ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আজ বাংলাদেশের মানুষের জন্য বড় আনন্দের দিন। বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা ফিরে পেয়েছে। আমরা আজ গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছি, গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরে পাওয়ার দিকে যাচ্ছি। এ আনন্দ আজ সকলের, আমরা যারা আন্দোলন করেছি, যারা ত্যাগ স্বীকার করেছে, যারা মৃত্যুবরণ করেছে, যারা পঙ্গু হয়ে গেছে। এই দিনটা সকলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। সুতরাং এটাকে সামনে রেখে আমরা গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছি। আল্লাহর কাছে আমরা চাইব, যেন আমরা সফল হতে পারি। বাংলাদেশ যাতে আবার পূর্ণ গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসে। বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা ফিরে পায়। এটার জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করা হয়েছে। এটাকে আমরা বৃথা যেতে দিতে পারি না।
আমীর খসরু গতকাল সোমবার বেলা ১টা ৪০ মিনিটের দিকে নগরের লাভ লেইনে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরীর কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরপর উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
খসরু বলেন, বিগত ১৭ বছর ধরে মানুষ ত্যাগ স্বীকার করেছে, তারা জীবন দিয়েছে, তারা গুম হয়েছে, খুন হয়েছে, মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে, চাকরি হারিয়েছে, ব্যবসা হারিয়েছে, নিঃস্ব হয়ে গেছে। বহু ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ আমাদের ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদ করবে, নির্বাচিত সরকার করবে–যে সরকার জনগণের কাছে, যে সংসদ জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
তিনি বলেন, সবাইকে জনগণের ওপর আস্থা রেখে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এর বাইরে অন্য কোনো পথ নেই। পথ একটাই, জনগণের উপর আস্থা রাখতে হবে, নাগরিকের ওপর আস্থা রাখতে হবে এবং তাদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে আগামীর বাংলাদেশে চলতে হবে। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র, এটা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। একে অপরের প্রতি সহনশীল হতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলে দিতে হবে। অপরের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেও আমাদের তার মতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে, সম্মান জানাতে হবে। একটা সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমাদের চালু করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ ১০ দলের জোট প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, প্রতিটি দল তাদের নিজেদের মতো করে নির্বাচনী কৌশল ঠিক করতে পারে। এটি রাজনৈতিক দলের অধিকার। আমরা জোট গঠনের বিষয়টি স্বাগত জানাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ দিন শেষে সিদ্ধান্ত নেবে। কাদের মাধ্যমে এদেশে গণতন্ত্র আগে ফিরে এসেছিল, বিগত দিনে একদলীয় শাসনের পরে, এরশাদের সময় এবং বিগত এক–এগারোর পরে দীর্ঘসময় আন্দোলন–সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কাদের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরে এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের কাছে তো অজানা নেই। আজ বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা হচ্ছে, গণতন্ত্র ফিরে পাওয়া। সুতরাং কোন দলের মাধ্যমে বারবার গণতন্ত্র ফিরে এসেছে, কারা গণতন্ত্রের চর্চা ব্যাহত করেছে আর কারা গণতন্ত্রের জন্য সবকছু বিসর্জন দিতে রাজি আছে–বাংলাদেশের মানুষের কিছুই অজানা নেই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে উন্নয়ন বলতে আমরা সঠিক উন্নয়ন করব, ওই বাটপারি–চুরির উন্নয়ন না। সঠিক উন্নয়ন, যেখানে প্রতিটি মানুষ উন্নয়নের সুফল পেতে পারে। উন্নয়নে যেন তারা অংশগ্রহণ করতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ জানে এটা কারা করতে পারবে এবং আমি নিশ্চিত আগামী নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সেটা তারা আবারো প্রমাণ করবে। এই চট্টগ্রাম বন্দরে যত উন্নয়ন হয়েছে সব বিএনপির আমলে হয়েছে। এই বন্দর আগামী দিনে আরও উন্নত জায়গায় যাবে।
জানা গেছে, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগে আমীর খসরু সকালে কাট্টলিতে তার পিতা সাবেক মন্ত্রী মরহুম মাহমুদুন নবী চৌধুরীর কবর ও মায়ের কবর জিয়ারত করেন।
মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মিয়া ভোলা, এম এ আজিজ, মফিজুল হক ভূঁইয়া, সেলিম উদ্দিন শাহিন, নেজামুদ্দিন, মহানগর বিএনপির সদস্য মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও বেলায়েত।











