আবার সরগরম খলিফাপট্টির দর্জিপাড়া

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৭ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

করোনা ধাক্কা কাটিয়ে চিরচেনা রূপে ফিরেছে নগরীর দর্জিপাড়া খ্যাত খলিফাপট্টি। নগরীর সিরাজদৌল্লা রোডের সাব এরিয়া বাজার সংলগ্ন এই দর্জি পাড়ায় গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে অনেকটা থমকে যায় সেলাই মেশিনের চাকা। এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে রাত-দিন সেলাই মেশিনের খটখট শব্দের সাথে ব্যস্ত সময় পার করছেন দর্জি শ্রমিকরা।
খলিফাপট্টির কয়েকজন দর্জি বলছেন, খলিফাপট্টির দর্জিরা শার্ট, প্যান্ট, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা ও স্কার্ট তৈরি করে নগরী এবং নগরীর বাইরের বিভিন্ন জেলা উপজেলার মার্কেটে পাইকারীতে বিক্রি করেন। তবে কিছু কিছু কারখানা অগ্রিম অর্ডার নিয়েও কাজ করতো।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে খলিফাপট্টি ঘুরে দেখা গেছে, কাজের ব্যস্ততা দর্জি শ্রমিকদের যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। কেউ কাপড় কাটছেন, কেউ সেলাই করছেন, কেউ আবার সেলাই করার কাপড়ে নানা ধরনের পুঁতি ও লেইচ সংযুক্ত করছেন। আবুল হোসেন নামের একজন দর্জি জানান, কারখানাতে এখন কাজের প্রচুর চাপ। দিন-রাত কাজ করতে হচ্ছে। এদিকে কাজের চাপ থাকায় মালিকরা খুশি। আলাউদ্দিন নামের একজন কারখানা মালিক বলেন, গত দুই বছর আমরা করোনার কারণে ব্যবসা করতে পারিনি। অনেকে প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ আমাদের কাজটা মূলত ঈদ মৌসুম কেন্দ্রীক। কিন্তু এখন আগের চেয়ে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। মার্কেটে আমাদের কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে।
খলিফাপট্টির কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, খলিফাপট্টির ব্যবসায়ীরা সারা বছর রমজানের ঈদের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
এখানে সারা বছর যত কাজ হয়, তার ৮০ শতাংশ কাজ হয় ঈদ কেন্দ্রীক। গত দুই বছর করোনা কাছে তারা ব্যবসা হারায়। তবে এবার শুরু থেকেই প্রতিটা কারখানাতে পুরোদমে কাজ চলছে। খলিফাপট্টির কারখানাগুলোতে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জামাও তৈরি হতো। দেশি ছাড়াও বিদেশী বিভিন্ন বাহারি ডিজাইনের স্যুট, শার্ট, প্যান্ট, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা ও স্কার্ট তৈরি করে থাকেন খলিফাপট্টির ডিজাইন মাস্টাররা।
খলিফাপট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে আমাদের অবস্থারও উন্নতি হয়েছে। খলিফাপট্টির দর্জিরা এখন খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলার পাইকাররা আমাদের কারখানা থেকে ড্রেস কিনতে আসছেন। সামনে আশা করি আরো ভালো হবে। বর্তমানে থান কাপড়ের দাম বেড়েছে। কিন্তু আমরা সেই হিসেবে কাপড়ের দাম বাড়ায়নি। কারণ আমাদের ইন্ডিয়ান কাপড়ের সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হচ্ছে। ক্রেতারা যদি আমাদের থেকে কাপড় কিনে সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে ক্ষতি তো আমাদেরই।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের পর আইয়ুব আলী নামের নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এক ফেরিওয়ালা নিজের গ্রামের কিছু লোকজন এনে খলিফাপট্টিতে কাপড় তৈরির কাজ শুরু করেন। সেই থেকেই শুরু। বর্তমানে খলিফাপট্টিতে প্রায় সাড়ে তিনশ’ কারখানা রয়েছে। পুরনো বেশ কয়েকটি ভবন জুড়ে রয়েছে কারখানাগুলো। প্রায় সবগুলো কারখানার শ্রমিক হচ্ছে নোয়াখালী ও লক্ষীপুর জেলার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকতটা ‘স্বাস্থ্যবান’ চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাত
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬