আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়ায় সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি

| রবিবার , ৯ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে আজাদীতে প্রকাশিত একটি সংবাদে জানা গেছে। গত ৬ এপ্রিল ‘ক্রমান্বয়ে বাড়ছে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য, আগের তুলনায় বেড়েছে কন্টেনার হ্যান্ডলিং’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, প্রত্যাশিত গতিতে না হলেও দেশের আমদানিরপ্তানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে গতিশীলতা সৃষ্টির ফলে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামেও বাড়ছে কন্টেনার হ্যান্ডলিংসহ অন্যান্য কার্যক্রম। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, ডলার সংকটসহ বৈশ্বিক সংকটে এক বছরের ব্যবধানে বৈদেশিক বাণিজ্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছিল। ক্রমাগত কমতে থাকা আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম গত মাস থেকে বাড়তে শুরু করেছে। চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে বৈদেশিক বাণিজ্যে কমে যাওয়া অংশীদারত্ব বাংলাদেশ ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতিতেও বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

তবে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, বৈশ্বিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। এই প্রভাব আগামী দিনগুলোয় আরও প্রকট হবে। এতে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের মন্দার মতো বাংলাদেশের আর্থিক খাতেও মন্দা দেখা দিয়েছে। এ খাতে ঝুঁকিও বাড়ছে। বিশেষ করে বৈদেশিক খাত থেকে এ ঝুঁকি সংক্রমিত হয়ে অভ্যন্তরীণ খাতেও ছড়িয়ে পড়ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত আইএমএফএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত অর্থনীতির সাত জাতিগোষ্ঠীর ‘গ্রুপ জি সেভেন’ দেশগুলোর অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতির নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালি। বড় অর্থনীতির দেশ হিসাবে এসব দেশকে আইএমএফ স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যেমন আমদানিরপ্তানি বাণিজ্য বেশি, তেমনই রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ এসব দেশ থেকে আসে। এতে বলা হয়, রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ওইসব দেশে পণ্যমূল্য বেড়ে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে গেছে। এ হার ঠেকাতে দেশগুলো সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও সংকোচিত হয়েছে। ঋণের সুদের হার বেড়ে গেছে। ব্যাংকে তারল্যের প্রবাহ কমেছে। অর্থনৈতিক মন্দায় ওইসব দেশ থেকে রপ্তানি আয় কমে গেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও এর বিপরীতে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে ওইসব দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আসার হার কমেছে। বেড়েছে ব্যয়ের হার। ফলে ওইসব দেশ থেকে বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রা আসার কারণে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যে তারল্যের জোগান বাড়ত, সেটি এখন হচ্ছে না। এছাড়া ওইসব দেশ থেকে পণ্য আমদানির নামে একধরনের মূল্যস্ফীতি দেশে আসছে। এতে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাচ্ছে। এতে দেশের আর্থিক খাতে ঝুঁকির প্রবণতা বাড়ছে।

অন্যদিকে আজাদীর সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি বছরের শুরুতে পরিস্থিতি এত নাজুক হয়ে উঠেছিল যে চট্টগ্রাম বন্দর থ্রি মিলিয়নস ক্লাব থেকে ছিটকে পড়ার শংকা প্রকাশ করা হয়েছিল। আমদানি রপ্তানি কমে যাওয়ায় বাড়ছিল এমটি (খালি) কন্টেনারের সংখ্যা। অবশ্য মার্চ মাস থেকে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টাতে শুরু করেছে। স্বাভাবিক সময়ের মতো গতিশীল না হলে দেশে আমদানি রপ্তানি কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে।

আমদানিরপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়া বাংলাদেশের জন্য আনন্দের ঘটনা। অর্থনীতিবিদদের মতে, এখন দরকার হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা। ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হলে সেটা খুবই সম্ভব। তার আগে চারটি কাজ করতে হবে বাংলাদেশকেপণ্য বহুমুখীকরণ, বাজার বহুমুখীকরণ, প্রযুক্তি বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ বহুমুখীকরণ। পণ্য বহুমুখীকরণে সবার আগে পোশাকের বাইরে পাট, চামড়া, সিরামিক ইত্যাদি খাতে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে। এরপরেই রয়েছে হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়া জাত পণ্য, ওষুধ, বাইসাইকেল, প্লাস্টিক পণ্য, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য ইত্যাদি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের বেশিরভাগটাই নির্ভর করে বড় যে দুটি বাজার রয়েছে, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা, সেখানকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপরে। সাম্প্রতিক যে বিশ্ব মন্দার যে প্রভাব ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে তা হয়তো আরও গভীর হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রপ্তানি আয়ের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য রপ্তানির নতুন গন্তব্য সৃষ্টি কিংবা বিদ্যমান গন্তব্যগুলোকে কীভাবে আরও সমৃদ্ধ করা যায়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া রপ্তানির ঝুড়িতে বিশ্ববাজারে প্রবেশে সক্ষম এমন পণ্যের সম্ভার বাড়াতে হবে। তাঁরা বলেন, আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়ানোর যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা অব্যাহত রাখা গেলে বন্দরসহ দেশের অর্থনীতি বড় সংকট থেকে রক্ষা পাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে