আফগানিস্তানকে উড়িয়ে সান্ত্বনার জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ১২ জুলাই, ২০২৩ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

টানা দুই ম্যাচে হেরে সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে গেছে আগের ম্যাচেই। গতকালের ম্যাচটি ছিল কেবলই হোয়াইট ওয়াশ এড়ানোর। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাটিতে সিরিজ জিতলেও হোয়াইট ওয়াশের স্বাদ নিতে দেয়নি বাংলাদেশ। সিরিজের শেষ ম্যাচে ঠিকই জ্বলে উঠল স্বাগতিকরা। বলা যায় আগের দুই ম্যাচে হারের শোধটা যেন একেবারে কড়ায় গন্ডায় তুলে নিল লিটন দাশের দল। বল হাতে শরীফুল, তাসকিন এবং তাইজুলদের আগুন ঝরানোর পর সে পথে যথার্থই হাঁটল ব্যাটাররা। বোলিং ও ব্যাটিং নৈপুণ্যে সান্ত্বনার ম্যাচে সহজ জয় পেল টাইগাররা।

বিশেষ করে অধিনায়ক লিটন দাশ এবং অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসানের দায়িত্বশীল ব্যাটিং বাংলাদেশকে পাইয়ে দিয়েছে স্বস্তির জয়। বিশেষ করে অধিনায়ক লিটন যেন দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। সিরিজের শেষ ম্যাচে আফগানদের ৭ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটেবলে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তবে শেষ ম্যাচে যেন দেখা গেল তার ঠিক উল্টোটা। একেবারে দারুণ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে উড়িয়ে দিল আফগানদের। টিটোয়েন্টি সিরিজের আগে যা টনিক হিসেবে কাজ করবে। গত বছরের ফেব্রুয়ারীতে হোয়াইট ওয়াশের মুখে দাঁড়িয়েছিল আফগানরা। সেদিন তারা শেষ পর্যন্ত হোয়াইট ওয়াশ এড়াতে পেরেছিল। একইভাবে এবারে বাংলাদেশ পড়েছিল হোয়াইট ওয়াশের মুখে। শেষ পর্যন্ত সেটা এড়াতে পারল বাংলাদেশ। গত বছরের শেষ ম্যাচ থেকে টানা তিন ম্যাচ জিতেছিল আফগানরা বাংলাদেশের বিপক্ষে। তবে সেটাকে আর বাড়তে দিলনা বাংলাদেশ। থামিয়ে দিল চতুর্থ ম্যাচে এসে।

টসে জিতে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তানকে শুরুটা ভালো করতে দেননি শরীফুল। মোস্তাফিজের বদলে জায়গা পাওয়া শরীফুল শুরু থেকেই আগুন ঝরান বল হাতে। নিজের দ্বিতীয় ওভারে ভাঙেন আফগানদের উদ্বোধনী জুটি। ফেরান ১ রান করা ইব্রাহিম জাদরানকে। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা জাদরান ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে। চার বল পর রহমত শাহকে ফেরান শরীফুল। এবারো ক্যাচ নিয়েছেন মুশফিক। আগের ম্যাচের আরেক সেঞ্চুরিয়ান রহমানুল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে আরো বড় ধাক্কা দেন তাসকিন।

৬ রানের বেশি করতে পারেননি এই ওপেনার। দারুণ এক ক্যাচ নেন মুশফিক। এক রান পর মোহাম্মদ নবীকে নিজের তৃতীয় শিকার বানিয়ে ফেরান শরীফুল। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি নবী। আফগানদের রান তখন ৪ উইকেটে ১৫। এরপর দলের হাল ধরেন আজমতউল্লাহ উমরজাই। কিন্তু অপর প্রান্তে থামছিলনা আসা যাওয়ার মিছিল। এবার উইকেট শিকারে যোগ দেন সাকিব আল হাসান। নাজিবুল্লাহ জাদরানকে ফেরান এলবিডব্লউ করে। অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদী চেষ্টা করেছিলেন ওমরজাই এর সাথে জুটি বেধে দলকে টেনে নিয়ে যেতে। কিন্তু তাকে সফল হতে দিলেন না সিরিজে প্রথম খেলার সুযোগ পাওয়া তাইজুল ইসলাম। আফগান অধিনায়ক ফিরলেন ৫৪ বলে ২২ রান করে। এরপর বলতে গেলে ওমরজাই একাই লড়াই করেছেন বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষে। সে সাথে দলকে বাঁচিয়েছেন বড় লজ্জার হাত থেকে। মূলত তার হাফ সেঞ্চুরির সুবাধে আফগানিস্তান সংগ্রহ করে ১২৬ রান। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। এর আগেরটি ছিল ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে করা ১৩৮ রান। একপ্রান্ত আগলে রাখা ওমরজাই ৭১ বলে ৫৬ রানের ইনিংস খেলে ফিরেন তাসকিন আহমেদের বলে। বাংলাদেশের পক্ষে ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন শরীফুল ইসলাম। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তাইজুল এবং তাসকিন আহমেদ।

১২৭ রানের সহজ লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট বাংলাদেশের। দীর্ঘ দিন পর দলে ফেরা নাঈম শেখ টানা দুই ম্যাচে ব্যর্থ। গতকালতো রানের খাতাও খুলতে পারলেন না। ফজল হক ফারুকীর বলে বোল্ড হয়ে ফিরলেন দলকে ২ রানে রেখে। সেই ফারুকীর সাথে বিবাদে জড়িয়ে মাথা গরম করা শান্ত ফিরেছেন সেই ফারুকীর পাতা ফাঁদে পা দিয়ে। ১১ রান করেন শান্ত। এরপর জুটি গড়েন সাকিব এবং অধিনায়ক লিটন। ৬১ রানের জুটি গড়েছিলেন দুজন। এ দুজনই ম্যাচটা শেষ করে আসবে তেমনটি যখন ভাবছিল সবাই তখনই অহেতুক মোহাম্মদ নবীকে উড়িয়ে মারতে গেলেন সাকিব। আর তাতেই বল উঠে যায় আকাশে।

৩৯ বলে ৩৯ রান করে থামেন সাকিব। তবে অধিনায়ক ফিরেন দলকে ম্যাচ জিতিয়ে। এরই মধ্যে নিজের দশম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। পুরো ২৬.৩ ওভার এবং ৭ উইকেট হাতে রেখে জয় নিয়ে ফিরেন লিটন। ৪টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে ৫৭ রানে অপরাজিত থাকেন লিটন দাশ। ১৮ বলে ১৯ রানে অপরাজিত ছিলেন তাওহিদ হৃদয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘বড় সূচনার প্রথম পদক্ষেপে’ বাংলাদেশ ও ভারত
পরবর্তী নিবন্ধদুই আলুর আড়ত ও ফার্মেসিকে জরিমানা