জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের নিহত হওয়ার ভিডিও সাক্ষ্য হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ট্রাইব্যুনাল–১ এ গণ অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের সময় এ ভিডিও দেখানো হয়। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন– বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু এবং রংপুরে কর্মরত এনটিভির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এ কে এম মঈনুল হক এদিন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে গতবছরের ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেইট থেকে সরাসরি সম্প্রচারকালে দেখা ঘটনার বিবরণ জবানবন্দিতে তুলে ধরেন মঈনুল হক। তিনি বলেন, ওইদিন দুপুরে তিনি এবং তার সহকর্মী ভিডিও সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আরমান ১ নম্বর গেইটের সামনে পার্কের মোড় এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা একটি মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাব এলাকা থেকে ১ নম্বর গেইটের দিকে আসছিল। মিছিলটি ১ নম্বর গেইটের সামনে এলে সেখানে আগে থেকে উপস্থিত পুলিশসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও কিছু সরকারি দলের সমর্থক বাধা দেয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের দেখতে পাই পুলিশের আশপাশে। মঈনুল বলেন, আন্দোলনকারীরা গেইট দিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ এবং তাদের সঙ্গে যারা ছিলেন, তারা বাধা দেন। এক পর্যায়ে পুলিশ মিছিলকারীদের লাঠিপেটা শুরু করে। মিছিলকারীরা তখন জমায়েত ধরে রাখার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ টিয়ার শেল ছোড়ে এবং রাবার বুলেট ও শটগানের গুলিবর্ষণ শুরু করে। তখন এনটিভিতে দুপুর ২টার খবর শুরু হয়ে গেছে। আমি এনটিভিতে গুলিসহ সেখানকার ভীতিকর অবস্থার ভিডিও প্রেরণ শুরু করি। ওই ভিডিও দেখে এনটিভি কর্তৃপক্ষ আমাকে সরাসরি সমপ্রচার করতে বলে। তখন আমি সহকর্মী ভিডিও জার্নালিস্ট আসাদুজ্জামান আরমানকে নিয়ে সরাসরি পাঠাতে থাকি।
গুলিবর্ষণের বর্ণনায় মঈনুল হক বলেন, দুপুর ২টা ১৭ মিনিটের দিকে ১ নম্বর গেইটের সামনে রোড ডিভাইডারের একটি কাটা অংশ দিয়ে কালো প্যান্ট ও কালো টি–শার্ট পরা এক যুবক এসে দাঁড়িয়ে পড়েন। তিনি দুই হাত দুইদিকে প্রসারিত করে রাখেন। এ সময় পুলিশ সেই যুবকের ওপর গুলি চালায়। তার পেট ও বুকে গুলি লাগে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ওই যুবক কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে বসে পড়েন। আবার উঠে কয়েক পা গিয়ে আবার লুটিয়ে পড়েন। এরপর কয়েকজন আন্দোলনকারী তাকে সেখানে থেকে সরিয়ে নিয়ে যান। যতক্ষণ দেখা যাচ্ছিল ততক্ষণ ভিডিও করছিলেন বলে জানান মঈনুল। এ সময় প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল সেই ভিডিও প্রদর্শনের অনুমতি দেয়। প্রদর্শনের পর পর ভিডিওটি ক্লিপ সম্বলিত পেন ড্রাইভ প্রদর্শনী হিসেবে জমা রাখা হয়।
মঈনুল হকের আগে সাক্ষ্য দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেইটে অবস্থানরত দুই পুলিশ সদস্য আমির হোসেন ও সুজন চন্দ্র সরাসরি আবু সাঈদকে গুলি করেন। আমি নিজ চোখে সেটা দেখেছি। আবু সাঈদকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও তখনকার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দায় এড়াতে পারেন না। আমি তাদের বিচার চাই। ওই দিন রিনা মুর্মু নিজেও আহত হয়েছিলেন বলে জবানবন্দিতে জানান।