কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আবারও ভেসে এলো মৃত স্পিনার ডলফিন। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫ টার দিকে কক্সবাজার শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে উখিয়ার সোনারপাড়া পয়েন্ট সৈকতে ডলফিনটি ভেসে আসে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) বিজ্ঞানীরা।
বোরি’র সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোহাম্মদ শরীফ জানান, স্পিনার প্রজাতির এ মৃত ডলফিনটি দৈর্ঘ্যে ৮ ফুট এবং ওজনে ৯৫ কেজি। ডলফিনটির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে দাঁতগুলো সব ভোতা অবস্থায় আছে। তাছাড়া পেটে কোনো রকম খাবার পাওয়া যায়নি। শরীরেও পচনের চিহ্ন দেখা যায়নি। বয়স্কজনিত কারণে বিগত ২৪ ঘন্টার মধ্যে ডলফিনটির মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বোরির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. তৌহিদা রশীদ বলেন, ডলফিনটি সংগ্রহ করে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে রাখা হয়েছে। সাগরে ডলফিন, পরপইস ও তিমিসহ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিশাল পরিবেশগত সেবার কারণে এদেরকে ইকোসিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ার বা বাস্তুসংস্থান প্রকৌশলী বলা হয়। এরা তাদের স্বভাবজাত বা আচরণগত প্রকৌশলের মাধ্যমে শুধু নিজেদের বসবাসের পরিবেশ ঠিক রাখেনা, অন্য প্রাণিদের জন্যও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেয়। যে কারণে, যে পরিবেশে এরা বসবাস করে সেই পরিবেশকে একটি উর্বর, জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ নির্মল পরিবেশ হিসাবে ধরা হয়।
ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডাব্লিউসিএস) সর্বশেষ জরিপ মতে, বঙ্গোপসাগরে মোট ১৩ জাতের সিটাসিয়ান বা সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র এক প্রজাতির পরপইস, ৮ প্রজাতির ডলফিন ও ৪ প্রজাতির তিমি রয়েছে।
২০১২ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে স্তন্যপায়ী ডলফিন, পরপইস ও সামুদ্রিক কচ্ছপ সংরক্ষিত প্রজাতি হিসেবে তালিকাভূক্ত। এগুলো শিকার করা, খাওয়া, অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ পরিবহণ ও ক্রয়বিক্রয় করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
এরআগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ২টি ইন্দোপ্যাসিফিক ফিনলেস পরপইস, তিনটি ইরাবতী ডলফিন ও একটি ইন্দোপ্যাসিফিক হামব্যাক ডলফিনসহ ছয়টি স্তন্যপায়ী প্রাণী ও শতাধিক সামুদ্রিক কাছিমের মরদেহ ভেসে এসেছিল কক্সবাজার সৈকতে। আর চলতি বছর স্পিনার প্রজাতির প্রথম ডলফিনের মৃতদেহ ভেসে এলো গতকাল শুক্রবার।
এরআগে ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে ও একই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপ সংলগ্ন সৈকতে ইরাবতী প্রজাতির ২টি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল। এর আগে ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট ও ২০ মার্চ একই সৈকতে মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল। ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল পরপর দুইদিনে হিমছড়ি সৈকতে ভেসে এসেছিল দুটি মরা তিমি।