আবদুল্লাহ আল হারুন আওয়ামী লীগের একজন প্রখ্যাত নেতা ছিলেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী একজন রাজনৈতিক নেতা। বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধু আবদুল্লাহ আল হারুনকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন এবং ভালোবাসতেন। আমি আবদুল্লাহ আল হারুনকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। বঙ্গবন্ধু যখনই চট্টগ্রাম গিয়েছেন আবদুল্লাহ আল হারুনকে কাছে টেনে নিয়েছেন। আবদুল্লাহ আল হারুন জীবদ্দশায় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি আমার জানা
মতে, চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। ১৯৭০ এর নির্বাচনে তিনি এমপিএ নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ভারতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটা ক্যাম্পের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
আমরা যখন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ করি তখন আবদুল্লাহ আল হারুন চট্টগ্রামে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অর্থাৎ সর্বগুণে গুণান্বিত ছিলেন আবদুল্লাহ আল হারুন। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তিনি বঙ্গবন্ধুর
আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছেন। দলের জন্য তিনি বহু কাজ করেছেন। তাঁর আচার-আচরণ খুবই মার্জিত ছিল। ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। আমিও তাকে খুব শ্রদ্ধা করতাম।
চট্টগ্রামে যে সমস্ত নেতারা আওয়ামী লীগ করতেন জনাব এম আর সিদ্দিকী, এম এ আজিজ, জহুর আহমদ চৌধুরী, এম এ হান্নান, আবদুল মান্নান, অনেক বরেণ্য নেতা ছিলেন। আবদুল্লাহ আল হারুন ছিলেন তাদের অন্যতম। তিনি মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের কাজে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আত্মনিয়োগ করেছেন। বঙ্গবন্ধু যখনই চট্টগ্রাম যেতেন, আবদুল্লাহ আল হারুনকে কাছে টেনে নিতেন। আমার যতদূর মনে পড়ে বঙ্গবন্ধু আবদুল্লাহ আল হারুনের বাড়িতেও গিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু যখন চট্টগ্রাম গিয়েছেন স্বাধীনতার পরে তখনও দেখেছি আবদুল্লাহ আল হারুনের সাথে বঙ্গবন্ধু কথা বলেছেন একান্তে। সে সময় বঙ্গবন্ধুর জনসভার জন্য যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন আবদুল্লাহ আল হারুন অন্যতম। সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক নেতা বলতে যা বোঝাই, চাল চলন, আচার-আচরণ ব্যক্তিত্ব, সব কিছু মিলিয়ে তিনি একজন বিখ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন এবং সকলের কাছে তিনি শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন। সুতরাং আমার স্মৃতির পাতায় আবদুল্লাহ আল হারুন সাহেবের নানা স্মৃতি বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠে। যতবার চট্টগ্রামে গিয়েছি ততবারই দেখা করেছি, সাক্ষাৎ করেছি তাঁর সাথে।
তিনি আজকে আমাদের মাঝে নেই। যে আদর্শে, যে চেতনায় তিনি সংগ্রাম করে গেছেন, যে আদর্শের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন সে আদর্শকে বাস্তবায়ন করে যাতে আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে পারি আজকে এ কামনা করছি।
’৬৯-এ যখন গণ আন্দোলন হয়, তখন আবদুল্লাহ আল হারুন আমাদের সাথে নানাভাবে যোগাযোগ রাখতেন। তখন তো আজকের দিনের মত মোবাইল কিংবা আধুনিক প্রযুক্তির যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না। তিনি আমাদেরকে পরামর্শ দিয়ে চিঠি পাঠাতেন। কোনটা করা উচিত, কোনটা অনুচিত আমাদেরকে বলতেন। পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছিলেন। তখন আমি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলাম। তখন দেখেছি তিনি ওয়ার্কিং কমিটির সভায় সুন্দরভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন। গঠনমূলক আলোচনা করতেন, সমালোচনাও করতেন। অনেক সময় তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ওয়ার্কিং কমিটির অনেক সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি।
’৭০ এর নির্বাচনে আবদুল্লাহ আল হারুন নির্বাচন করেছিলেন এবং বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর সেই নির্বাচনের সময় তার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলাম ঢাকা থেকে গিয়ে। আজকে সেসব দিনের কথা খুব মনে পড়ছে। আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আবদুল্লাহ আল হারুনদের মতো গুণী নেতাদের বড় প্রয়োজন ছিল। আমরা তাঁর মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্বদের অভাব অনুভব করছি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে আবদুল্লাহ আল হারুন আমাদের মাঝে চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন।
লেখক : সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী, সদস্য-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম