চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর দক্ষিণ সিকদার পাড়ার নেজাম উদ্দিন প্রকাশ নেজাম মিস্ত্রির এক মাত্র ছেলে সন্তান আরিফুল ইসলাম নিশু (১৬)। সেই আদরের ছেলের আবদার রাখতে গিয়ে বাবাকে কিনে দিতে হয় মোটরসাইকেল। কাল হয়েছে সেই মোটর সাইকেলই। গত রবিবার রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া পৌরসভার মৌলভীরকুম এলাকায় দ্রুতগামী চাঁদের গাড়ির (জিপ) চাপায় গুরুতর আহত হয় মোটর সাইকেল আরোহী নিশু। তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে প্রেরণ করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার সকালে মারা যায় নিশু।
এদিকে মারা যাওয়ার খবরে পরিবারে থাকা বাবা, মা, চার বোনসহ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। কে কাকে সান্তনা দেবে সেই পরিস্থিতিও নেই পরিবারটিতে।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালী দৈনিক আজাদীকে বলেন, চার বোনের একমাত্র ভাই ছিল আরিফ। সবার আদরের সেই ভাই ছিল পরিবারের মধ্যমণি। তাকে নিয়ে পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল বাবা-মায়ের। কিন্তু একটি মোটর সাইকেলের কারণে আজ পুরো পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এই ঘটনা থেকে সকল পরিবারের শিক্ষা নেওয়া উচিত। কারণ সন্তান চাইলেই যে, আবদার মেটাতে হবে তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
নিহত আরিফুল ইসলাম নিশু ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। আগামী ২০২৩ সালে তার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। এই কথা বলতে বলতে চোখ মুছছিল নিশুর বন্ধু মো. নাজমুল। সে বলে- আরিফুল ইসলাম নিশু খুব ভাল বন্ধু ছিল আমাদের।
সে কয়েকদিন আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল ‘একদিন আমার সকল স্বপ্নের সমাপ্তি হবে কোন এক কবরস্থানে’, কোন একদিন আমিও চলে যাবো, এই শহরের মিথ্যে মায়া ত্যাগ করে’। নিশুর এসব স্ট্যাটাস আজ সত্যি হয়ে গেল। সেসব স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন অনেকেই।
মহাসড়কের বানিয়ারছড়াস্থ চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের ওসি মুরশেদুল আলম ভূঁইয়া জানান- মহাসড়কের মৌলভীরকুম এলাকায় মোটর সাইকেল আরোহীকে চাপা দেওয়া দ্রুতগামী জিপটি জব্দ করা হয়েছে। এই ঘটনায় মামলা রুজু করা হয়েছে থানায়।