করোনাভাইরাস মহামারীতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়লেও অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক আমদানি আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। মহামারীর আগে প্রতি মাসে পণ্য আমদানিতে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ হলেও এখন তা তিন বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আর তাতে বিনিয়োগে বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা; যার ফল হবে কর্মসংস্থান কমে যাওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার আমদানি সংক্রান্ত সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) বিভিন্ন পণ্য আমদানি জন্য ৭৩৬ কোটি ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের ওই দুই মাসে ৯৫০ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। এ হিসাবে দুই মাসে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, খাদ্য পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্যের এলসি খোলার পরিমাণই কমেছে। শিল্প স্থাপনের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ২৫ শতাংশ। খবর বিডিনিউজের।
গত বছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৯৯ কোটি ২৮ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। এই বছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে তা ৭৪ কোটি ৫২ লাখ ডলারে নেমে এসেছে। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য গত বছর ওই দুই মাসে ৩২০ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। এবার খোলা হয়েছে ২৮৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের। শতকরা হিসাবে আমদানি কমেছে ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। একইভাবে শিল্প খাতের মধ্যবর্তী পণ্য আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ১৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। জ্বালানি তেল আমদানির এলসি কমেছে ৫৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের কমেছে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-আগস্ট সময়ে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ১৮ শতাংশ। গত বছরের এই দুই মাসে যেখানে ৮৯৭ কোটি ৪০ লাখ ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল, এবছর একই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ৭৩৬ কোটি ডলারের এলসি।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর আমদানি কমে যাওয়াকে অর্থনীতির জন্য ‘অশনি সঙ্কেত’ মনে করছেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, রেমিটেন্স, রিজার্ভ, রপ্তানি আয় বাড়ায় অর্থনীতিতে এক ধরনের ‘স্বস্তি’ বিরাজ করছে। কিন্তু এ সব সূচকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমদানি বাড়ছে না, উল্টো অনেক কমছে। এটা চিন্তার বিষয়। আমদানির এই দৈন্যদশার প্রভাব পড়বে দেশের বিনিয়োগে। এমনিতেই বেশ কিছুদিন ধরে বিনিয়োগে স্থবিরতা চলছিল, জিডিপির ৩১-৩২ শতাংশে আটকে ছিল।
এখন ভবিষ্যতে বিনিয়োগের অবস্থা আরও খারাপ হবে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে আহসান মনসুর বলেন, আমদানি কমা মানে বিনিয়োগ কমে যাওয়া। আর বিনিয়োগ কমা মানে কর্মসংস্থান কমে যাওয়া। সবকিছু মিলিয়ে বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়েছি আমরা। সে কারণেই আমি বার বার বলছি, রেমিটেন্স, রিজার্ভ, রপ্তানি আয়ের বর্তমান ইতিবাচক ধারা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না।