আবারো সিডিএর উচ্ছেদ অভিযানে তছনছ ‘কর্ণফুলীর পুরাতন ব্রিজঘাট’

কর্ণফুলী প্রতিনিধি | সোমবার , ২৬ মে, ২০২৫ at ৫:১২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার পুরাতন ব্রিজঘাটে আবারো সিডিএ অভিযান চালিয়ে শত শত দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।

তবে বিনা নোটিশে হঠাৎ উচ্ছেদে হাজারো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি তাঁদের বেঁচে থাকার অবলম্বন হারিয়েছে। সম্পদ নষ্ট হয়েছে কোটি কোটি টাকার। অথচ সিডিএ মইজ্জ্যারটেক ডিসি রোড পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার জুড়ে সিডিএর জমিতে কোন অভিযান চালায় না বলে ব্যবসায়িরা অভিযোগ করছেন।

সোমবার (২৬ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা ৪ ঘন্টার অভিযানে পুরাতন ব্রিজঘাট বাজার হতে ঘাট পর্যন্ত উচ্ছেদ হয়েছে।

ভাঙা হয়েছে সড়কের দু’পাশে থাকা শত শত দোকানসমূহ। নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে দোকানঘর।

এস্টেট শাখার কর্মকর্তারা জানান, ‘আমরা অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করেছি অনেক আগেই। সিডিএ’র জমিতে যারা দখল রয়েছেন তাঁদের অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে।’

অভিযানে অংশ নিয়েছেন সিডিএ’র স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ), সিডিএ নির্মাণ বিভাগ-১ এর প্রকৌশলী, সিডিএর সহকারী প্রকৌশলী, পেশকার ও সিএমপির পুলিশের সদস্যরা।

তথ্য মিলে, এর আগেও গত বছরের ২৩ মে চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট এলাকায় কাঁচা বাজার ও সড়কের পাশের আড়াইশত দোকান গুঁড়িয়ে দিয়েছিল সিডিএ।

তথ্য আরও বলছে, পুরাতন ব্রিজঘাট কাঁচা বাজারটি গত ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ অন্যান্য বাজারের সাথে ইজারা হিসেবে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার (সরকারি মূল্যে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫০ টাকা, সিডিউল মূল্য ১২শ’ টাকা) পর হতেই কয়েকবার ভাঙনের মুখে পড়ে ক্ষতির সম্মুখীন হন।

অথচ একই প্রক্রিয়ায় ২০০৮ সালেও পটিয়া উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী অফিসার মো. শহীদুল আলম পুরাতন ব্রিজঘাট বাজারটি ইজারা প্রদানের লক্ষ্যে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন। কিন্তু বিষয়টি সে সময় সিডিএ’র নজরে আসলে তৎকালীন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব আবদুল বারী চৌধুরী চিঠি দিয়ে ইজারা বিজ্ঞপ্তির তালিকা থেকে বাজারটি বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানান।

সিডিএ নির্মাণ বিভাগ-১ এর প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজ টিপু জানান, অধিগ্রহণ করা জমিটি রাস্তা নির্মাণের অবশিষ্ট জমি। এটা বাজারের কোন খাস জমি নয়। ভবিষ্যতে রাস্তা সম্প্রসারণ করার জন্য সংরক্ষণ করা ছিলো জমিটি। এলএ মামলা ও বিএস খতিয়ান মূলে জমিটির মালিক সিডিএ’র। তাই এ জমিতে থাকা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।

সিডিএ নির্মাণ বিভাগ-১ সুত্রে জানা যায়, ‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) এর আওতাধীন এলাকা কর্ণফুলী নদীর বামতীর মইজ্জারটেক হতে ষ্টোর ইয়ার্ড ফর ফ্লোটিং ব্রীজ (ভাসমান সেতু) পর্যন্ত (পিসি রোড) সড়কের উভয় পার্শ্বে ভাসমান অবৈধ স্থাপনা/অবকাঠামো কয়েকবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। ওই জমির শেষ প্রান্তে ব্রিজঘাট বাজারটির অবস্থান।

এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন যাবত কাঁচা বাজার বসিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করতেন। কারণ দীর্ঘ ২০ বছরেও সড়ক প্রশস্ত কিংবা স্থায়ী বাজারের জন্য কোন প্রকল্পও গ্রহণ করেনি সিডিএ। তাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের এখানে দোকানপাট করে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করেন।

এ বিষয়ে পুরাতন ব্রিজঘাট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহেদুর রহমান জাহেদ বলেন, ‘অতীতে কয়েক বার সিডিএ’র উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবসায়িদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়িরা ঝুঁকি নিয়ে এখন কোনমতে খোলা আকাশের নিচে রাস্তার ওপর ঠেলায় বা ভ্যানে কাঁচাবাজার বিক্রি করতেন। কিন্তু আবারো উচ্ছেদ করা হয়েছে। আমরা মানববন্ধন করব।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ নুরুল করিম বলেন, পুরাতন ব্রিজঘাট ও পাশের বড় জমিতে বহুতল মার্কেট ও বিনোদন স্পট করা হবে। আমরা প্রকল্প হাতে নিয়েছি।

প্রসঙ্গত, ব্রিজঘাট হতে মইজ্জ্যারটেকের ডিসি রোড মইজ্জ্যারটেক চত্বর পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বহু পুর্বেই সমাপ্ত করেছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মাদ্রাসা মোহতামিমের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে গাড়ি চাপায় প্রাণ গেল লেগুনা চালকের