সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে; না হলে নিজেই দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বরর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তিনি একথা বলেন।
জাহাঙ্গীর আলম কৃষি মন্ত্রণালয়েরও উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন। এদিন তিনি দিনাজপুরের বিরলে যান ধান কাটা উৎসবের উদ্বোধন করতে। সেখান থেকে ফিরে তিনি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। খবর বিডিনিউজের।
এর আগে সকালেই খবর ছড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুইবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা আবদুল হামিদ বুধবার শেষ রাতে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশ ছেড়েছেন। তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গেছেন বলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। যদিও জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ সদর থানার একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আব্দুল হামিদকেও আসামি করা হয়েছে। তবে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, আবদুল হামিদের দেশত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাকে চিকিৎসার জন্য যেতে দেওয়া হয়েছে। দুজন আত্মীয় তার সঙ্গে ছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা–সমালোচনার মধ্যেই দিনাজপুরে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সাবেক রষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ অপ্রত্যাশিত ঘটনা। তার দেশত্যাগে যারা দায়ী তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
জাহাঙ্গীর আলম যখন সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবেশ পথে জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করছিলেন। তারা সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশ্যতাগের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ত্যাগ করার সময় বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তিনি গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার কথা পুনঃব্যাক্ত করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে মারেন, দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে কী করবেন? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তৎক্ষণাৎ জবাব দেন, তা নাহলে আমিই চলে যাব। এর পর বিক্ষোভকারীরা শান্ত হয়ে পথ ছেড়ে দেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার গাড়িতে উঠে চলে যান।
এর আগে দুপুর ১টায় উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বিরলে ব্রি–ধান–৮৮ কর্তনের উদ্বোধন করেন। সেখানেও তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, “বাংদেশের সীমান্ত এলাকায় কৃষকদের ধান কাটতে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের সীমান্ত এলাকা সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত। সাংবাদিকদের প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, কৃষি রক্ষায় আমরা কৃষি জমি সুরক্ষা আইন প্রণয়নের জন্য নতুনভাবে চিন্তাভাবনা করছি। কিছুদিনের মধ্যেই হয়ে যাবে।
জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, আমাদের জনসংখ্যা বেড়ে গেছে এবং কৃষি জমি কমে গেছে। তারপরেও উন্নত জাতের ধান, কৃষক এবং বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রম উৎপাদনকে বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বছর বন্যার কারণে চাল আমদানি করতে হয়েছে, এবার হয়ত আমদানি করতে হবে না। এবার ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে।
ধান কাটা উদ্বোধন শেষে কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখানে তিনি কৃষকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কৃষি রক্ষায় বিভিন্ন পরামর্শ দেন। এ সময় তিনি বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন, কৃষকদের পানির বিল যেন কমিয়ে আনা হয়। যাতে করে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে তার ব্যবস্থা করতে।