আবদুল্লাহ আল মামুন(১৯৪২–২০০৮)। নাট্যকার, নাট্যনির্দেশক, অভিনেতা। টিভি প্রযোজক, চলচ্চিত্রকার, নাট্যশিক্ষক, ঔপন্যাসিক ও সংগঠক হিসেবে তাঁর অসামান্য খ্যাতি রয়েছে। তিনি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩শে জুলাই জামালপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা অধ্যক্ষ আবদুল কুদ্দুস এবং মাতা ফাতেমা খাতুন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগ থেকে বিএ অনার্স ও এমএ (১৯৬৪) ডিগ্রি অর্জন করেন। আবদুল্লাহ আল মামুন ছাত্রজীবন থেকেই নাট্য রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁর অভিনয় জীবনে চাষী থেকে শুরু করে যুবক, নেতা, সেনাপতি, মাতবার, বাবা, শিক্ষক, ব্যারিস্টার, নায়ক, বাউল, ফকির, হাজী, ব্যাপারী, ব্যবসায়ী, তাতারি ইত্যাদি স্বদেশীয় চরিত্রের পাশাপাশি ওথেলো নাটকে ইয়াগো, আন্তিগোনে নাটকে ক্রেয়ন ইত্যাদি ভিন্নদেশীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। সঙ্গত কারণেই তাঁর নাটকে বাংলাদেশের সমসাময়িক পারিবারিক, সামাজিক ও সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিচিত্র পেশাজীবী মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষের কথা উঠে এসেছে। তাঁর গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ও মঞ্চস্থ নাটকগুলোর মধ্যে সুবচন নির্বাসনে (১৯৭৪), এখনও দুঃসময় (১৯৭৫), এবার ধরা দাও (১৯৭৭), শপথ (১৯৭৮), সেনাপতি (১৯৮০), অরক্ষিত মতিঝিল (১৯৮০), ক্রস রোডে ক্রসফায়ার (১৯৮১), শাহজাদীর কালো নেকাব (১৯৮৪), আয়নার বন্ধুর মুখ (১৯৮৩), এখনও ক্রীতদাস (১৯৮৪), তোমরাই (১৯৮৮), দূরপাল্লা (১৯৮৮), তৃতীয় পুরুষ (১৯৮৮), আমাদের সন্তানেরা (১৯৮৮), কোকিলারা (১৯৯০), পথনাটক: উজান পাবন, বিবিসাব ও কুরসী (১৯৯১), দ্যাশের মানুষ (১৯৯৩), স্পর্ধা (১৯৯৬), মেরাজ ফকিরের মা (১৯৯৭), মাইক মাস্টার (১৯৯৭), মেহেরজান আরেকবার (১৯৯৮), জন্মদিন (২০০৬) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাঁর রচিত আরো নাটক (প্রস্তাবিত মঞ্চনাটক): নিয়তির পরিহাস (১৯৫৭), বিন্দু বিন্দু রং (১৯৬২), গোলাপ বাগান (২০০২) ইত্যাদি। আবদুল্লাহ আল মামুন ৭টি উপন্যাস রচনা ও প্রকাশ করেন, সেগুলো–মানব তোমার সারাজীবন (১৯৮৮), আহ্ দেবদাস (১৯৮৯), তাহাদের যৌবনকাল (১৯৯১), হায় পার্বতী (১৯৯১), এই চুনীলাল (১৯৯৩), গুণ্ডাপাণ্ডার বাবা (১৯৯৩), খলনায়ক (১৯৯৭)। তিনি ‘আমার আমি’ নামে একটি আত্মচরিত এবং ম্যানহাটান নামে একটি ভ্রমণ কাহিনি রচনা করেন। জীবদ্দশায় তিনি তাঁর নাট্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার ও ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া টেলিভিশন নাটক রচনা ও পরিচালনার জন্য প্রথম জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার (১৯৭৮) এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি দুবার সেরা পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ২১শে আগস্ট ২০০৮ মৃত্যুবরণ করেন।