আবেদ হোসেন খান(১৯২৯–১৯৯৬)। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী, সেতার বাদক ও সুরকার। তিনি ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১লা এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ একজন বরেণ্য উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। তার চাচা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী ছেলেবেলা থেকে সঙ্গীত সাধনায় ব্যাপ্ত ছিলেন। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ বেতারের নিজস্ব শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্গীতও পরিচালনা করেন। সঙ্গীত প্রতিনিধি হিসেবে তিনি বহুবার বিদেশ সফর করেন। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি সেতার পরিবেশন করেন। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের কলকাতা, মাদ্রাজ, দিল্লি, মুম্বাই ও শ্রীনগরে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া রেডিও মিউজিক কনফারেন্সে সেতার পরিবেশন করে তিনি বিপুল পরিচিতি লাভ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান ও ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে সেতার পরিবেশন করে বিদেশে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতকে জনপ্রিয় করে তোলেন। বাংলাদেশে সঙ্গীতের উন্নতি ও প্রসারের ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। দেশিবিদেশি বহু শিষ্য তাঁর নিকট তালিম নিয়ে সঙ্গীতজগতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। দীর্ঘ ৩৬ বছর বেতারে সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মুখ্য সঙ্গীত প্রযোজক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে প্রায় ১০ বছর চুক্তিভিত্তিতে এ দায়িত্ব পালন করেন। বিখ্যাত জার্মান সঙ্গীতজ্ঞ ফিলিপ কার্ল শেফার ও মাইকেল গ্লুব–এর সঙ্গে তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। আবেদ হোসেন খান প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন পারদর্শী। বাংলাদেশ বেতারে ফজল–এ–খোদা রচিত ও আবেদ হোসেন খান সুরারোপিত দেশাত্ববোধক গান ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’ ছিলো জনপ্রিয়তার তুঙে। আবেদ হোসেনের ৩ খণ্ডে রচিত সুর–লহরী গ্রন্থটি সঙ্গীত বিষয়ের পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে ‘ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ সঙ্গীত নিকেতন’ নামক সঙ্গীত একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। সঙ্গীতে অনন্যসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘একুশে পদক’ দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত করে। ইউনেস্কো ও সরকারি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয় যুগ্মভাবে তাঁকে ‘জাতীয় সঙ্গীত সম্মেলন সম্মাননা ২০০২’ প্রদান করে। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।