আবদুস সাত্তার চৌধুরী : পুঁথিবিশারদ ও লোকসাহিত্য সংগ্রাহক

| শুক্রবার , ৮ মার্চ, ২০২৪ at ৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ

আবদুস সাত্তার চৌধুরী (১৯১৯১৯৮২)। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন পুঁথি লোকসাহিত্য সংগ্রাহক পুঁথিবিশারদ হিসেবে রয়েছে তাঁর খ্যাতি। তার সংগৃহীত পাণ্ডুলিপিকে উপজীব্য করে দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ ও সম্পাদিত পাঠদান হচ্ছে। আবদুস সাত্তার চৌধুরী ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা মার্চ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হুলাইন গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল মজিদ চৌধুরী ও মাতার নাম রাফেয়া খাতুন। আবদুস সাত্তার চৌধুরী ছিলেন মুন্সি আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের যোগ্য উত্তরসূরী ও আত্মীয়। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে ছয় বছর বাংলা একাডেমির নিয়োজিত সংগ্রাহক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তখন তিনি লোকসাহিত্য বিষয়ে ৬৭টি পাণ্ডুলিপি ছাড়াও বেশ কয়েক শ’ দুর্লভ পুঁথি, সাময়িকী ও পুস্তক বাংলা একাডেমিতে জমা দিয়েছিলেন। এর আগে তিনি ১৯৩৬ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ২৫ বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। প্রফেসর সৈয়দ আলী আহসান ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সৈয়দ আলী আহসানের আহবানে ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে আবদুস সাত্তার চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধীনে পুঁথি সংগ্রাহক হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন। এখানে সৈয়দ আলী আহসান, . আবদুল করিম, . আনিসুজ্জামানের সহায়তায় অধুনালুপ্ত ও দুষ্প্রাপ্য আরবী, ফারসী, সংস্কৃতি, পালি ও বাংলা ভাষায় নানা পুঁথি ও সাময়িকী পত্রিকা সংগ্রহ করে পুঁথি সংগ্রহে সাফল্য অর্জন করেন। বিভিন্ন ভাষার বহু পাণ্ডুলিপি, অনেক পুঁথি, দুষ্পাপ্য পুস্তক ও সাময়িকী তিনি সংগ্রহ করেছিলেন এ সময়ে। এগুলো দিয়ে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে গড়ে ওঠে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির ‘পাণ্ডুলিপি ও দুষ্প্রাপ্য’ শাখা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আবদুস সাত্তার চৌধুরী পাণ্ডুলিপি বিশেষজ্ঞ হিসেবে সেখানে কর্মরত ছিলেন। আবদুস সাত্তার চৌধুরীর লোকসাহিত্য সংগ্রহের মধ্যে মারফরিত, মুর্শিদি, বাউল ও মাইজভাণ্ডারী গানের সংখ্যা ১ হাজার ৬৭১টি। পালা গানের সংখ্যা ৩০ টি। তাঁর সংগৃহীত পুঁথি নিয়ে তিনি পুঁথি পরিচিত নামে একটি তালিকা প্রস্তুত করে রেখেছিলেন যা পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের জার্নাল ‘পাণ্ডুলিপি’তে ড. মাহবুবুল হকের সম্পাদনায় প্রকাশ করা হয়। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তাঁর সংগৃহীত পালাগানগুলো পর্যায়ক্রমে ‘চট্টগ্রাম গীতিকা’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। ইসমাইল জসীম লিখিত ‘কিশোর জীবনী: পুঁথিবিশারদ আবদুস সাত্তার চৌধুরী’ তাঁকে নিয়ে এপর্যন্ত প্রকাশিত একমাত্র জীবনীগ্রন্থ। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পুঁথিশালার পাণ্ডুলিপি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধশুধু নারী দিবস উদযাপন নয়, চাই নারীর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা