আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন গুরুত্বপূর্ণ

বিশ্ব আবহাওয়া দিবস আজ

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার | শনিবার , ২৩ মার্চ, ২০২৪ at ৪:৩১ পূর্বাহ্ণ

মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে প্রভাবিত হয়। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা, পানিসম্পদ এবং নৌ ও আকাশ পথের পরিবহন ব্যবস্থা নির্ভর করে আবহাওয়ার উপর। তাই মানুষের প্রতিদিনের কর্মের শুরুতে ভাবতে হয় আবহাওয়ার কথা। আর আবহাওয়া বা জলবায়ু চিন্তাকে মানুষের কর্মের অগ্রভাগে রাখার গুরুত্ব তুলে ধরতে আজ শনিবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব আবহাওয়া দিবস।

চলতি বছরের বিশ্ব আবহাওয়া দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘কর্মের অগ্রভাগে জলবায়ু’। সাম্প্রতিক দশকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে জাতিসংঘসহ বিশ্বের জলবায়ু বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন। জলবায়ুর পরিবর্তনশীলতার কারণে খাদ্য উৎপাদন, স্বাস্থ্য, আবাসন, শক্তিচক্র, পানিসম্পদ, নিরাপত্তা, পর্যটন, অর্থনীতি এবং পরিবহনসহ সমাজের প্রায় প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করতে পারে। তাই জলবায়ু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং দুর্যোগ সম্পর্কে আগাম পূর্বাভাস দেওয়ার বিষয়টি টেকসই উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, বায়ু প্রবাহের অবস্থা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে। কারণ প্রথমত, নগর প্রশাসনে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়ার পূর্বাভাস কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ফসল ফলানোর জন্য কৃষকদের পানির প্রয়োজন। এছাড়া আকাশ ও সমুদ্র পথে পরিবহন এবং সাগরে মাছ ধরার বিষয়টিও আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল। বাতাসের প্রভাবে বিমান এবং জাহাজ চলাচল ব্যাহত হয়। বজ্রপাত বিমানের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। আর সমুদ্রের ঢেউ জাহাজের জন্য কঠিন হতে পারে।

তিনি বলেন, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সংগৃহীত তথ্য ছাড়া দৈনিক আবহাওয়ার সঠিক পূর্বাভাস প্রদান অসম্ভব। আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য আমাদের জলবায়ু ক্ষতি নিরূপণ, দৈনন্দিন পরিকল্পনা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে সতর্ক করতে সাহায্য করে।

তিনি জানান, ১৯৫০ সালের ২৩ মার্চ তারিখে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার প্রতিষ্ঠার কথা স্মরণ করার জন্যই ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রে দিবসটি পালন করা হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম বিশ্ব আবহাওয়া দিবস পালিত হয় ১৯৬১ সালের ২৩ মার্চ।

জানা যায়, ১৮৭৩ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর লক্ষ্য ছিল আবহাওয়া সংক্রান্ত স্টেশন নেটওয়ার্ক তৈরি করা এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস উন্নত করা। এরপর ১৯৫০ সালের ২৩ মার্চ এ আবহাওয়া সংস্থার নাম পরিবর্তন করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা রাখা হয়। ১৯৫১ সালে আবহাওয়াবিদ্যার জন্য এ সংস্থাটি জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা হয়ে ওঠে। প্রতি বছর বিশ্ব আবহাওয়া দিবস বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপিত হয়।

আবহাওয়া হলো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের বায়ু প্রবাহ ও ঝড়তুফান, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি। আর জলবায়ু হলো একটি নির্দিষ্ট স্থানের দীর্ঘ সময়ের (মাস থেকে হাজার বা মিলিয়ন বছর হতে পারে) গড় আবহাওয়া। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা গড় জলবায়ু নির্ধারণের জন্য ৩০ বছরের আবহাওয়ার সময়কাল ব্যবহার করে।

বিজ্ঞানীরা জানান, পৃথিবীর সমস্ত জীবন জলবায়ু ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে, যা পাঁচটি প্রধান উপাদান নিয়ে গঠিত। যেমন বায়ুমণ্ডল, পানিমণ্ডল বা হাইড্রোস্ফিয়ার (মহাসাগর, হ্রদ ও নদী), ক্রায়োস্ফিয়ার বা হিমমণ্ডল (বরফ ও তুষার), লিথোস্ফিয়ার বা ভূমিপৃষ্ঠ এবং বায়োস্ফিয়ার বা জীবমণ্ডল। এই উপাদানগুলোর মধ্যে জটিল মিথষ্ক্রিয়া এবং প্রভাব (যেমন শক্তি, পানি ও কার্বন ডাই অক্সাইডের বিনিময়) আমাদের জলবায়ুর তারতম্য এবং পরিবর্তনশীলতা নির্ধারণ করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাঠের নতুন আকর্ষণ বেগুনি রঙা ধান
পরবর্তী নিবন্ধসরকারের বেঁধে দেয়া দাম মানছেন না ব্যবসায়ীরা