাহ তায়ালার কাছে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, ‘তাদের কাছে যদিও (বুঝার মতো) দিল আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা চিন্তা করে না, তাদের কাছে (দেখার মতো) চোখ থাকলেও তারা তা দিয়ে (সত্য) দেখে না, আবার তাদের কাছে (শোনার মতো) কান আছে, কিন্তু তারা সে কান দিয়ে (সত্য কথা)শোনে না; (আসলে) এরা হচ্ছে জন্তু-জানোয়ারের মতো, বরং (কোনো কোনো ক্ষেত্রে) তাদের চাইতেও এরা বেশী পথভ্রষ্ট; এসব লোকেরাই হচ্ছে উদাসীন’। সূরা আল আ’রাফ- ১৭৯।

লেখক: সভাপতি, রাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি),
জেনারেল হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুম্’আর খুতবা
পরবর্তী নিবন্ধসংসারের দায়িত্ব মোশাররফের অফিস সামলান তিশা!