আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগই জুলাই অভ্যুত্থানের সিঁড়ি : সালাহউদ্দিন

আমরা ভালো রাজনীতি দিয়ে আওয়ামী খারাপ রাজনীতির বিলুপ্তি ঘটাব

| বুধবার , ৮ অক্টোবর, ২০২৫ at ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের সিঁড়ি নির্মিত হয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, আমরা এদেশ প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই বিভিন্ন শক্তির দ্বারা নির্যাতিত হয়েছি। আমরা শুরুতেই ব্রিটিশ দ্বারা পরে পাকিস্তানি দ্বারা শাসিত, শোষিত ও নিষ্পেষিত হয়েছি। আমি স্বীকার করতে চাই, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের অধিকারের পক্ষে তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অধিকারের পক্ষে এবং স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে যারাই সংগ্রাম করেছেন, রাজনীতি করেছেন, আন্দোলন করেছেন, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদসহ সকলেরই অবদান আছে। সকলেরই রক্তের সিঁড়ি দিয়ে, সকলেরই সংগ্রামের সিঁড়ি দিয়ে একাত্তর হয়েছে। ঠিক তেমনই ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের সিঁড়িগুলো নির্মাণ করেছি আবরার ফাহাদের মত শহীদদের আত্মত্যাগের সিঁড়ির মধ্য দিয়ে। আমরা আমাদের সিঁড়ি নির্মাণ করেছি শাপলা চত্বরের শহীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে।

গতকাল মঙ্গলবার টিএসসিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত ‘মতপ্রকাশ থেকে মৃত্যু : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিবাদের বিস্তার ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আজকের যে আবরার ফাহাদের প্রসঙ্গ, সেটাকে তাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের দাবি রাখি। এটা শুধু একটা রিজিয়নাল হেজিমনি বলেই এক শব্দে সবকিছু বিশ্লেষণ করা যাবে না। যেটাকে আগ্রাসন অথবা আধিপত্যবাদ বললেও বিশ্লেষণ করা যাবে না। ঐতিহাসিকভাবে এই তথ্যটা বিশ্লেষণ করতে হবে। আমাদের সেই বঙ্গভঙ্গ থেকে দেখলে আমরা দেখি, ব্রিটিশরা আমাদের শোষণ করেছে। তবে আমরা ১৯০৫ সালে এ বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে আমরা প্রথম আশা দেখেছিলাম। তবে আবার ১৯১১ সালে এসে সেখানে বাধাগ্রস্ত হয়।

তিনি বলেন, সেই বাস্তবতাকে স্বীকার করেই পরবর্তীতে লাহোর প্রস্তাব হয়। সেই লাহোর প্রস্তাবের মধ্যে বীজ বপন করা হয়েছিল আবার নতুন আগ্রাসনের। এক একটি রাষ্ট্র আলাদা হবে পূর্ব এবং পশ্চিমের অংশ মিলে এবং সে লাহোর প্রস্তাবের টু স্টেটসের মধ্যে ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তান প্রস্তাবটা বিঁধিত ছিল। যা আমাদের ব্রিটিশ থেকে নতুন করে শোষণ করার জন্য পথ তৈরি করে দেয়।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা যদি ১৯৭১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত এই রাজনৈতিক ইতিহাস নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করি, তাহলে আমরা ভিনদেশি আধিপত্যবাদের যে ইতিহাস, বিশ্লেষণ করতে পারব। একইসাথে বাংলাদেশে অবস্থিত লেন্দুপ শেখ হাসিনার ক্রম অবনতির ইতিহাসও আমরা বিশ্লেষণ করতে পারব। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশে পার্শ্ববর্তী যে সমস্ত বৃহৎ শক্তি থাকে, তাদের একটি পরিকল্পনা থাকে বিস্তারের জন্য; দুর্বল প্রতিবেশীর উপরে সেই রোগে তারা আক্রান্ত থাকে। যার জন্য তারা সেই সমস্ত দেশে তাদের মনমানসিকতা সম্পন্ন শাসকগোষ্ঠী সৃজন করে কীভাবে ক্রমানয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করে, সংস্কৃতিক দূষণ করে, সংস্কৃতির ভেতরে ইন্ডাকশন করে সংস্কৃতিকে নিজের মত করে বানিয়ে নেয়।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, আমাদের মধ্যে এখন ঠিক আগের মতো সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটেছে। ব্রিটিশদের মতো তারা এখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রলোভন দেখিয়ে এই বাংলাদেশে তাদের পলিটিকাল হেজিমনি সৃষ্টি করতে চেয়েছে। আগ্রাসন সৃষ্টি করতে চেয়েছে এবং তারা অনেকটা সাকসেসফুল হয়েছে। কারণ হাসিনার মত আরেকটাকে তারা এদেশে বসাতে এবং রাখতে সহযোগিতা করেছে।

তিনি বলেন, আমরা যদি ব্যাড কালচারকে রিপ্লেস করতে চাই, গুড কালচার দিয়ে ব্যাড কালচার ইন পলিটিঙসেটাকে ধ্বংস করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে যদি আমরা ভালো সংস্কৃতির, ভালো রাজনীতির, আদর্শিক রাজনীতির প্রচলন করি, তাহলে আমরা তাত্ত্বিকভাবে ফ্যাসিবাদের বিলুপ্তি ঘটাতে পারব। অন্যথায় যদি আমরা তাদের মত আচরণ করতে থাকি, তাহলে ফ্যাসিবাদ কোনো না কোনদিন আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে। তাই, আমরা ভালো রাজনীতি দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের খারাপ রাজনীতিকে আমরা বিলুপ্তি ঘটাব।

ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন বলেন, শুধুমাত্র আমরা একটা মাঠে স্লোগান দিয়ে, মাঠের রাজনীতি করে এই ব্যাড পলিটিঙকে স্বৈরাচারী এবং ফ্যাসিবাদীর উৎপত্তিকে আমরা বিনাশ সাধন করতে পারব না। বিনাশ সাধন করতে হলে শুরু থেকেই আমাদেরকে শিকড় তুলে ধরতে হবে। ফ্যাসিবাদের সেই শিকড় তোলার জন্যই আমাদেরকে জনগণের সামনে ভালো রাজনীতির উপস্থাপন করতে হবে। ভালো রাজনৈতিক সংস্কৃতির উপস্থাপন করতে হবে এবং সেই রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ২০১৯ সালে গভীর রাতে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, আমরা তখন অবগত ছিলাম। আমাদের নেতাকর্মীরা সেখানে ঘেরাও করলেও আমরা কিছুই করতে পারিনি। পরের দিন আমরা এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আবরারের মৃত্যুর পরদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল বের করেছি।

তিনি বলেন, আমরা আজ রাজনীতিতে নতুন নই। বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে আমরা রাজনীতি করেছি। অথচ আজ আমরা দেখছি, ছাত্ররাজনীতি নিয়ে যাদের কোনো অবদান নেই, তারাই আজ ছাত্ররাজনীতি কী হবে তা নীতি নির্ধারক হতে চাই। তাই কেউ যদি মনে করে থাকে, সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রোপাগান্ডা জারি রেখে নতুন ন্যারেটিভ নির্মাণ করতে চাই, তাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি আমরা এখনো রাজপথে আছি। আমরা যতদিন আবরার ফাহাদকে স্মরণ করব, আমরা গুপ্ত রাজনীতিকে স্মরণ করিয়ে দেব।

এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজলাবদ্ধতা নিরসনে নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন
পরবর্তী নিবন্ধকোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যাকে অন্য স্তরে পৌঁছে দিয়ে পদার্থের নোবেল