নারী এশিয়া কাপের সেমি–ফাইনালে ভারতকে এড়াতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। ফলে পরিণতি যা হওয়ার তাই হয়েছে। দ্বিতীয়বারের মত এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে একেবারে অসহায় আত্মসমর্পণ করল বাংলাদেশ নারী দল। ফলে আরও একবার বাংলাদেশের অভিযান থমকে গেল ফাইনালের আগেই। নারী এশিয়া কাপের প্রথম সেমি–ফাইনালে বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারিয়ে টুর্নামেন্টের ৯ আসরের প্রতিটিতেই ফাইনালে উঠল ভারতীয় নারীরা। ডাম্বুলায় গতকাল শুক্রবার নিগার সুলতানার দল ২০ ওভারে করতে পারে কেবল ৮০ রান। নতুন বলে রেনুকা সিং ঠাকুর দারুণ স্পেলে ভেঙে দেন বাংলাদেশের টপ অর্ডার। পরের ব্যাটাররাও ভালো কিছু করতে পারেননি ভারতীয় বোলিংয়ের সামনে। ৮১ রান তাড়া করতে নেমে ভারত জিতে যায় ১১ ওভারেই। দৃষ্টিনন্দন সব শটের মহড়ায় ৩৯ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন স্মৃতি মান্ধানা। রানগিরি ডাম্বুলা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের উইকেট বরাবরই ব্যাটিং সহায়ক। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগও পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু অনেক দিন ধরেই তাদের ব্যাটিংয়ের যে দুর্দশা চলছে, তা কাটানো গেল না এই ম্যাচেও। ম্যাচের শুরুটা ছিল খানিকটা নাটকীয়। প্রথম ওভারে রেনুকা সিংকে ছক্কা মারেন দিলারা আক্তার। কিন্তু পরের বলেই আবার একই চেষ্টায় তিনি ধরা পড়েন সীমানায়। ইশমা তানজিম ক্রিজে যাওয়ার পরপরই একটি চার মারেন । আরেকটি বাউন্ডারি পান ব্যাটের কানায় লেগে। একটু পর তিনিও উইকেট উপহার দেন রেনুকাকে। আগের দুই ম্যাচে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ফিফটি করা মুর্শিদা খাতুন ব্যর্থ বড় ম্যাচে। স্লিপে একবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়ার পর তিনিও রেনুকাকে উইকেট দিয়ে আসেন আলগা শটে। পাঁচ ওভারের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশকে পরে আরও চেপে ধরেন বাঁহাতি স্পিনার রাধা যাদব। অভিজ্ঞ রুমানা আহমেদ পারেননি দলকে উদ্ধার করতে। রাধার প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে যান তিনি ড্রিফট বুঝতে না পেরে। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া রাবেয়া খান ও অভিজ্ঞ রিতু মনি পারেননি বেশিক্ষণ টিকতে। বিপর্যয়ের মধ্যে যথারীতি এক প্রান্ত আগলে রাখেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। স্বর্ণা আক্তার নামার পর একটু গতি পায় ইনিংস। এই দুজনের জুটিতে আসে ৩৫ বলে ৩৬ রান। আর কোনো জুটিতে ১০ রানের বেশি হয়নি। ৫১ বলে ৩২ করে নিগার আউট হন শেষ ওভারে। স্বর্ণা শেষ ওভারে স্ট্রাইকই পাননি। অপরাজিত থাকেন তিনি ১৮ বলে ১৯ রান করে।
৮০ রানের পুঁজি নিয়ে ভারতকে চাপে ফেলা কঠিন। লক্ষ্যটা আরও মামুলি হয়ে ওঠে স্মৃতি মান্ধানার দারুণ ব্যাটিংয়ে। এমনিতে শেফালি ভার্মা বেশি আগ্রাসী হলেও তিনি এ দিন ছিলেন অনেকটা দর্শক হয়ে। বাংলাদেশের কোনো বোলারই সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারেননি। শেষ দিকে একটি সুযোগ দিয়েছিলেন শেফালি। কিন্তু সহজ ক্যাচটি নিতে পারেননি নাহিদা আক্তার।
একাদশ ওভারে টানা তিন বাউন্ডারিতে নিজের ফিফটি পেরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দলকেও জিতিয়ে দেন মান্ধানা। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৭ ইনিংসে তার প্রথম ফিফটি এটি। এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপসহ নারী ক্রিকেটের বড় কোনো আসরের নক আউট ম্যাচে এই প্রথম কোনো দল জিততে পারল ১০ উইকেটে। এশিয়া কাপের আগের আট আসরে সাতবারই শিরোপা জিতেছে ভারত। আরও একটি শিরোপা জয়ের শেষ ধাপে পৌঁছে গেল তারা। ভারত ছাড়া অন্য যে দলটি শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছে, সেই বাংলাদেশের সম্বল এখনও সেই ছয় বছর আগের সুখস্মৃতিই। প্লেয়ার অব দা ম্যাচ হয়েছেন রেনুকা সিং।