আমদানিকারকদের মাঝে বাড়তি খরচের উদ্বেগ

বন্দরের ইয়ার্ডে চল্লিশ হাজারে টিইইউএসের বেশি কন্টেনার । বিপুল চাপে ব্যাহত হচ্ছে ডেলিভারি

হাসান আকবর | শনিবার , ২৭ জুলাই, ২০২৪ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

দুইদিন পুরোদমে কাজ চললেও গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি কিছুটা কমেছে। এতে বন্দরের ইয়ার্ডে জমা হওয়া কন্টেনারের সংখ্যা আবারো চল্লিশ হাজার টিইইউএসএর বেশিতে গিয়ে পৌঁছে। আগামী রোববার থেকে ডেলিভারি পুরোদমে শুরু হলে বন্দরে আটকা পড়া কন্টেনারের পরিমাণ কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। বিপুল চাপে সময়মতো কন্টেনার খালাস করতে না পেরে আমদানিকারকদের মাঝে ইতোমধ্যে বাড়তি খরচের উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

কোটা সংস্কার ইস্যুকে ঘিরে সৃষ্ট আন্দোলন, সাধারণ ছুটি, কারফিউ এবং সর্বোপরি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে বন্ধ হয়ে যায় বন্দর থেকে কন্টেনার ডেলিভারির পুরো কার্যক্রম। ফলে জাহাজ থেকে খালাস করা কন্টেনারগুলো বন্দরের ইয়ার্ড থেকে খালাস করতে পারছিলেন না আমদানিকারকেরা। ব্যাংক এবং ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় অচলাবস্থায় পড়ে কাস্টমস। শুল্কায়ন সম্ভব না হওয়ায় একটি কন্টেনারও খালাস করতে পারেননি অসংখ্য আমদানিকারক। গত বুধবার সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট সেবা চালু হলে কাস্টমসের কার্যক্রম শুরু হয়। একই সাথে শুরু হয় পণ্য শুল্কায়ন। ফলে বন্দরের অভ্যন্তর থেকে পণ্য ডেলিভারি কার্যক্রমও সচল হয়ে ওঠে। বুধ এবং বৃহস্পতিবার হাজার হাজার নথি জমা পড়ে কাস্টমসে। স্বাভাবিক সময়ের প্রায় দ্বিগুণ নথি জমা পড়ে অনলাইনে। আমদানিকারকেরা আটকা পড়া পণ্য খালাস করতে মরিয়া হয়ে উঠেন। কিন্তু ইন্টারনেট স্লোসহ বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খান কাস্টমস এবং বন্দরের কর্মকর্তারা। বুধ এবং বৃহস্পতিবার কাস্টমসে পনের হাজারেরও বেশি নথির শুল্কায়ন হয়েছে। শুল্কায়ন সম্পন্ন হওয়ার পর কন্টেনার ডেলিভারিতে গতি ফিরে আসে। কিন্তু বাড়তি চাপের কারণে বন্দর থেকে কন্টেনার ডেলিভারি নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

দুইদিন কাজ হওয়ায় বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা চল্লিশ হাজারের নিচে নেমে আসে। তবে স্বাভাবিকের চেয়ে তা বেশ বেশি। বৃহস্পতিবারে বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৯৭৫ টিইইউএস। কিন্তু গতকাল শুক্রবারে ছুটির দিন হওয়ায় বন্দর থেকে ডেলিভারির পরিমাণ কমেছে। এতে করে কন্টেনারের সংখ্যা আবারো চল্লিশ হাজারের উপরে চলে যায়। গতকাল বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার ২৭২ টিইইউএস। বন্দর সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বন্দর থেকে রেকর্ডসংখ্যক ৫ হাজার ১শ’ টিইইউএস কন্টেনার ডেলিভারি হয়েছিল। গতকাল তা ৩ হাজার ৫শ’ টিইইউএস এর কাছাকাছিতে নেমে আসে। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, আমদানিকারকেরা বন্দর থেকে কন্টেনার খালাস করতে মরিয়া হলেও বাড়তি চাপের কারণে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এতে করে কন্টেনারগুলো ইয়ার্ডে আটকা থাকছে। আমদানিকারকদের খালাস করার আগেই এসব কন্টেনারের বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে।

কোটা ইস্যুতে দেখা দেয়া সংকটে আমদানিকারকেরা টানা পাঁচদিন বন্দর থেকে কোনো পণ্য খালাস করতে পারেননি। এতে করে আগে থেকে বন্দরে থাকা কন্টেনারগুলোর জন্য ব্যবসায়ীদের বাড়তি খরচের মুখে পড়তে হচ্ছে। বন্দরে প্রচলিত নিয়মে জাহাজ থেকে কন্টেনার নামানোর পর চার দিন ফ্রি টাইম থাকে। এই চারদিনের মধ্যে কন্টেনার ডেলিভারি নিলে কোনো ভাড়া গুনতে হয় না। চারদিন পর প্রথম ৭ দিনের জন্য প্রতিদিন ৬ ডলার, পরের ১১ দিনের জন্য প্রতিদিন ১২ ডলার এবং পরবর্তী সময়ের জন্য প্রতিদিন ২৪ ডলার করে ভাড়া পরিশোধ করার পরই কেবল কন্টেনার ডেলিভারি নিতে পারেন আমদানিকারকেরা। আন্দোলনকালে বন্দরে আটকা পড়া কয়েক হাজার কন্টেনারের জন্য আমদানিকারকদের কয়েক কোটি টাকা বাড়তি পরিশোধ করতে হবে। যা নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম সোহায়েল বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করলেও কোনো অফিস আদেশ জারি না হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ কমছে না।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেছেন, পুরোদমে কাজ চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বন্দর পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কয়েকদিন বন্ধ থাকায় ডেলিভারিতে কিছুটা বাড়তি চাপ দেখা দিলেও আমরা রাতে দিনে কাজ করে তা সামলে নেয়ার চেষ্টা করছি। আটকা পড়া কন্টেনারের ভাড়ার ব্যাপারে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে বলেও তিনি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার আগে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ
পরবর্তী নিবন্ধজোয়ার ভাটার সময়সূচি