আবদুল গাফফার চৌধুরী( ১৯৪৩–২০২২)। লেখক ও কলামিস্ট। তিনি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো–এর রচয়িতা। তিনি ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের উলানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিক, ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ইন্টারমিডিয়েট এবং১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স পাস করেন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে সওগাত পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ছাপা হয়। এরপর তিনি সাংবাদিকতা করেছেন ঢাকার বিভিন্ন কাগজে। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের ‘মাসিক সওগাত’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নিযুক্ত হন তিনি। এ সময় তিনি ‘মাসিক নকীব’ও সম্পাদনা করেন। একই বছর তিনি আবদুল কাদির সম্পাদিত ‘দিলরুবা’ পত্রিকারও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। ওই বছরই তিনি প্যারামাউন্ট প্রেসের সাহিত্য পত্রিকা ‘মেঘনা’র সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রাজনৈতিক পত্রিকা ‘চাবুকের’ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। সামরিক শাসনামলে সেটা বন্ধ হয়ে গেলে তিনি মওলানা আকরম খাঁর ‘দৈনিক আজাদ‘-এ সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দৈনিক ‘জেহাদ’–এর বার্তা সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে’। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে অবজারভার গ্রুপের দৈনিক ‘পূর্বদেশ’–এ যোগ দেন। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ‘জয় বাংলা’, ‘যুগান্তর’ ও ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় কাজ করেছিলেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর তার লেখা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি তাকে খ্যাতি এনে দেয়। প্রথমে তিনি নিজেই গানটিতে সুর করেছিলেন। পরে শহীদ আলতাফ মাহমুদ এ গানে সুরারোপ করেন এবং এ সুরেই এখন গানটি গাওয়া হয়। বিবিসি বাংলা বিভাগের দর্শকদের জরিপে এই গান বাংলা গানের ইতিহাসে তৃতীয় সেরা গানের মর্যাদা পেয়েছে। স্বাধীনতার পর, ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ অক্টোবর সপরিবারে লন্ডনে চলে যান। সেখানে ‘নতুন দিন’ নামে একটি পত্রিকা বের করেন। তিনি অনেকগ্রন্থের জনক। নিয়মিত কলাম লিখছেন ঢাকা ও কোলকাতার বিভিন্ন দৈনিকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের ওপর গাফফার চৌধুরী একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন, ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’। বঙ্গবন্ধুর ওপরেই আরেকটি চলচ্চিত্র, ‘দ্য পোয়েট অব পলিটিকস’ প্রয়োজনা করেছেন তিনি। কাজের স্বীকৃতির জন্য জীবনে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন গাফফার চৌধুরী। উল্লেখযোগ্য হল, বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৭), একুশে পদক, ইউনেস্কো সাহিত্য পুরস্কার এবং স্বাধীনতা পদক (২০০৯)। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মে তিনি লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন।