প্রবাল চৌধুরী (১৯৪৭–২০০৯)। দেশের সঙ্গীতাকাশে এক উজ্জল নক্ষত্র, সঙ্গীতসাগরের মূল্যবান প্রবাল। তাঁর ভরাট কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ হয় লাখো শ্রোতা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শিল্পী হিসেবে একক কণ্ঠে, দ্বৈত ও সমবেত কণ্ঠে প্রচুর গান পরিবেশন করেছেন তিনি। অনেক কণ্ঠের ভিড়ে তাঁর কণ্ঠছিলো স্বতন্ত্র। ১৯৪৭ সালের ২৫ অগাস্ট চট্টগ্রামের রাউজান থানার বিনোজুরী গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম মনমোহন চৌধুরী ও মাতা লীলাবতী চৌধুরী। ১৯৬৬ সালে কদুক্ষী গার্লস স্কুলে প্রথম গান গেয়ে মানুষের মন জয় করেন সেই সুদর্শন যুবক। ইতিহাসের উত্তাল দিনগুলোতে ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রামে গণআন্দোলনে যোগ দেন এই সাহসী এই মানুষটা। পরে সংগ্রামী এই শিল্পী ১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শিল্পী হিসেবে একক কণ্ঠে, দ্বৈতও সমবেত কণ্ঠে প্রচুর গান পরিবেশন করেছেন তিনি। অনেক কণ্ঠের ভিড়ে তাঁর কণ্ঠ ছিলো স্বতন্ত্র। অনেকের মনেই দাগ কেটেছিল তাঁর গাওয়া বিখ্যাত সেই গানটি ‘ভেবো না গো মা তোমার ছেলেরা হারিয়ে গিয়েছে পথে’। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সমর দাস এই গানটি সুরারোপ করেছিলেন। যুদ্ধচলাকালীন বিভিন্ন সরণার্থী শিবিরে মুক্তির গান গেয়ে মানুষকে সাহস জুগিয়েছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারের পর অবরুদ্ধ বাংলাদেশে, এমনকি কলকাতায়ও বহুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল গানটি। বহু দর্শক–শ্রোতার মন জয় করে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সারা বাংলাদেশ, এমনকি বাংলাদেশের বাইরেও অত্যন্ত জনপ্রিয় শিল্পী হয়ে ওঠেন তিনি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে বেতার, টেলিভিশন ও মঞ্চে নিয়মিত গান গেয়েছেন প্রবাল চৌধুরী। চলচ্চিত্রেও ব্যস্ততা বাড়ে। খোন্দকার নুরুল আলম, দেবু ভট্টাচার্য, সমর দাস, অজিত রায়, সত্য সাহা, আনোয়ার পারভেজ, আবদুল আহাদ, আলম খানসহ অনেক নামি সুরকারের সুরে গান গেয়েছেন তিনি। তাঁর মতো এমন কণ্ঠ আরেকটি খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। ‘কত যে ভালোবাসি তোমাকে’, ‘আমি মানুষের মতো বাঁচতে চেয়েছি এই কি আমার অপরাধ’, ‘আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য’, ‘এই জীবন তো একদিন’, ‘কোথায় যাব বন্ধু বল কোথায় আমার ঘর’, ‘আরে ও প্রাণের রাজা’র গানের মতো বহু গান আছে তাঁর, যা অগণিত মানুষের হৃদয়ে যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখবে তাঁকে। ২০০৯ সালের ১৬ অক্টোবর এ কীর্তিমান শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন।