আফগান নারী

তালিবানী শাসন ও অবদমনের দীর্ঘ ইতিহাস

রীতু পারভী | শনিবার , ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৭:১৮ পূর্বাহ্ণ

দুনিয়ায় আফগানিস্তান মনে হয় একমাত্র দেশ যেখানে বিগত শতাব্দীতে রাজা এবং রাজনীতিবিদদের ক্ষমতায় উঠা এবং নামা দুটোই প্রভাবিত হয়েছে নারী সম্পর্কিত সংগ্রাম দ্বারা। সাম্প্রতিক সময়ে তালেবান সরকার ক্ষমতায় গেলে নারী সম্পর্কিত ইস্যুটি আবার আলোচনার কেন্দ্রে অবস্থান নেয়। যুদ্ধের বৈধতা আদায়ে বিভিন্ন সময়ে পশ্চিমা সামরিক বাহিনী নারী স্বাধীনতাকে অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করেছে। আফগানিস্তানে নারীদের অবস্থার জন্য শুধু তালিবানি শাসনই দায়ী নয়, সেখানে নারী অবদমনের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস।
দেশটিতে নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান কখনোই ভাল ছিল না। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রথা, কট্টোরপন্থী গোষ্ঠীর কঠোর নিয়ন্ত্রণ দেশটির প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীদের রেখেছে প্রায় অন্ধকারে। আফগানিস্তানে নারীদের অবস্থা তাই কোনও নির্দিষ্ট আদর্শিক মতবাদের আগে বা পরের অবস্থা দিয়ে ব্যাখ্যা না করে আফগানিস্তানের ইতিহাসের দীর্ঘ প্রেক্ষাপট বিচার করা বেশি যৌক্তিক। এইরকম একটা ক্ষেত্র থেকেই কেবল আফগান নারীদের রাষ্ট্রীয় কাঠামো গঠনে আবশ্যিক অংশ হিসেবে দেখা বেশি যুক্তিযুক্ত।
আফগান নারীদের অতীত হিসেবনিকেশ করে, তা হতে শিক্ষা নিয়েই ভবিষ্যতে সমাজে তাদের অবস্থান তারা ঠিক করতে পারে। জাতি গঠনে এবং নারীদের সামগ্রিক অবস্থা পরিবর্তনে আফগানিস্তানের গ্রামীণ যে জীবন তার রয়েছে বিশাল ভূমিকা। আফগানিস্তান ভৌগলিকভাবে একটি উষর এলাকার অন্তর্ভুক্ত। বেশীরভাগ এলাকা পর্বতবেষ্টিত। জীবনযাত্রা অত্যন্ত কঠিন। আঞ্চলিক এলাকাগুলোতে আফগানিস্তানের বিভিন্ন ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মূল শেকড়প্রোথিত। শিক্ষার আলো প্রবেশ করেনি বেশীরভাগ অঞ্চলে। উষর ভূমির মতোই কঠোর এবং নির্মম এই সব ক্ষুদ্রগোষ্ঠীর নেতারা। এই গোষ্ঠীগুলোর শক্তিই আধুনিক আফগানিস্তান গঠনের সকল প্রচেষ্টার ভিত বারবার নাড়িয়ে দিয়েছে।
আফগানিস্তানের গ্রামীণ জীবনে চলে আসা যে-সামাজিক প্রথা তা নারী নির্যাতন এবং নারীর পিছিয়ে পড়ার একটা দীর্ঘসূত্র যোগ রয়েছে। সাথে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এই ক্ষুদ্রগোষ্ঠীগুলো কেন্দ্রের সাথে অর্থাৎ কাবুলের সাথে সর্বদা এক দ্বন্দ্বে জড়িত এবং তারা বেশ শক্তিশালী। এই গোষ্ঠীগুলো অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত। নারীদের সামাজিক উন্নয়নে এরাই সবচেয়ে বেশি বাঁধা হয়েছে সবসময়।
এই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে নারীদের ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীদের সার্বিক উন্নতির প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। আফগানিস্তানের গ্রাামীণ জীবনে নারীদের সমস্তকিছু নিয়ন্ত্রিত হয় পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার মাধ্যমে যেখানে আত্মীয়তার সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের মূল ভূমিকা পালন করে। বহুকাল থেকে চলে আসা প্রথা এবং ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক নারীদের নিয়ন্ত্রণের কারণে নারীদের চলাচল এবং কাজের ক্ষেত্র হয়ে পড়ে সীমাবদ্ধ। পরিবার, সমাজ আর জাতি গঠনে নারীদের কোনই ভূমিকা থাকে না। সংবিধান সংস্কার করে বারবার নারীর অবস্থান পরিবর্তনের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। কারণ পর্বতবেষ্টিত আফগানিস্তানের বিশাল এলাকা রয়ে যায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে যেখানে যুগ-যুগ ধরে চলে আসা প্রথাই নারীদের পরিচালনার মূলমন্ত্র।
আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক স্থবিরতা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা আর রাজনৈতিক অস্থিরতা নারীর সামগ্রিক অবস্থাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে। নারীরা তাদের অবস্থান পাল্টাতে এই খালি জায়গাটাকে কাজে লাগাতে পারে। আফগানিস্তানের বর্তমান যে অবস্থা সে-জায়গাটাকে ব্যবহার করে পরিবারে এবং সমাজে তাদের ভূমিকা নতুন করে আবিষ্কার করে নিয়ে নিজেদের সাথে জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের বিরাট সুযোগ তাদের সামনে।
তথ্যসূত্র : এ হিস্ট্রি অফ উইম্যান ইন আফগানিস্তান
হুমা আহমেদ ঘোষ

পূর্ববর্তী নিবন্ধজেন্ডারভিত্তিক শ্রমবিভাজন এবং কর্মজীবী নারী
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী