চল্লিশের দশকের একজন খ্যাতিমান কবি আবুল হোসেন। রবীন্দ্রনাথের ভাবনাচিন্তা তাঁকে প্রভাবিত করেছিল। সেই সাথে বাঙালি মুসলমান কবি হিসেবে সমসাময়িক সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ঘাত-প্রতিঘাত তাঁর রচনায় প্রভাব ফেলেছে।
কবি আবুল হোসেনের জন্ম ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট অবিভক্ত বাংলায়। কুষ্টিয়া হাইস্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক পাস করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। কিশোর বয়সে কুষ্টিয়ায় লেখাপড়া করার সময় তাঁর মধ্যে সাহিত্যপ্রেম জেগে ওঠে। লালন শাহের মাজার, বাউলদের নিত্য আনাগোনা, রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহ, গড়াই নদীর ধার – এসব তাঁর সাহিত্যিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। কলকাতায় তাঁর সাথে সখ্য গড়ে ওঠে কাজী নজরুল ইসলাম সহ বিখ্যাত অনেক কবি সাহিত্যিকের। রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যও পেয়েছিলেন। কবি আবুল হোসেনের সমসাময়িক খ্যাতনামা প্রধানতম কবিরা হলেন: ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব, সৈয়দ আলী আহসান, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সমর সেন প্রমুখ। দেশ বিভাগের পর আবুল হোসেন ও তাঁর কয়েকজন কবি বন্ধু ঢাকায় স্থায়ী হন। ব্যক্তিজীবনে ছিলেন অত্যন্ত মিতভাষী, বিনম্র, রুচিশীল, পরিশীলিত ও যুক্তিবাদী। প্রচলিত অর্থে ধর্মীয় আচরণবিধি না মানলেও বিশ্বাস করতেন মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রক কল্যাণকর শক্তি, আত্মার অস্তিত্ব ও পরকাল। ছিলেন আধুনিক, কল্যাণকামী, মানবতাবাদী একজন মানুষ। ১৯৪০ সালে বন্ধু হাবিবুল্লাহ বাহারের উদ্যোগে প্রকাশিত হয় আবুল হোসেনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নববসন্ত’। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কবিতা: ‘মধ্যবিত্ত’, ‘ফাল্গুন ওগো ফাল্গুন’, ‘মেহেদীর জন্য কবিতা’, ‘খুকি ও আমি’, ‘যে যায় সেই শুধু যায়’ ইত্যাদি। কবিতার পাশাপাশি তিনি আত্মজীবনীও লিখেছেন। চার খণ্ডের এই জীবনী গ্রন্থে কবির ফেলে আসা জীবনের নানা রঙের প্রতিচ্ছবি, সুখ-বেদনা আর কবিতার অনুষঙ্গ খুঁজে পাওয়া যায়। বরাবরই কবি ছিলেন আধুনিক জীবনবোধ ও অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে। দেশ বিভাগের সেই সংকটকালীন সময়েও।
সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন সত্যিকারের একজন শুদ্ধ কবি। ২০১৪ সালের ২৯ জুন কবি প্রয়াত হন।