আবু জাফর শামসুদ্দীন (১৯১১–১৯৮৮)। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশ লেখক। গাজীপুর জেলার দক্ষিণবাগ গ্রামে ১৯১১ সালের ১২ মার্চ আবু জাফর শামসুদ্দীনের জন্ম। কর্মজীবনের সূচনা দৈনিক সোলতান পত্রিকায় সহ–সম্পাদক হিসেবে।
১৯৩১ সালে তিনি সরকারের সেচ বিভাগে যোগ দেন। ১৯৪২ সালে সেচ বিভাগের কাজ পরিত্যাগ করে কটকে নির্মাণাধীন বিমানঘাঁটি তদারকি অফিসের হেড ক্লার্ক পদে যোগ দেন। কয়েক মাস পর তিনি এ চাকরি ছেড়ে দৈনিক আজাদে যোগ দেন। ১৯৪৮ সালের অক্টোবরে পত্রিকাটি কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসার পর তিনি সহকারী সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৫০ সালে আজাদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হলে তিনি প্রকাশনা ব্যবসা সংস্থা কিতাবিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫০–৫১ সালে তিনি সাপ্তাহিক ইত্তেফাকের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি দৈনিক পূর্বদেশের সম্পাদকীয় বিভাগে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে পূর্বদেশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি দৈনিক সংবাদে যোগ দেন। সংবাদে তিনি অল্পদর্শী ছদ্মনামে বৈহাসিকের পার্শ্বচিন্তা নামে কলাম লেখেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘পরিত্যক্ত স্বামী’ রচনার মধ্য দিয়ে তাঁর সাহিত্য জীবনের শুরু। এরপর উপন্যাসের পাশাপাশি ছোটগল্প, অনুবাদ, নাটক, আত্মজীবনী, ভ্রমণকাহিনি, স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ প্রভৃতি সাহিত্যের নানা শাখায় তিনি বিচরণ করেছেন স্বচ্ছন্দে। ‘শিল্পীর সাধনা’ ও ‘পার্ল বাকের সেরা গল্প’ তাঁর দুটি অনুবাদ গ্রন্থ।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে: ‘ভাওয়াল গড়ের উপাখ্যান’, ‘দেয়াল’, ‘জীবন’, ‘রাজেন ঠাকুরের তীর্থযাত্রা’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘সংকর সংকীর্তন’, ‘চিন্তার বিবর্তন ও পূর্ব পাকিস্তানি সাহিত্য’, ‘লোকায়ত সমাজ ও বাঙালি সংস্কৃতি’ ইত্যাদি। সমাজ ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার, শহীদ নতুনচন্দ্র সিংহ স্মৃতি পদক, সমকাল সাহিত্য পুরস্কার এবং ফিলিপস পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন। ১৯৮৮ সালের ২৪ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।