সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে আজ মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) সুপার টুয়েলভের ম্যাচে ৬ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। তাদের ৮৪ রানে থামিয়ে দেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেছে ৩৯ বল বাকি থাকতেই।
বাংলাদেশের ইনিংসে নেই তেমন কোনো জুটিই। কেউ ছুঁতে পারেননি ৩০। শূন্য রানে ফিরেন চার ব্যাটসম্যান। তাদের তিনজন সৌম্য সরকার, আফিফ হোসেন ও নাসুম আহমেদ পান গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ।
লম্বা একটা সময় এক প্রান্ত আগলে রাখা লিটন দাস ও শেষে কিছুটা রান বাড়ানো মেহেদি হাসান ছাড়া দুই অঙ্কে যান কেবল এই বিশ্বকাপেই অভিষিক্ত শামীম হোসেন। বিডিনিউজ
উইকেট দেখার পর থেকে প্রশ্ন উঠছিল, বাংলাদেশ সঠিক একাদশ নিয়ে খেলছে কি না। তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলামের দারুণ বোলিংয়ের পর তা আরও উচ্চকিত হয়। সবুজ ঘাসের ছোঁয়া থাকলেও বাংলাদেশ খেলে স্রেফ দুই পেসার নিয়ে, অথচ সুযোগ ছিল চার জন খেলানোর।
আগের ম্যাচের একাদশ থেকে বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে বাদ দিয়ে ফেরানো হয় বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে। বাইরেই থাকেন অভিজ্ঞ পেসার রুবেল হোসেন।
অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররাই গড়ে দেন ব্যবধান। তিনটি করে উইকেট নেন কাগিসো রাবাদা ও আনরিক নরকিয়া। শেষের দিকে দারুণ বোলিংয়ে তাবরাইজ শামসি দেখান কেন তিনি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ বোলার।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই এলোমেলো হয়ে যায় রাবাদার ছোবলে। নিজের দুই ওভার মিলিয়ে ৫ বলের মধ্যে এই পেসার বিদায় করেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ, সৌম্য ও মুশফিকুর রহিমকে।
ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে খেলার চেষ্টায় মিডউইকেটে রিজা হেনড্রিকসকে সহজ ক্যাচ দেন নাঈম। দারুণ এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন সৌম্য।
পরের ওভারের প্রথম বলে একটুর জন্য আউট হননি মুশফিক। হ্যাটট্রিক হয়নি রাবাদার। তবে এক বল পরেই মিডল অর্ডারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভরসাকে বিদায় করে দেন তিনি। রানের খাতা খুলতে পারেননি মুশফিক।
পাওয়ার প্লেতে স্রেফ ২৮ রান করতে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে আর কক্ষপথে ফিরতে পারেনি দলটি। নরকিয়ার বাউন্সার ঠিক মতো খেলতে না পেরে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ। তেড়েফুড়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান আফিফ।
লম্বা সময় এক প্রান্ত আগলে রাখা লিটনের প্রতিরোধ ভাঙেন শামসি। ১ চারে ৩৫ বলে ২৪ রান করা কিপার-ব্যাটসম্যানকে এলবিডব্লিউ করে দেন বাঁহাতি এই রিস্ট স্পিনার। পরে তাকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় বিশ্বকাপে শামীমের প্রথম ইনিংস।
শেষের দিকে দুই চার ও এক ছক্কায় ২৭ রান করেন মেহেদি। কেবল তার স্ট্রাইক রেটই একশর বেশি। ফিরতি ক্যাচ নিয়ে অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারকে থামান নরকিয়া। এর পরপরই নাসুম আহমেদ হিট উইকেট হলে ১০ বল বাকি থাকতে থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
ছোট পুঁজি নিয়েও কিছুটা লড়াইয়ের চেষ্টা করেন বাংলাদেশের বোলাররা। নিজেকে নিংড়ে দেওয়া গতিময় পেসার তাসকিনের হাত ধরে আসে প্রথম সাফল্য। দারুণ এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে যান হেনড্রিকস।
এদিন বাংলাদেশের ক্যাচিং ছিল দারুণ। তাসকিনের বলে এইডেন মারক্রামের চমৎকার রিফ্লেক্স ক্যাচ প্রথম স্লিপে মুঠোয় জমান নাঈম। দারুণ বোলিং করলেও উইকেট পাননি শরিফুল।
প্রথম দুই উইকেটের মাঝে তিন চারে ১৬ রান করা কুইন্টন ডি কককে বোল্ড করেন দেন অফ স্পিনার মেহেদি। আর বাঁহাতি স্পিনার নাসুমকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় শরিফুলের হাতে ধরা পড়েন রাসি ফন ডার ডাসেন। মিড অনে মাথার ওপর দিয়ে যাওয়া বল দৌড়ে গিয়ে সীমানার কাছে লাফিয়ে মুঠোয় জমান শরিফুল। চলতি আসরেই হয়তো যা বাংলাদেশের সেরা ক্যাচ।
ডেভিড মিলারকে নিয়ে বাকিটা সারেন বাভুমা। ২৮ বলে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক অপরাজিত থাকেন ৩১ রানে।
টানা চার হারে তলানিতেই বাংলাদেশ। ৬ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। টানা চার জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে যথারীতি শীর্ষে ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ১৮.২ ওভারে ৮৪ (নাঈম ৯, লিটন ২৪, সৌম্য ০, মুশফিক ০, মাহমুদউল্লাহ ৩, আফিফ ০, শামীম ১১, মেহেদি ২৭, তাসকিন ৩, নাসুম ০, শরিফুল ০*; মহারাজ ৪-০-২৩-০, রাবাদা ৪-০-২০-৩, নরকিয়া ৩.২-০-৮-৩, প্রিটোরিয়াস ৩-০-১১-১, শামসি ৪-০-২১-২)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৩.৩ ওভারে ৮৬/৪ (হেনড্রিকস ৪, ডি কক ১৬, ফন ডার ডাসেন ২২, মারক্রাম ০, বাভুমা ৩১*, মিলার ৫*; তাসকিন ৪-০-১৮-২, শরিফুল ৪-০-১৫-০, মেহেদি ২.৩-০-১৯-১, নাসুম ২-০-২২-১, সৌম্য ১-০-৭-০)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অভ দা ম্যাচ: কাগিসো রাবাদা