আন্দোলন শেষ হয়নি, চলমান আছে : খসরু

খালেদার মুক্তির দাবিতে নগরে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৭ জুলাই, ২০২৪ at ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ

বিএনপির আন্দোলন চলমান আছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ভোট চুরি করে ডামি নির্বাচন করে কেউ যদি মনে করে, আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে অথবা বিএনপিকে নতুন করে শুরু করতে হবে, আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, আন্দোলন শেষ হয়নি, নতুন করে শুরু করার কিছু নাই। আন্দোলন চলমান আছে। আন্দোলনের ভয়ে প্রধানমন্ত্রী সকালবিকাল কি ধরনের মন্তব্য করে বুঝতে পারছেন না। কারণ ওরা জানে বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ তাদের নির্বাচন বয়কট করেছে। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাচনও বয়কট করেছে। তারা জানে ওই নির্বাচন করে কোনো লাভ হয়নি। ২৮ অক্টোবর ঢাকাতে আমাদের বিশাল জনসভা হয়। গুলি মেরে, গ্রেনেড মেরে, টিয়ারগ্যাস মেরে ২০ থেকে ৩০ লক্ষ মানুষের সে জনসভা তারা সেদিন বন্ধ করে দিয়েছে। এজন্য অনেকে বলে, আন্দোলন কি আবার তাহলে নতুন করে শুরু হবে। না, আন্দোলন চলমান আছে। ওই গুলি করে, গ্রেনেড মেরে জনসভা বন্ধ করলে আন্দোলন বন্ধ করা হয় না। ওই সভা বন্ধ করে কোন লাভ হয় নি। আবার সভা হবে, আবার মিছিল হবে, আবার লক্ষ জনতা একসঙ্গে হবে। গতকাল বিকেলে নগরের নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নূর আহম্মেদ সড়কে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিত চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, নগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সদস্য সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।

খসরু বলেন, নির্বাচনের আগে আমাদের আন্দোলন, আমাদের জনগণ ও নেতা কর্মী যত না শক্তিশালী ছিল। আজকে আমরা তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। এইবারের ধাক্কা সামলাতে পারবেন না। বলে না, চোরের ১০ দিন গৃহস্থের একদিন, সেই দিন চলে এসেছে। আজকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে, হাতে হাত মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শেখ হাসিনার রেজিমকে পরাজিত করতে হবে।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা রাস্তায় নেমেছি। যতদিন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে না, ততদিন গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না, লুটপাট অব্যাহত থাকবে। বেগম জিয়ার মুক্তির সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। অনেক হয়েছে অনেক শুনেছি, অনেক দেখেছি। আর সইবো না। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।

তিনি বলেন, যারা ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে এবং সেই মামলার মাধ্যমে জেলে পাঠানো থেকে শুরু করে যারা জড়িত সবাইকে তাদের অপরাধের শাস্তি ভোগ করতে হবে। ওরা অপরাধী, অপরাধ করেছে। বেগম জিয়া কোনো দুর্নীতি করে নাই। যে ট্রাস্টের কথা বলা হয়েছে, সেই ট্রাস্ট থেকে একটি পয়সাও বেগম খালেদা জিয়া অথবা তার পরিবারের কোন সদস্য নেয় নাই। সব টাকা ব্যাংকে জমা আছে, সুদে আসলে চার গুণ হয়েছে এখন।

খসরু বলেন, ভেবে দেখুন কত বড় অপরাধ তারা করেছে। বাংলাদেশের কোনো আইনে বেগম খালেদা জিয়ার শাস্তি হয় না। বাংলাদেশের সংবিধানে যে কথাগুলো বলা আছে সে অনুযায়ী বেগম জিয়ার শাস্তি হয় না। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ডিক্লারেশন অফ হিউম্যান রাইটসে পরিষ্কারভাবে বলা আছে এই অপরাধ কোনো দণ্ডনীয় অপরাধ নয়।

খসরু বলেন, একটা কথা আছে, অন্যায় যখন আইনে পরিণত হয়, প্রতিরোধ তখন অপরিহার্য। বাংলাদেশে কোনো বিচার আছে? নাই। যেখানে কোনো বিচার নাই, এখানে প্রতিবাদ করে কোনো লাভ আছে। তাহলে প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা সবাই প্রস্তুত, নেতা কর্মীরা কেউ হাল ছাড়ে নাই। ঘরবাড়ি ভেঙেছে, ব্যবসা হারিয়েছে, চাকরি হারিয়েছে, জীবন দিয়েছে, মামলার পর মামলা করে যাচ্ছে। পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছে, জেলে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছে। কেউ হাল ছাড়ে নাই, আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে।

তিনি বলেন, /১১ পরে সামরিক শাসন চালিত যে একটি সরকার ছিল। তারা নির্বাচন করেছে। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছিল, তাদের অন্যায় এবং রাষ্ট্র দখলের বিষয়টা মেনে নেয়ার জন্য। যেটি শেখ হাসিনা মেনে নিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া মানেন নাই। জেল কেটেছে, এখনো জেল কাটছে। আরেক স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়েই জেল কাটছেন।

তিনি বলেন, বিশ্বের ইতিহাসে গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়ে যে সমস্ত নেতা সংগ্রাম করেছে, নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, জেল জুলুমের শিকার হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আগামী দিনের গণতন্ত্রের ইতিহাসের তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। যারা ভোট কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, তারা ইতিহাসের আস্থা থেকে চলে যাবে।

খসরু বলেন, দেশ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। গতকালের পত্রিকায় দেখেছিলাম রপ্তানির ১৪ বিলিয়ন ডলার হাওয়া হয়ে গেছে। বাংলাদেশের টাকায় এক লাখ সত্তর হাজার কোটি টাকা। সেটা যদি হাওয়া হয় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিটা হাওয়া হয়ে যাওয়ার কথা। যে উন্নয়নের রাজনীতির কথা বলছে সেটা কি আর আছে। প্রবৃদ্ধি পাঁচ থেকে চার এর নিচে চলে আসবে। খরচ আর জমার মধ্যে যে ঘাটতি সেটা আরো বেড়ে যাবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক মানদণ্ড আছে প্রত্যেক কিছুই এখন তলায় নেমে এসেছে। এই কৃত্রিম আওয়ামী মার্কা অর্থনৈতিক মডেল তারা সৃষ্টি করেছে। দেশের মানুষের টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে। ব্যাংক শেয়ার বাজার খালি করে দিয়ে। মেগা প্রজেক্ট এর নামে লুটপাট করে। আজকে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। আজকে রিজার্ভে ডলার নাই। যে কারণে আজকে গ্যাস কিনতে পারছে না, তেল কিনতে পারছে না। এসবের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের মিল ফ্যাক্টরি গুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ চাকরি হারাচ্ছে। বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাচ্ছে, গ্যাস নাই, গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। যে অর্থ ছিল ব্যবসার সেই অর্থ লুটপাট করে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ডলার পাচার করে দিয়েছে।

বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, বেগম জিয়া যদি আজকে মুক্ত থাকতো তাহলে এই সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারত না। এই সরকারের যারা হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে তাদেরকে ধরা হয় না। অথচ সামান্য অজুহাতে বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী করে রেখেছে। উপমহাদেশের এই জনপ্রিয় নেত্রীকে নিয়ে আওয়ামী লীগ এখন নোংরা রাজনীতি করছে। তার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির বিরোধিতা করছে সরকার। আমরা সরকারকে আবারও আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে তাকে বিদেশে চিকিৎসা করার সুযোগ দেওয়া হোক। কারণ, তিনি গণতন্ত্রের নেত্রী।

গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, আওয়ামী লীগ আজ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গণতন্ত্রের আশপাশেও তারা নেই। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে। জনগণের কাছে তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টরকে দলীয়করণ করে রাষ্ট্রকে পঙ্গু করে ফেলেছে। শুধু ক্ষমতার জন্য তারা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ভেঙে চুরে চুরমার করে দিয়েছে। তাই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফেরাতে হলে জনগণকে জেগে ওঠতে হবে।

এস এম ফজলুল হক বলেন, গণতন্ত্র আজকে কারাগারে বন্দী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের প্রতিটি সেক্টরে লুটপাট কায়েম করেছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, গণমাধ্যমের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করেছে। এই স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য সবাইকে রাজপথে নামতে হবে।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়া এক কিংবদন্তী নারী। যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তিনি ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘির মাঠ থেকে দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও, স্লোগান শুরু করেছিলেন। আজকে তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন, আমার অধিকার, আমার দেশ, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, আজিজ বেনজীরসহ মাফিয়ারা বাংলাদেশকে খামচে ধরেছে। ওয়ান ইলাভেনের সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা রাজপথে ছিল। আবারো গণতন্ত্র ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে হবে।

মাহবুববের রহমান শামীম বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র সমার্থক। সরকার জনগণের দাবিকে অগ্রাহ্য করে একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন অব্যাহত রেখেছে। আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে।

এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূর রাখার জন্যই সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী করে রেখেছে।

আবুল হাশেম বক্কর বলেন, আজকে আমাদের দাবি একটা, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। তাকে মুক্তি দিতে হবে। তার মুক্তির জন্য রাজপথ দখলে নিতে হবে। আজকে দেশের মানুষের কোনো অধিকার নেই। গণতন্ত্রের নামে মাফিয়ার শাসন চলছে। এই মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামতে হবে।

ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সরকারের অন্যায় চাপে কখনো আপোস করেননি। তার জনপ্রিয়তাকে এই জনবিচ্ছিন্ন সরকার ভয় পায়। এ জন্যই তার ওপর এত জুলুম নির্যাতন নেমে এসেছে। তাই আমাদের শপথ নিতে হবে, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করে কেউ ঘরে ফিরে যাবো না। হারুনুর রশীদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় নেত্রী। তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না, এটা অমানবিক। এটা মানবতা বিরোধী অপরাধ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুর রহমান স্বপন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ, মো. কামরুল ইসলাম, উত্তর জেলা বিএনপির এম এ হালিম ও নুরুল আমিন, অধ্যাপক ইউনুস চৌধুরী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএ নিয়ে তিনবার কাটা হলো বাগানের গাছ