বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মালিকানা নিয়ে টানাটানি করলে শেখ হাসিনার পথে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। একইসঙ্গে একটি মহল আন্দোলন হাইজ্যাক করে নিয়ে যেতে চায় বলেও দাবি করেন তিনি। এসময় আন্দোলনকে নিয়ে দেশে বিভক্তি সৃষ্টি হোক তা চান না বলেও জানান তিনি। বলেন, আন্দোলনের নামে আজ আমরা নতুন নতুন বয়ান শুনছি। আন্দোলন ছিনতাই করে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। আন্দোলন কি হাইজ্যাক করার মতো বিষয়? আন্দোলন কি এমন জিনিস যে হাইজ্যাক করে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবেন? বয়ান দেওয়ার আগে একটু চিন্তা করে দেখবেন। আমরা এ আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই না। এ আন্দোলন বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের। তিনি গতকাল বুধবার বিকেলে নগরের ষোলশহর দুই নম্বর গেইট বিপ্লব উদ্যানের পাশে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের র্যালি পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দুই নম্বর গেট থেকে শুরু করে জিইসি মোড় হয়ে ওয়াসা মোড় পর্যন্ত শোভাযাত্রা হয়।
আমীর খসরু বলেন, তারেক রহমান সাহেব বলেছেন, বিএনপি একা আন্দোলন করেননি। দেশের সমস্ত মানুষ আন্দোলন করে আমরা এ ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করেছি। আন্দোলনের মালিকানা কেউ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। মালিকানার হিসেব যদি করতে হয়, আমরা যে হিসেব দেব আপনারা লজ্জা পাবেন। হিসেব কিন্তু দিচ্ছি না। আমরা চাই না আন্দোলনকে নিয়ে দেশে একটি বিভক্তি সৃষ্টি হোক। আমরা চাই আন্দোলনকে নিয়ে দেশে ঐক্য সৃষ্টি হোক। তিনি বলেন, আন্দোলনের মালিকানা মানে জনগণ তাদের ভোটে যাকে ইচ্ছে তাকে নির্বাচিত করবে। এটা নিয়ে কেউ খেলাধুলা করলে আবার শেখ হাসিনার পথে যেতে হবে। আপনারা ভোট না নিয়ে নতুন নতুন বয়ান সৃষ্টি করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা, এখানে কাজ করবে না। ভোটে যেতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা চাই আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ চিরজীবনের জন্য যে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করেছে তাদের প্রেতাত্মারা আর ফিরে আসতে না পারে। আন্দোলনের ঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশে আগামী দিনে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাই।
খসরু বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা নির্বাচিত সংসদের হাতে তুলে দেওয়া। এর বাইরে আর কোনো দায়িত্ব নেই। আর বাকি যে সংস্কারের গল্প শুনছেন সেটা হবে আগামী সংসদে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা আগামী দিনে যত সংস্কার প্রয়োজন সেটা করবে। বিএনপি ও আমাদের সঙ্গে যারা সঙ্গী ছিলেন এ আন্দোলনে ৩১ দফার সংস্কার সেটা আমরা বাস্তবায়ন করব। এ দায়িত্ব কারও হাতে নেই। এ দায়িত্ব নিতে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। কারণ এ দায়িত্ব আপনাদেরকে কেউ দেয়নি। তিনি বলেন, আপনাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচনি সংস্কার করে, ভোট দিয়ে জনগণের মালিকানা তাদের তাদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কোন সংস্কার হবে, কোনটা হবে না। সেটা জনগণের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে হবে। এর বাইরে কোনো সুযোগ নেই।
ছাত্রদল দীর্ঘ ১৬ বছর নির্যাতনের পরেও রাজপথে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্রদল রাস্তায় থেকে জীবন দিয়ে পঙ্গু হয়ে, মামলা খেয়ে, পালিয়ে বেড়িয়ে, ব্যবসা চাকরি হারিয়ে শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছে। এই ছাত্রদল, যারা এরশাদকে বিতাড়িত করেছে, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে গুম, খুনের শিকার হয়েও কেউ বাড়ি ফিরে যায়নি।
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান।
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ৯০ সালে ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন হয়েছিল। আর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে ছাত্রদলের শক্তিশালী ভূমিকার কারণে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামের সকল কলেজে মিছিল মিটিং করতে হবে। ছাত্রদের দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বলতে হবে। আজকে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে। তাই আমরা বলতে চাই, গণতন্ত্র এখনো পুরোপুরি উদ্ধার হয় নাই। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রদলকে রাজপথে থাকতে হবে।
ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, আন্দোলনের ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে, তখন ছাত্রদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। আর তখনই ছাত্রদলসহ সকল দল সরকার পতনে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি, ছাত্রদল, ছাত্র এবং ১৮ কোটি মানুষের নেতৃত্ব ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে।
এরশাদ উল্লাহ বলেন, ছাত্রদল বিএনপির অন্যতম শক্তি ও মনোবল। গত জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদল নেতা ওয়াসিমসহ যেসকল ছাত্রনেতা নিহত হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। ফ্যাসিবাদী শাসনামলে ছাত্রলীগের অপকর্মের কারণে বর্তমান সরকার তাদের নিষিদ্ধ করেছে। আমরা চাই ছাত্রদল দেশের সুষ্ঠু রাজনীতি ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নাজিমুর রহমান বলেন, বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনা ছাত্র রাজনীতিকে যে পথে পরিচালিত করেছে তা কখনোই ছাত্ররাজনীতি ছিল না। এটা ছিল একটি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল। তাই বর্তমান সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে। তাদের রাজনীতি করার অধিকার এই বাংলাদেশে নেই। ছাত্রদল নেতৃবৃন্দকে বলতে চাই, আমরা এমন কোনো কর্মকাণ্ড না করি, যেন শেখ হাসিনার মতো আমাদেরকে পালিয়ে যেতে না হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিনের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম তানভীর, সামিয়াত আমিন চৌধুরী জিসান, মাস্টার আরিফ, জহির উদ্দিন বাবর, আরিফুর রহমান মিঠু, শহিদুল ইসলাম সুমন, সাব্বির আহমেদ, এম এ হাসান বাপ্পা, খন্দকার রাজীবুল হক বাপ্পী, মাহমুদুর রহমান বাবু, ইসমাইল হোসেন, মো. আনাছ, জাহেদ হোসেন খান জসি, নুর নবী মহররম, নুর জাফর নাঈম রাহুল, ফখরুল ইসলাম শাহীন, সদস্য নজরুল ইসলাম, মো. শামসুদ্দীন, ইমরান হোসেন বাপ্পী, আবু কাউছার, আল মামুন সাদ্দাম, দেলোয়ার হোসেন শিশির, কামরুল হাসান আকাশ, এনামুল হক, আব্বাস উদ্দিন।