সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবিত পৌরকর আপিলে কমিয়ে দেয়ার নাম করে মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতি হচ্ছে বলে দাবি করেছে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। টাকার অংকে তা ইতোমধ্যে ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে মনে করছেন সংগঠনটির সভাপতি নুরুল আবছার। তিনি বলেন, নগরে দুই লাখের বেশি হোল্ডিং আছে। সিটি কর্পোরেশনের বক্তব্য অনুযায়ী ৩০ শতাংশ আপিল করেছে। ওই হিসেবে ৬০ হাজার হোল্ডিংয়ের বিপরীতে আপিল হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কর্পোরেশনের যারা এসেসর এবং কর আদায়কারী আছেন তারা আপিলে কমিয়ে দেয়ার নাম করে হোল্ডিং মালিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই-আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হচ্ছে। তাই আমাদের দাবি গলাকাটা হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিল করতে হবে। গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছার। দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরতে আগামী ২১ অক্টোবর কদমতলীতে গণশুনানির আয়োজন করা হবে বলে জানান সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আমির উদ্দিন। প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বর মাদারবাড়িতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নুরুল আবছার সিটি মেয়রের উদ্দেশে ‘মানহানিকর ও হুমকিমূলক’ বক্তব্য দিয়েছেন দাবি করে তার বিরুদ্ধে ২০ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোস্তফা কামাল চৌধুরী দুলাল। মামলার পর থেকে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের কোনো সভা-সমাবেশে অংশ নেননি তিনি। গত পরশু উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। সর্বশেষ গতকাল চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
নুরুল আবছার বলেন, অনেকটা দুঃখ এবং হতাশা থেকে আমার মুখ থেকে সেদিন (১৮ সেপ্টেম্বর) কিছু অপ্রিয় সত্য কথা বের হয়ে এসেছিল। এতে যদি সত্যিকার অর্থে তিনি (মেয়র) অপমানবোধ করে থাকেন, তাহলে আমি মনে করি আমি সফল হয়েছি। উনার মধ্যে একধরনের আত্মমর্যাদা বোধ জাগিয়ে তুলতে আমি সক্ষম হয়েছি। তারপরও আমার বক্তব্যের কোনো বাক্যে যদি মেয়র সাহেব মানসিকভাবে কোনো কষ্ট পেয়ে থাকেন, সে জন্য এর আগেও সুরক্ষা পরিষদের পক্ষ থেকে আমাদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমির উদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আজ আমিও আপনাদের মাধ্যমে আবারও দুঃখ প্রকাশ করছি।
দুঃখ প্রকাশ করলেও সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামবাসীর ন্যায্য আধিকার আদায়ের এই আন্দোলনে আমি যখন থেকে মাঠে নেমেছি তখন থেকেই যে কোনো ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা কারার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তাই কোনো প্রকারের হামলা-মামলা করে আমাকে নগরবাসীর ন্যায্য আধিকার প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রাম থেকে কোনোভাবেই বিরত রাখা যাবে না। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমন কোনো কর আইন থাকতে পারে না যা দ্বারা নির্ধারিত কর সে দেশের সাধারণ জনগণের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তাই এই কালো আইনের দোহাই দিয়ে চট্টগ্রামবাসীর কাছ থেকে কখনো কর আদায় করা যাবে না। যতদিন পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন তাদের এই অযৌক্তিক ট্যাক্স আদায় কার্যক্রম থেকে সরে না আসবে, ততদিন পর্যন্ত চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের কোনো নেতাকর্মী রাজপথ ছেড়ে যাবে না। আমাদের এই আন্দোলন চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নেতা এনায়েত বাজারের সাবেক কাউন্সিলর এম এ মালেক, সাজ্জাদ জাফর, আবদুল আজিজ, হাজী ইমরান, আরশাদ হোসেন, হাসান মারুফ রুমী, জান্নাতুল ফেরদৌস পপি, মুজিবুল হক, হাজী হারুনুর রশীদ, সোহেল আহমেদ ও অ্যাডভোকেট বিষুময় দে।
সাধারণত সরকারি প্রতিষ্ঠান গণশুনানি আয়োজন করে এবং এতে সমাধানও মিলে। ওই জায়গা থেকে আপনাদের গণশুনানি কতটা অর্থবহ হবে- এমন প্রশ্নে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আমির উদ্দিন বলেন, ১৫০ বছরের ইতিহাসে কর্পোরেশন গণশুনানির আয়োজন করেনি। মানুষের অভিযোগ শুনতে চায়নি। আমরা আয়োজন করছি এবং নগরবাসীকে আহ্বান জানাব তারা যে নাজেহাল হচ্ছেন তা গণশুনানিতে তুলে ধরার জন্য।
জান্নাতুল ফেরদৌস পপি বলেন, আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠান না। কিন্তু আন্দোলনকারী সংগঠন হিসেবে অনিয়মগুলো সারা দেশেরে মানুষকে জানাতে পারব। হাসান মারুফ রুমী বলেন, এসেসমেন্টের মাধ্যমে অনিয়মের গেইট খুলেছে সিটি কর্পোরেশন। শুনানিতে সেই অনিয়মের চিত্র তুলে ধরবে নগরবাসী।