আমদানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি ৩ বছরেও

ক্ষতিকর রিসাইকেল্ড লুব্রিকেন্ট

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ

সরকারের আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-২০১৮-এ আমদানি নিষিদ্ধ থাকলেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ক্ষতিকর রিসাইকেল্ড লুব্রিকেন্ট পণ্যের আমদানির সুযোগ রাখা হয়। এরপর দেশে লুব্রিকেন্ট শিল্পে বিনিয়োগকারীদের বাধার মুখে আমদানি নীতি আদেশ ২০১৮-২০২১ এর খসড়ায় রিসাইকেল্ড লুব্রিকেন্ট পণ্য আমদানি নিষিদ্ধের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট তৎকালীন বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি গত তিন বছরেও। গেজেট আকারে ঘোষিত হয়নি ২০১৮-২০২১ সালের আমদানি নীতি আদেশও।
এ বিষয়ে জানতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাফর উদ্দীনের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা দিলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রতি তিন বছর অন্তর আমদানি নীতি আদেশ ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু চলতি ২০১৮-২০২১ পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদের মধ্যে দুই বছর ৮ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই নীতি আদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ না হওয়ার কোনো কারণও খুঁজে পাচ্ছেন না অভিজ্ঞ মহল। এতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ক্ষতিকর রিসাইকেল্ড লুব্রিকেন্ট আমদানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়ায় দেশের লুব ব্লান্ডিং শিল্পগুলো হুমকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন লুব অয়েলের চাহিদা রয়েছে। আমদানিকৃত ভার্জিন লুব বেইস অয়েল থেকে এসব লুব অয়েল তৈরি হয়। তবে বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি ১৮ ব্লেন্ডিং প্লান্টের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি থাকলেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে রিসাইকেল্ড লুব বেইস অয়েল (এইচএস কোড ২৭১০.১৯.২৩) এবং রিসাইকেল্ড লুব অয়েল (এইচএস কোড ২৭১০.১৯.২৪) আমদানির সুযোগ রাখা হয়। এরপর দেশে বেল্ডিং প্লান্ট উদ্যোক্তাদের বাধার মুখে ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবিত আমদানি নীতি আদেশ ২০১৮-২০২১ এর সংশোধন সংক্রান্ত সভায় এসব লুব্রিকেন্ট আমদানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়।
এর আমদানি নীতি আদেশ ২০১৮-২০২১ এর খসড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা হলেও এখনো পর্যন্ত সেটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয়নি। যে কারণে চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটেও রিসাইকেল্ড লুব বেইস অয়েলের জন্য এইচএস কোড ২৭১০.১৯.২২ এবং রিসাইকেল্ড লুব্রিকেটিং অয়েলের জন্য এইচএস কোড ২৭১০.১৯.৩২ রাখা হয়। তবে এই দুটি পণ্য বর্তমানে আমদানি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা গেছে, ভার্জিন বেইস অয়েল মূলত একটি বিশুদ্ধ খনিজ তৈল। এসব ভার্জিন বেইস অয়েলের সাথে প্রয়োজনীয় এডিটিভ মিশিয়ে লুব্রিকেটিং অয়েল তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি ২০টি প্রতিষ্ঠান লুব্রিকেটিং অয়েল তৈরি করে থাকে। এসব লুব্রিকেটিং অয়েল যানবাহনের ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয়। লুব্রিকেটিং অয়েল সাধারণত তাপ সহনশীল, ঘর্ষণ প্রতিরোধী, মরিচা প্রতিরোধী হয়। যানবাহন বাদেও যেকোনো প্রকার ইঞ্জিনচালিত যন্ত্রাংশে, কারখানার বিভিন্ন মেশিন ও নৌযানে লুব্রিকেন্ট ব্যবহৃত হয়। নিম্নমানের লুব্রিকেটিং পণ্য ব্যবহার করা হলে গাড়ির ইঞ্জিনসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ দ্রুত নষ্ট হবে এবং আয়ুষ্কালও দ্রুত কমে আসবে। কলকারখানার মূল্যবান যন্ত্রাংশও নষ্ট হবে। এতে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। যে কারণে রিসাইকেল্ড বেইস অয়েল আমদানির নিষিদ্ধ করার জন্য আগে থেকেই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে অনুরোধ করে আসছিল বিপিসি।
বাংলাদেশ লুব ব্লেন্ডার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম ছালেহ অর্পণ আজাদীকে বলেন, ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রস্তাবিত আমদানি নীতি আদেশের সংশোধনীর বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে তৎকালীন বাণিজ্য সচিব সভাপতিত্ব করেছিলেন। ওই বৈঠকে এফবিসিসিআই, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিপিসি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে রিসাইকেল্ড বেইস অয়েল ও রিসাইকেল লুব অয়েল আমদানি নিষিদ্ধের জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। দীর্ঘ সময়েও আমদানি নীতি আদেশ ২০১৮-২০২১ এখনো গেজেট আকারে প্রকাশ হয়নি। যে কারণে ক্ষতিকর রিসাইকেল্ড বেইস অয়েল ও রিসাইকেল্ড লুব অয়েল আমদানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তটি আইনগতভাবে কার্যকর হয়নি। কেন হয়নি সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ আজাদীকে বলেন, প্রতি তিন বছর অন্তর আমদানি নীতিমালা প্রকাশ করা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রেগুলার কাজ। কিন্তু পৌনে তিন বছর সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও সঠিক সময়ে আমদানি নীতি আদেশ ২০১৮-২০২১ এখনো গেজেট আকারে প্রকাশ করতে না পারার বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন পণ্য আমদানির বিষয়ে আমদানি নীতি আদেশে হালনাগাদ তথ্য থাকে। কিন্তু সঠিক সময়ে নীতি আদেশ ঘোষণা না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে নীতিগত সহায়তা সঠিকভাবে পাচ্ছে না। আবার শিল্পের কাঁচামাল আমদানিসহ নানা পণ্য আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের বেকায়দায় পড়তে হয়। তাছাড়া নিষিদ্ধ পণ্য নিয়েও আসল ব্যবসায়ীদের শঙ্কায় থাকতে হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ অবশ্যই ইতিহাস : ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধবাইশারীতে চেয়ারম্যান প্রত্যাশী ৭ নেতার নাম ঘোষণা