দীর্ঘ, তিক্ত লড়াই শেষে আজ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। জল্পনা শুরু হয়েছে জয়-পরাজয় নিয়ে। অধিকাংশ সমীক্ষায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন এগিয়ে। এতটাই এগিয়ে যে ২০০৮ সালের পর আর কোনও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে এতটা শক্তিশালী দেখায়নি। অবশ্য এসব সমীক্ষাকে পাত্তা দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি হুঙ্কার দিয়ে রেখেছেন, তিনি ছেড়ে কথা বলবেন না। ভোটের ফল বিপক্ষে গেলে আইনি রাস্তাতেও হাঁটার জন্য আগেভাগে আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়ে রেখেছেন বলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। আবার ওই সব সমীক্ষাকেও ‘ভুয়ো’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের এই মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভোট পরবর্তী দাঙ্গার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে।
আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন রাষ্ট্রপতি। তবে দু’বারের বেশি কেউ প্রার্থী হতে পারেন না ভোটে। সেই হিসেবে বারাক ওবাবা, জর্জ বুশ কিংবা বিল ক্লিনটন- কেউই আর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। মূলত আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এই আইন করা হয়েছে। জজ ওয়াশিংটন দু’বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তৃতীয় বার নিজে থেকেই আর প্রার্থী হননি। সেই দিক থেকে দেখলে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বার নির্বাচিত হলে, তিনিও চলে যাবেন বুশ, ওবামাদের দলে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চার বছর পরপর নভেম্বরের প্রথম সোমবারের পরে মঙ্গলবার হয়। এখনও পর্যন্ত সে দেশের ইতিহাসে এর কোনও নড়চড় হয়নি। তাই তারিখ নির্দিষ্ট থাকে না। নভেম্বরের ১ তারিখ মঙ্গলবার হলেও ভোট হয় পরের সপ্তাহের মঙ্গলবার। এ বছর সেই অগ্নিপরীক্ষা আজ ৩ নভেম্বর। যদিও বাংলাদেশ সময় থেকে ১১ ঘণ্টা পিছিয়ে আমেরিকা। তাই বাংলাদেশ সময় আজ মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হবে ভোটাভুটির পর্ব। আমেরিকায় গণনা হয় ভোটের দিনই। চূড়ান্ত ফলাফল জানতে মধ্যরাত বা পরের দিন পর্যন্ত হয়ে যায়। সেই হিসাবে বাংলাদেশ সময় আগামীকাল দুপুরের মধ্যেই কে জয়ী হয়েছেন তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। এদিকে ভোট গণনার এই পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্প। তার বক্তব্য, ‘কে জিতল, আমেরিকানরা সাধারণত ভোটের দিন রাতেই সেটা জেনে যান। কারণ সংবাদ মাধ্যমগুলি গণনার আংশিক ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ফল ঘোষণা করতে থাকে। কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ ফলাফল নয়।’
আমেরিকায় ভোটদানের দু’টি পদ্ধতি রয়েছে- ইমেল ভোটিং এবং সরাসরি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া। করোনা সংক্রমণের জন্য এ বছর এই ই-মেল ( আর্লি ভোটিং) ভোটিং বেশি হয়েছে। এই ইমেল-এ দেওয়া ভোটের গণনা হবে পরে। আগে থেকেই এই ভোটিংয়ে কারচুপির আশঙ্কা করে এবং গণনার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তার ভাষায় ‘এটা ভয়ঙ্কর পদ্ধতি যে ভোটের পর ব্যালট সংগ্রহ করা হবে। আমরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছি।’ প্রসঙ্গত, এরই মধ্যে নয় কোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়ে দিয়েছে। যারা আজ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন তারাও হয়ত মনে মনে প্রার্থী ঠিক করে ফেলেছেন।
নির্বাচনের আগের দিন গতকালও জাতীয় জনমত জরিপে বাইডেনের চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু ১৩টি রাজ্যে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর ব্যবধান অল্প, এসব এলকার ভোটারদের মনও দোদুল্যমান। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনায় এসব রাজ্যকে এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। রয়টার্সের করা সমীক্ষায় বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা ৫১ শতাংশ, ট্রাম্পের ৪২ শতাংশ।‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’-এর সমীক্ষাতেও উইসকনসিন, পেনসিলভেনিয়া, ফ্লোরিডা, অ্যারিজোনার মতো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে এগিয়ে থাকছেন বাইডেন। অন্যান্য সমীক্ষাতেও পাল্লা ভারী বাইডেনেরই।
যদিও পপুলার ভোট তথা জাতীয় নির্বাচনের ভিত্তিতে করা এই সব সমীক্ষা সব সময় শেষ কথা বলে না। এই সমস্ত সমীক্ষায় এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে হেরে গিয়েছেন, এমন নজির অনেক রয়েছে আমেরিকায়। এর শেষতম উদাহরণ হিলারি ক্লিনটন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারির চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ কম ভোট পেয়েও শেষ পর্যন্ত ইলেক্টরাল কলেজের ভোটে বাজি জিতে নেন ট্রাম্প। কিন্তু এবার বাইডেন এতটাই এগিয়ে রয়েছেন যে অশনি সঙ্কেত দেখছে রিপাবলিকান শিবির।