মামলাসহ নানা জটিলতায় যথাযথভাবে নিলাম করতে না পারায় কোটি কোটি টাকার আমদানিকৃত গাড়ি নিয়ে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কয়েকশ’ গাড়ি আটকা পড়ে আছে বহুদিন ধরে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে গাড়িগুলো অচল হয়েছে আগেই, এখন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গাড়িগুলো ছেয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন লতা এবং আগাছায়। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গাড়িগুলো নিলামে বিক্রির জন্য দফায় দফায় চেষ্টা করেও সফল হয়নি। ফলে দিনে দিনে গাড়িগুলো এক ভয়াল জঞ্জালে পরিণত হচ্ছে। ত্যক্ত বিরক্ত চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এসব গাড়ির মধ্যে ১৮২টি গাড়ি আলাদাভাবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে ৭৪টি গাড়ি প্রাথমিকভাবে কেটে স্ক্র্যাপ করা হচ্ছে। গাড়িগুলোর ব্যাপারে সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে আনা বিপুল সংখ্যক গাড়ি বন্দরের অভ্যন্তরে আটকা পড়ে আছে। এসব গাড়ি সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকেরা শুল্ক পরিশোধ না করায় বন্দর থেকে ছাড় করা সম্ভব হয়নি। বহুদিন ধরে আটকে থাকা গাড়ির সংখ্যা পাঁচশ’র কাছাকাছি। বিভিন্ন মডেলের প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, জিপ, ডাম্প ট্রাক, ডাবল কেবিন পিকআপ, মিনি পিকআপ ভ্যানসহ নানা ধরনের গাড়িতে ভর্তি বিশাল একটি এলাকা। গাড়িগুলোতে জং ধরেছে, গাছগাছালীসহ নানা আগাছায় ছেয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে যাওয়া গাড়িগুলো চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। জায়গা দখল করে থাকা ছাড়া এসব গাড়ির আর কোন কাজ নেই। তবে গাড়িগুলোর অনেকগুলোরই বিভিন্ন মামলা রয়েছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গাড়িগুলো নিলামে বিক্রির জন্য বিভিন্ন সময় চেষ্টা করলেও নানা জটিলতায় সম্ভব হয়নি। এতে করে দিনে দিনে বিশাল এক গাড়ির জঞ্জাল তৈরি হয়ে রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গাড়িগুলোর তালিকা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করেছি। এখন এগুলোর ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেয়ার তা কাস্টমসই নেবে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তবে বন্দরের জায়গা দখল করে থাকায় আমাদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গাড়িগুলোর ব্যাপারে সময়মতো সিদ্ধান্ত নিলে সরকার কয়েকশ’ কোটি টাকার রাজস্ব পেতো। এসব গাড়ি নিলামে বিক্রি করে সরকার টাকা পেতো। কিংবা আমদানিকারকেরা খালাস করে নিলেও সরকার শুল্ক হিসেবে রাজস্ব পেতো। এখন গাড়িগুলো আর কোন কাজে পৌঁছবে না। গাড়িগুলো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। জং ধরে সব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এগুলো আর স্ক্র্যাপ হিসেবেও খুব একটা কদর পাবে না।
প্রাথমিক হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় পাঁচশ’ গাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ১৮২টি গাড়িকে স্ক্র্যাপ করার জন্য আলাদাভাবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে ৭৪টি কাটা হচ্ছে। তবে বিপুল সংখ্যক গাড়ি লতা এবং আগাছায় চাপা পড়ছে। প্রতিদিনই জঞ্জাল বাড়ছে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, একটি ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে এসব গাড়ির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ–কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, বেশ কিছু গাড়ি চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা এগুলো স্ক্র্যাপ করে ফেলছি। বাকি গাড়িগুলোর ব্যাপারেও ক্রমান্বয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।