রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ জটিলতা নিরসন না হওয়ায় আবারো লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। গতকাল পাহাড়তলী লোকোশেডে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারী ঐক্য পরিষদের মিটিং শেষ সংগঠনের নেতারা এই ঘোষণা দেন। ২৭ আগস্ট রাত ১২টার মধ্যে দাবি না মানলে ২৮ আগস্ট থেকে সারা দেশে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান ভূইয়া আজাদীকে বলেন, মাইলেজ অনুযায়ী আনুতোষিক ও পেনশনের বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় ২৮ আগস্ট থেকে আমরা আবারো লাগাতার কর্মবিরতিতে যাচ্ছি। এবার বড় ধরনের কিছু হবে। সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ২৩ জুলাই থেকে আট ঘণ্টার বাড়তি দায়িত্ব পালন থেকে আমাদের রানিং স্টাফরা বিরত ছিল। এতে পণ্যবাহী ও লোকাল ট্রেন চলাচলে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। পরে ডিজি মহোদয় আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন তিনি এবং সচিব স্যার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করবেন। কিন্তু এখনো আমাদের রানিং স্টাফরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কারণে তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই আজ (গতকাল) আমরা রানিং স্টাফরা পাহাড়তলীতে সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি মিটিং শেষে আল্টিমেটামের সিদ্ধান্ত দিয়েছি। আগামী ২৭ আগস্ট রাত ১২টার মধ্যে আমাদের দাবি মানা না হলে ১২টা ১ মিনিটের পর থেকে সারা দেশে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু হবে। আমরা ইঞ্জিন বের করব না। ইঞ্জিন বের না করলে তো ট্রেন চলবে না।
মজিবুর রহমান ভূইয়া বলেন, রেলের রানিং স্টাফ বলতে ট্রেনের চালক, সহকারী চালক, গার্ড ও টিকেট পরিদর্শকদের (টিটি) বোঝানো হয়। তারা ১৬০ বছর ধরে মাইলেজ সুবিধা পেয়ে আসছেন। অর্থাৎ দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিক (মূল বেতন) হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন। এছাড়া অবসরের পর মূল বেতনের সঙ্গে এর ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো। কিন্তু এই পদ্ধতিতে পেনশন দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর রেল মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে এই সুবিধা দিতে অসম্মতি জানায়। এ নিয়ে রানিং স্টাফরা আন্দোলন শুরু করলে আন্দোলনের মুখে রেলমন্ত্রীসহ রেলওয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। গত বছরের ১৩ এপ্রিল রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয় চিঠি প্রত্যাহার করে নেয়।
রেলওয়ের মহাপরিচালক ১১ জুন আগের মতো মাইলেজ অনুযায়ী আনুতোষিক ও পেনশন দেওয়ার নির্দেশনা দেন। কিন্তু ১৮ জুন চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে আপত্তি জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে রেলের রানিং স্টাফদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
এদিকে ২৩ জুলাই থেকে আট ঘণ্টার বাড়তি দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকেন রানিং স্টাফরা। এতে পণ্যবাহী ও লোকাল ট্রেন চলাচলে স্থবিরতা দেখা দেয়। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তা শিথিল করা হয়।