সরকারের আমদানিকৃত ৭২১ বস্তা চাল নিয়ে বন্দরের অভ্যন্তরে ১০ দিন ধরে আটকে আছে তিনটি ট্রাক। ভারত থেকে আসা প্রথম চালানের এসব চাল গত ৩ জানুয়ারি ট্রাকে বোঝাই করা হলেও গত রাত পর্যন্ত ছাড়া পায়নি। ঘোষণার অতিরিক্ত হিসেবে চিহ্নিত এসব চালের ভবিষ্যৎ কী তা–ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ঘোষণার বাড়তি পণ্যকে ‘মিস ডিকলারেশন’ হিসেবে চিহ্নিত করে। এই ধরনের পণ্য শুল্ক এবং জরিমানা দিয়ে খালাস করার বিধান থাকলেও আটকে পড়া অন্তত পঁচিশ লাখ টাকা দামের ওই চালের ব্যাপারে ১০ দিনেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সূত্রে জানা যায়, সরকারের খাদ্য অধিদপ্তর ও ভারতীয় সরবরাহকারী পাত্তাভির মধ্যে সম্পাদিত উন্মুক্ত দরপত্রের আওতায় প্রথম চালানে ২৪ হাজার ৬৯০ টন চাল নিয়ে এমভি তানাইস ড্রিম জাহাজটি গত ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। ওইদিন জাহাজটি থেকে চাল খালাস শুরু হয়। টানা ৮ দিন চাল খালাসের ফলে ৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে সব চাল খালাস সম্পন্ন হয়।
কিন্তু খালাস শেষে ৭২১ বস্তা চাল অতিরিক্ত পাওয়া যায়। ৩৬.০৫ টন ওজনের এই চাল খাদ্য গুদামে নেওয়ার জন্য তিনটি ট্রাকে বোঝাই করা ছিল। কিন্তু কাস্টমস এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ চাল বোঝাই ট্রাকগুলো আটকে দেয়। এর মধ্যে যশোর–ট–১১–০১৩৯ ট্রাকে ৩০০ বস্তা, ঢাকা–মেট্রো–ট–১৪–০৩৩৪ ট্রাকে ২৪৭ বস্তা এবং চট্ট–মেট্রো–ট–১১–৪৪৮৮ ট্রাকে ১৭৪ বস্তা চাল রয়েছে।
শিপিং এজেন্ট ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, লোডিং ও ডিসচার্জিংকালে বন্দরে শ্রমিকদের হুক ব্যবহারের কারণে বস্তা ফেটে গিয়ে চাল জাহাজের হ্যাজে পড়ে যায়। ওই চাল আবার নতুন করে বস্তায় ভর্তি করতে হয়। বস্তাগুলো হাতে সেলাই করে নিতে হয়। এতে সবগুলো বস্তায় ওজন ঠিকভাবে রক্ষা করা সম্ভব হয় না।
তারা দাবি করেন, আর্দ্রতা পরিবর্তন ও বন্দরে স্কেলে মাপার সময় কিছু তারতম্য হওয়ার কারণে বিল অব ল্যান্ডিংয়ের ঘোষিত পণ্যের পরিমাণ অনেক সময় কম–বেশি হয়ে যায়। এটা স্বাভাবিক একটি ব্যাপার উল্লেখ করে খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, মূলত উক্ত ৭২১ বস্তা চাল ঘোষিত বিল অব লেন্ডিংয়ের অন্তর্ভুক্ত। অতিরিক্ত চাল পরিবাহিত হয়নি।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, পণ্যের পরিমাণ বরাবর ও কম হলে তা উল্লেখ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ আউট–টার্ন রিপোর্ট ইস্যু করে শিপিং এজেন্ট ও কাস্টমের কাছে প্রেরণ করে। কম হলে তা কেন কম হয়েছে তার ব্যাখ্যা চেয়ে কাস্টম কর্তৃপক্ষ শিপিং এজেন্টের কাছে লেটার অফ কল ইস্যু করে। শিপিং এজেন্ট সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে কম হওয়া পরিমাণের ওপর জরিমানা করা হয়। একইভাবে পণ্য বেশি এলেও তার ব্যাখা চেয়ে সন্তোষজনক জবাব না পেলে শুল্ক আরোপসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। এখন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে চাল বোঝাই তিনটি ট্রাক দশ দিন ধরে আটকে রেখেছে।
এ ব্যাপারে খাদ্য বিভাগের কন্ট্রোলার অব মুভমেন্ট অ্যান্ড স্টোরেজ (সিএমএস) জ্ঞানপ্রিয় বিদুষী চাকমা বলেন, কাস্টমস ফর্মালিটির জন্য ট্রাক তিনটি আটকে রাখা হয়েছে। এর বেশি কোনো মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বিষয়টি কাস্টমসের। ঘোষণার বেশি চাল আনলে তা আটক করে জরিমানা বা শুল্ক নিয়ে ছাড়ার কথা। নিশ্চয় কাস্টমস প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ঘোষণার অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে আসা হলে তা মিসডিকলারেশন (মিথ্যা ঘোষণা) হবে। এই পণ্য বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে। এছাড়া শুল্ক এবং জরিমানা পরিশোধ করে এই পণ্য খালাস করার সুযোগ রয়েছে।
অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, এগুলো আমদানিকৃত চালের চেয়ে বেশি। বস্তা ছিড়ে যাওয়া বা হুকের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াও স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ২৬ হাজার টনের বেশি চালের মধ্যে কয়েক টন এদিক–ওদিক হওয়া স্বাভাবিক। বেশি হলে তার জন্য শুল্ক বা জরিমানা আদায় করা হয়। ট্রাকগুলোর ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।