গ্যাসের চরম সংকটের মাঝে গতকাল থেকে আবাসিক এবং শিল্প কারখানায় গ্যাসের রেশনিং শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নগরীর কোথাও কোথাও এবং জেলার সীতাকুণ্ডে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ কমানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম স্বাভাবিকের তুলনায় পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেড়ে যাওয়ায় গ্যাস আমদানি কমিয়ে দেয়ায় পরিস্থিতি ক্রমে বেসামাল হয়ে উঠছে। সার এবং বিদ্যুৎ কারখানার গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখতে গিয়ে অন্যান্য খাতে রেশনিং করতে হচ্ছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের মারাত্মক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সেক্টরে। বিশেষ করে গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করে দেশের চাহিদার যোগান দিচ্ছিল। দীর্ঘমেয়াদী টেন্ডারে এলএনজি আমদানির পাশাপাশি পেট্রোবাংলা স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি ক্রয় করে দেশের চাহিদার যোগান দিয়ে থাকে। স্পট মার্কেটে ১ মিলিয়ন বিটিইউ (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) গড়ে ১০ ডলার দরে ক্রয় করছিল পেট্রোবাংলা। কিন্তু গত কয়েকদিনে সেই ১০ ডলারের এলএনজির দাম গিয়ে ঠেকে ৫৫ থেকে ৫৬ ডলারে। এতে করে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করে দেয়া হয়। পেট্রোবাংলা সারাদেশের গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে রেশনিং করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার নির্দেশনা জারি করে। ইতোমধ্যে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান কয়েক দফা জুম মিটিং করে পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে রেশনিং করার পরামর্শ দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করে দেয়ায় চট্টগ্রাম এবং সন্নিহিত অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে গ্যাস কমিয়ে দেয়া হয়। দিন কয়েক আগে চট্টগ্রামে ৩১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছিল। গতকাল তা কমিয়ে ২৭১ মিলিয়ন ঘনফুটে নিয়ে আসা হয়। এরমধ্যে বহুজাতিক সারকারখানা কাফকো ৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট, সিইউএফএল ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট এবং রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিটকে ২৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছে। কাফকো স্বাভাবিক সময়ে ৫১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নির্দেশে তারা ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ব্যবহার কমিয়েছে। সিইউএফএল কর্তৃপক্ষও ব্যবহার সামান্য কমিয়েছে। সীতাকুণ্ড অঞ্চলের বড় বড় শিল্প কারখানা বিএসআরএম, একেএস, জিপিএইচ কারখানা মিলে ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার কমিয়েছে। বড় বড় কারখানাগুলো গ্যাসের ব্যবহার কমালেও মাঝারি ও ছোট কারখানাগুলোতে (নন বাল্ক) গ্যাসের ব্যবহার কমানো সম্ভব হয়নি। সিএনজি এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাসের ব্যবহার বেড়ে গেছে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গ্যাসের রেশনিং করতে গিয়ে সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় শিল্প কারখানা এবং আবাসিক খাতে গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। গতরাতে নগরীর মোহাম্মদপুর এলাকার আবাসিক এলাকা, কালুরঘাট এলাকার শিল্প কারখানা, সীতাকুণ্ডের শিল্প কারখানা এবং আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। বহু এলাকায় বন্ধ হয়ে গেছে রান্নাঘরের চুলা।
চট্টগ্রামে গ্যাসের সরবরাহ ৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট কমে গেছে। এই ৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের যোগান নিশ্চিত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে চারদিকে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কাফকো কিংবা সিইউএফএল-এ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়। কিন্তু সরকার সার উৎপাদন কোনভাবেই ব্যাহত করতে চাচ্ছে না বলেও সূত্র জানিয়েছে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পরিস্থিতি খুবই নাজুক। আমরা গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছি। আরো কমাতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম যেখানে গিয়ে ঠেকেছে সেই অবস্থায় গ্যাস আমদানি অব্যাহত রাখা কঠিন। এতে করে আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতির আরো অবনতির আশংকাও প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা রেশনিং করছি। সরকার সার কারখানার ব্যাপারে কোন নির্দেশনা না দিলে গ্যাস সরবরাহ আরো কমিয়ে দিতে হবে। ফলে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন কিংবা বাসা বাড়িতে গ্যাস সরবরাহ ক্রমে বন্ধ হয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম না কমলে এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।












