নজিরবিহীনভাবে আমদানিকৃত এলসিবিহীন গাড়ি নিয়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে মোংলা কাস্টমস। মোংলা বন্দরের সব গাড়ির শুল্কায়নে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা অবলম্বনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কাস্টমসের একজন জয়েন্ট কমিশনার এবং একজন উপ কমিশনারকে পুরো বিষয়টি মনিটরিং করার দায়িত্বও দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দরে সাম্প্রতিক সময়ে বিপুল পরিমাণ এলসিবিহীন গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। এলসি খোলা না হলেও জাপান থেকে জাহাজে বোঝাই করে এসব গাড়ি দেশে নিয়ে আসেন চট্টগ্রাম ও
ঢাকার কয়েকজন আমদানিকারক। এরমধ্যে চট্টগ্রামের গাড়ি বেশি হলেও শুল্কায়ন এবং বন্দরের ভাড়ার সুবিধার কারণে বেশির ভাগ গাড়ি খালাস করা হয়েছে মোংলায়। প্রাথমিক হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরে ২১৯টি এবং মোংলা বন্দরে ৫৫০টি এলসিবিহীন গাড়ি খালাস করা হয়েছে। আরো প্রায় ১৩শ’ গাড়ি নিয়ে দুইটি জাহাজ জাপান থেকে রওয়ানা দিলেও গাড়িগুলো সিংগাপুর থেকে ফের জাপানে নিয়ে যাওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এলসি ম্যানেজ না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের কাছ থেকে এসব গাড়ি রি–এঙপোর্ট করার তাগাদা দিচ্ছেন জাপানের দুইজন বাংলাদেশি রপ্তানিকারক।
মোংলা কাস্টমসের অফিস আদেশে বলা হয়েছে যে, সমপ্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম ঋণপত্র খোলা ব্যতীত (এলসিবিহীন) গাড়ি আমদানির সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে শুল্কায়ন গ্রুপ ৪(এ)-এর কর্মকর্তাগণকে এসাইকোডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে দাখিলকৃত কোনো এলসির সংশ্লিষ্ট তথ্য–উপাত্তের সাথে শুল্কায়নের সময় আমদানিকারক বা তার মনোনীত প্রতিনিধি কর্তৃক দাখিলকৃত এলসির হার্ডকপি আড়াআড়িভাবে যাচাই (ক্রস চেক) করে এলসির ঠিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। আমদানি নীতি আদেশ ২০২১–২৪ এর বিধিবিধান মোতাবেক ডিলার ব্যাংক কর্তৃক স্থাপিত এলসি বৈধতার সময়সীমার মধ্যে গাড়ির জাহাজীকরণ সম্পন্ন হয়েছে কিনা তা সংশ্লিষ্ট গাড়ির বিল অব লেডিংয়ে দলিলাদির বিএল ইস্যুর তারিখ, গাড়ির জাহাজের লোড, পোর্ট ত্যাগের তারিখ, গাড়ির ক্যারিয়ারের ম্যানিফেস্ট রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও তারিখ যাচাই করে শুল্কায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এলসি স্থাপনের পূর্বে গাড়ি জাহাজীকরণ করার প্রমাণ পাওয়া গেলে, তা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করতে হবে। সামগ্রিক বিষয়টি যুগ্ম কমিশনার–১, ডিসি–২ নিয়মিত মনিটর করবেন বলেও মোংলা কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার–১ মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
মোংলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সতর্কতা জারি করলেও চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দরে ঠিক কতটি গাড়ি এলসিবিহীনভাবে আনা হয়েছে তার কোনো সঠিক হিসেব নেই। ‘মালয়েশিয়া স্টার’ নামের সর্বশেষ যে জাহাজটি গাড়ি নিয়ে গত ২২ নভেম্বর চট্টগ্রামে পৌঁছে সেটি জাপান থেকে ৮৭২টি গাড়ি এনেছিল। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে নেমেছে ৩২১টি গাড়ি এবং মোংলা বন্দরে খালাস করা হয় ৫৫১টি গাড়ি। এরমধ্যে ঠিক কতটি গাড়ি এলসিবিহীন অবস্থায় এসেছে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। অবশ্য এর আগের দুইটি জাহাজেও একইভাবে এলসিবিহীন গাড়ি খালাস হয়েছে চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দরে।
কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যতক্ষণ না গাড়িগুলো শুল্কায়ন করতে আসবে ততক্ষণ এগুলোর এলসি আছে কিনা জানার সুযোগ নেই। প্রতিটি জাহাজের বিল অব লেডিং থেকে গাড়ির এলসি আছে কিনা নিশ্চিত হতে হবে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, শিপিং লাইনগুলো এখন পর্যন্ত গাড়ির বিপরীতে বিল অব লেডিং ইস্যু করেনি। গাড়িগুলোর এলসি না থাকার কারণে তারা কোনো বিএল ইস্যু করতে পারছে না। এতে করে গাড়িগুলো শুল্কায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেছেন কাস্টমসের একজন কর্মকর্তা।