মুন্সি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ (১৮৬১–১৯৫৩)। বাংলা সাহিত্যের একজন কীর্তিমান সাহিত্যপণ্ডিত। প্রাচীন পুঁথি গবেষক ও সংগ্রাহক। প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ ও সাহিত্যের ঐতিহ্য অন্বেষণকারী এক বিরল ব্যক্তিত্ব। মুসলমানদের বাঙালিত্ববোধ জেগে ওঠার পেছনে তাঁর ভূমিকা অপরিসীম। আবদুল করিম ১৮৬১ সালের ১১ অক্টোবর চট্টগ্রামের সুচক্রদণ্ডী গ্রামে জন্মগহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মুন্সি নুরউদ্দীন এবং মায়ের নাম মিশ্রীজান। তাঁর মা ছিলেন পটিয়া পাইরোল গ্রামের প্রাচীন প্রখ্যাত পাঠান তরফদার দৌলত হামজা খাঁ বংশের মেয়ে। আব্দুল করিম ১৮৯৩ সালে এন্ট্রান্স পাস করেন। তিনি সীতাকুণ্ড মধ্য ইংরেজি স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন ১৮৯৫–৯৬ সালে। ১৮৯৬–৯৭ সালে জজ আদালতে অ্যাপ্রেন্টিস হিসেবে এবং ১৮৯৮ সালে কমিশনার অফিসে ক্লার্ক হিসেবে কাজ করেন। ১৮৯৯–১৯০৫ সাল পর্যন্ত তিনি আনোয়ারা মধ্য ইংরেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এরপর ১৯০৬–৩৪ সাল পর্যন্ত বিভাগীয় স্কুল ইন্সপেক্টর অফিসে কর্মচারী ছিলেন। আবদুল করিম চারটি পত্রিকার অবৈতনিক সম্পাদক ছিলেন। তার সাহিত্য খ্যাতিই তার এই সম্মান লাভের কারণ। তিনি মধ্যযুগের হিন্দু–মুসলমান সাহিত্য সাধকদের পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করে বাংলার ইতিহাসের এক অনালোচিত অধ্যায়কে কালের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেন। তার সংগৃহীত পাণ্ডুলিপিগুলো তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাণ্ডুলিপি বিভাগে দান করেন। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ সংগ্রহ কার্যে হাত না দিলে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের অবদান অন্ধকারেই রয়ে যেতো। নদীয়া সাহিত্য সভা তাঁকে ‘সাহিত্যসাগর’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে এবং চট্টল ধর্মমণ্ডলী তাঁকে ‘সাহিত্যবিশারদ’ উপাধিতে ভূষিত করে। আবদুল করিম সম্পাদিত ও রচিত গ্রন্থাবলি : ‘রাধিকার মানভঙ্গ’, ‘সত্যনারায়ণের পুঁথি’, ‘মৃগলুব্ধ’ ‘গোরক্ষবিজয়’, ‘পদ্মাবতী’ (খণ্ডাংশ) ও অন্যান্য। তার সঙ্কলিত ও রচিত গন্থ : ‘বাঙ্গালা প্রাচীন পুঁথির বিবরণ’ ১ম খণ্ড, ১ম সংখ্যা (১৩২১ ব.), ‘পুঁথি পরিচিতি’ (আহমদ শরীফ সম্পাদিত ও বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত: ১৯৫৮), ‘ইসলামাবাদ’ (সৈয়দ মুর্তাজা আলী সম্পাদিত : ১৯৬৪) ও ‘আরাকান রাজসভায় বাঙ্গালা সাহিত্য’ (মুহাম্মদ এনামুল হকের সহযোগিতায় রচিত)। ১৯৫৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।