আবারও হৃদয়ভাঙা হার

কাজে আসল না লিটনের দুর্দান্ত ব্যাটিং

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ৩ নভেম্বর, ২০২২ at ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

আরো একবার তীরে এসে তরী ডুবালো বাংলাদেশ। শ্রীলংকার নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল, আরব আমিরাতে এশিয়া কাপের ফাইনালসহ গত কয় বছরে বেশ কয়েকটি ম্যাচে একেবারে তীরে এসে তরী ডুবিয়েছে বাংলাদেশ। একেবারে শেষ বলে এসে হাতের মুটোয় থাকা ম্যাচ গুলোতে হেরেছে বাংলাদেশ। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও একই কাণ্ড করল বাংলাদেশ দল। বলতে গেলে পুরো নিয়ন্ত্রণে থাকা ম্যাচটি যেন ফেলে দিয়ে আসল ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। যাদের উপরই সবচাইতে বেশি ভরসা করে দল। তারাই ডুবিয়ে দিল দলকে। যেন উইকেট দিয়ে আসার প্রতিযোগিতা। আফিফ, সাকিব, রাব্বি, মোসাদ্দেক সবার মধ্যে যেন একটাই তাড়া ফিরতে হবে সাজ ঘরে। আর তাতেই সুযোগ পেয়েও এবারেও হারানো গেল না ভারতকে। আবারো ভারতের কাছে হৃদয় ভাঙা হার।
যদিও ম্যাচের শুরু থেকেই কেমন যেন ছন্নছাড়া বাংলাদেশ। অন্তত তিনটি সহজ ক্যাচ ছেড়েছে টাইগার ফিল্ডাররা। সেগুলো নিতে পারলে হয়তো আরো কম রানে বেধে ফেলা যেতো ভারতকে। সর্বোপরি ব্যাটসম্যানদের তাড়াহুড়ো করার খেসারত দিতে হলো বাংলাদেশ দলকে। ২০১৫ সালে এই মাঠে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল বাংলাদেশ দল। গতকাল সে মাঠেই ভারতকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়ার দারুন সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু সে সুযোগ হেলায় নষ্ট করে দিল ব্যাটসম্যানরা। পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ভারত জিতে নিল ৫ রানে।
বৃষ্টি আসার আগ পর্যন্ত ম্যাচের চালকের আসনে ছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু বৃষ্টি এসে সব গুলিয়ে দিলো। ডাকওয়ার্থ অ্যান্ড লুইস মেথডে তখন বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ালো ১৬ ওভারে ১৫১। ততক্ষণে বৃষ্টির আগ পর্যন্ত ৭ ওভারে ৬৬ রান তুলে ফেলে। শেষ ৯ ওভারে দরকার মাত্র ৮৫ রান। তখনও সম্ভাবনা ছিল। কারণ তখনো ১০ উইকেট হাতে বাংলাদেশের। কিন্তু বৃষ্টির পর বাংলাদেশ দলের এলোমেলো ব্যাটিং সেই সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটিয়ে দিল। ১৮৫ রানের লক্ষ্য খুব কঠিনও না আবার একেবারে সহজও না। কিন্তু শুরুতে লিটন দাশের ব্যাটিং সবকিছুকেই যেন তুচ্ছ মনে হচ্ছিল। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বাংলাদেশ দলের রান যখন ৬০ তখন লিটনের রান ৫৬ আর শান্তর ৪। জয়ের দিকে বেশ ভালই এগুচ্ছিল বাংলাদেশ। ৭ নম্বার ওভার থেকে আসে আরো ৬ রান। এরপর শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির পর ২০ ওভারের ম্যাচটি নেমে আসে ১৬ ওভারে। ডি/এল মেথডে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬ ওভারে ১৫১।
বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে প্রথম ওভারেই দুর্ভাগ্যজনক রানআউট হয়ে যান লিটন দাস। ২৬ বলে ৫৯ রান নিয়ে বৃষ্টির পর খেলতে নামেন লিটন। ৮ম ওভারের প্রথম বলে অশ্বিনের কাছ থেকে ১ রান নেন তিনি। দ্বিতীয় বলে নাজমুল হোসেন শান্ত দ্বিতীয় রান নিতে গিয়েই বিপদে ফেলে দেন লিটনকে। তবে দুর্ভাগ্য লিটনের। লোকেশ রাহুলের সরাসরি থ্রো গিয়ে আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। ৬০ রানে রানআউট হয়ে গেলেন লিটন। ৭টি চারের পাশাপাশি তিনটি ছক্কা মেরেছেন তিনি। লিটন ফিরে এলেও মনে হচ্ছিল শান্ত দায়িত্বটা নিজের কাঁধে নিতে যাচ্ছে।
লিটন আউট হওয়ার ওভারে অশ্বিনকে চার এবং পরের ওভারে হার্দিক পান্ডিয়াকে ছক্কা মেরে ভাল কিছু করার ইঙ্গি দিচ্ছিলেন শান্ত। কিন্তু কে জানতো পরের ওভারেই শেষ হবে তার পথ চলা। মোহাম্মদ শামির বলে সুর্যকুমার যাদবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান শান্ত। আউট হওয়ার আগে ২৫ বলে করেন ২১ রান। আফিফ হোসেন এবং সাকিব আল হাসানও প্রয়োজনে মারকুটে হয়ে উঠতে পারলেও গতকাল আর পারলেন না। ৫ বল খেলে ৩ রান করে ফিরেন আফিফ। একই ওভারে আর্শদ্বিপ সিংয়ের বলেই ফিরে যান সাকিব আল হাসান। আফিফের মতই ক্যাচ তুলে দেন আকাশে। ১২ বলে ১৩ রান করেন টাইগার দলপতি। হার্দিক পান্ডিয়ার বলে ১ রান করে ক্যাচ তুলে দেন ইয়াসির আলি রাব্বি। প্রয়োজনের সময় কখনোই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেনি তিনি।
মোসাদ্দেক হোসেনও যেন একটি ছক্কা মেরে নিজের দায়িত্ব শেষ করলেন। পান্ডিয়ার বুদ্ধিদীপ্ত বলে বোল্ড হয়ে গেলেন তিনি। এরপর নুরুল হাসান সোহান ১৪ বলে ২৫ রান করে চেষ্টা করেন দলকে জেতাতে। কিন্তু সম্ভব হয়নি। অবশ্য তাসকিন একটি চার একটি ছক্কা মেরে ম্যাচে প্রাণের সঞ্চচার করেছিলেন। কিন্তু সে সব আর কোন কাজে আসল না। ম্যাচটা হেরে যায় ৫ রানে।
এর আগে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে যে ভুল করেনি বাংলাদেশ অধিনায়ক সেটা প্রথম ৬ ওভারেই প্রমাণ করে বোলাররা। পাওয়ার প্লেতে ৩৭ রানে আঠকে দেয় ভারতকে। সে সাথে তুলে নেয় রোহিত শর্মার উইকেট। দ্বিতীয় উইকেটে রাহুল এবং কোহলি মিলে যোগ করেন ৬৭ রান। ৩২ বলে ৫০ রান করা রাহুলকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙ্গেন সাকিব। সুর্য কুমার যাদবকে নিয়ে ৩৮ রান যোগ করেন কোহলি। সাকিবের করা ১২ তম ওভারে দুবার যাদবের ক্যাচ ছাড়েন মোস্তাফিজ এবং সোহান। শেষ পর্যন্ত সাকিবই থামান যাদবকে। তবে তার আগে ১৬ বলে ৩০ করে আসেন সুর্য কুমার যাদব। এরপর কেবলই বিরাট কোহলি শো। প্রথম ছয় ওভার ভাল বল করলেও মাঝখানের ওভার গুলোতে পথ হারা বাংলাদেশের বোলাররা। যদিও শেষ দিকে আবার রান নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপের শুরু থেকেই দুর্দান্ত বিরাট কোহলিকে থামানো যায়নি। তার ৪৪ বলে ৬৪ রানের উপর ভর করে ১৮৪ রান করে ভারত। এটি এবারের আসরে তার তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি। সে সুবাধে ম্যাচ সেরাও বিরাট কোহলি। এ জয়ের ফলে সেমিফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল ভারত। আর বাংলাদেশের সম্ভাবনা প্রায় শেষ হয়ে গেল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক ধাক্কাতেই গচ্চা ১২ কোটি টাকা
পরবর্তী নিবন্ধরিকাত খুনের তিন কারণ