আবারো অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল আউটার স্টেডিয়াম মাঠের সংস্কার কাজ। আউটার স্টেডিয়াম এলাকার সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের আওতায় ছিল মাঠ, ওয়াকওয়ে, মুক্তমঞ্চ এবং শোভাবর্ধন। এরই মধ্যে শোভাবর্ধন এবং মুক্তমঞ্চের কাজ সম্পন্ন হলেও বাকি ছিল ওয়াকওয়ে এবং মাঠের কাজ। জানা গেছে, বাকি দুইটি প্রকল্পের মধ্যে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজটি বাতিল করা হয়েছে। যদিও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বিষয়টি স্বীকার করেননি।
তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আতকিয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী খাইরুল আব্বাস চৌধুরী সোহেল বলেন, ওয়াকওয়ে নির্মাণের প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে বলে জেনেছি। যদিও এখনো চিঠি পাইনি। এই পকল্পের ব্যয় নির্ধারিত ছিল ১ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। আর মাঠ সংস্কারের জন্য বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। আর সে কাজটি পেয়েছিল এই ব্যক্তির মালিকানাধীন নাদিম চৌধুরী ট্রেডার্স। এই দুটি প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল গত ৩০ নভেম্বর। কিন্তু ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় তিনি সময়ের আবেদন করেছিলেন। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বর্ধিত করে। এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের বাকি কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বলেন, যেহেতু ওয়াকওয়ে প্রকল্পটি বাতিল করেছে সেহেতু আমি কিভাবে মাঠের কাজ করব। কারণ মাঠ করতে হলে ড্রেনের ব্যবস্থা করতে হবে। না হয় মাঠের পানি গুলো কোথায় যাবে। এই ড্রেনের উপরই হওয়ার কথা ছিল মাঠের দুই পাশে ওয়াকওয়ে। এখন সে প্রকল্পটি না থাকলে মাঠের কাজ করে কিইবা লাভ হবে।
তিনি আরও বলেন, যদিও মাঠের কাজ করাটা খুব বেশি সময় লাগবেনা। কিছু কাজ এগিয়ে রাখা আছে। এই অবস্থায় মাঠের কাজ করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে আমি তার আগে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের সাথে বসতে চাই। আমি মনে করি প্রকল্প পরিচালকরা হয়তো সিটি প্রশাসককে বিষয়টি বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন। কিংবা আমাকে হয়তো তিনি বুঝতে পারেননি। তবে বসতে পারলে বিষয়টি পরিষ্কার করা যেতো। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু করবেন সে বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি সোহেল।
এদিকে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন আবারো এই প্রকল্পের সমালোচনা করে বলেন, ঠিকাদারের মেয়াদ চলে গেছে। তারা সৌন্দর্যবর্ধনের নামে দোকান করেছে। কিন্তু মাঠের কাজ করেনি। আউটার স্টেডিয়াম সিজেকেএস এর। সেনাবাহিনী তাদেরকে দিয়েছে। সিটি কর্পোরেশনকে দেয়নি। মাঠ ভাড়া দিয়ে তারা টাকা আয় করে, তাই মাঠের উন্নয়নও তাদের করা উচিত। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পাঁচ বছর মেয়র ছিলেন। ওনি সুইমিংপুল করতে পেরেছেন। চারপাশে চায়ের দোকান বসাতে পেরেছেন কিন্তু মাঠের কাজ করেনি কেন? ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের তো প্রচুর ফান্ড আছে, তারা চাইলেই তো মাঠের কাজ করতে পারে। সিজেকেএস যদি আমাদের সাহায্য চায় এবং তারা যদি মাঠের কাজ করার মতো সক্ষমতা নাই বলে স্বীকার করে তাহলে আমরা বিষয়টি দেখবো। প্রয়োজনে সবাই মিলে চাঁদা তুলে করে দিব।
সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের এই কথার পর আরো একবার অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল আউটার স্টেডিয়ামের মাঠের সংস্কার কাজ। এরই মধ্যে মাঠটি হয়ে পড়েছে খেলার একেবারে অনুপযোগী। বৃষ্টি হলেই মাঠটি পরিণত হয় এক রকম ডোবায়। কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একাধিকবার চেষ্টা করেছেন আউটার স্টেডিয়ামকে পরিষ্কার রাখতে। কিন্তু যতক্ষণ পরিষ্কার করা হয় ততক্ষণ কিছুটা ভালো থাকে। কিন্তু কদিন না যেতেই আবার আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়। চট্টগ্রামের ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠক সবাই আশা করেছিলেন, সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের আওতায় যদি আউটার স্টেডিয়ামের মাঠের সংস্কার কাজটা হয়ে যায় তাহলে আবার হয়তো প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে আসবে ঐতিহ্যবাহী এই মাঠে। কিন্তু আবারো হতাশার খবর শুনতে হলো তাদের। কারণ সিটি কর্পোরেশন এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের রশি টানাটানিতে বারবার ব্যহত হচ্ছে এই মাঠের সংস্কার কাজটি। কবে যে এই মাঠের কাজ আলোর মুখ দেখবে তা সময়ই বলে দেবে।