আন্দোলনের মুখে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ

চসিকের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অস্থায়ী কর্মচারী

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২০ মে, ২০২১ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অস্থায়ী কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে বেতন বৃদ্ধি সম্পর্কিত গঠিত কমিটি। গতকাল সকালে টাইগারপাসস্থ অস্থায়ী নগর ভবনে কমিটির সভা হয়েছে। এতে ৩য় শ্রেণির ৩০ শতাংশ এবং ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন ২৭ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া প্রতি বছর তাদের ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দেয়ারও প্রস্তাব করে কমিটি। আগামী জুলাই মাস থেকে বর্ধিত হারে বেতন পাবেন শ্রমিকরা। অবশ্য বৃদ্ধির পরও সরকার নির্ধারিত বেতনের চেয়ে চার হাজার টাকা কম পাবে বলে দাবি করেছেন তারা। এদিকে সভা চলাকালে নগর ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। এর আগে গত ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়নি। পরবর্তীতে ৯ মে সভার তারিখ থাকলেও তা স্থগিত করা হয়। ফলে তৃতীয় সভা নিয়ে আস্থাহীনতা তৈরি হয়। পরে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশের সিদ্ধান্তের খবর জানাজানি হলে তারা সেখান থেকে চলে যান। চসিকে বর্তমানে জনবল আছে ৯ হাজার ২৮৯ জন। এর মধ্যে স্থায়ী ২ হাজার ৯৬২ ও অস্থায়ী ৬ হাজার ৩২৮ জন। অস্থায়ীদের মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আছেন সাড়ে ৪ হাজার ২১৮ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নিয়মিত দক্ষ শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৬০০ টাকা এবং অনিয়মিত দক্ষ শ্রমিকের মজুরি ৫৭৫ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। সে হিসেবে একজন শ্রমিক মাসে ১৭ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ১৮ হাজার টাকা বেতন পাওয়ার কথা। চট্টগ্রাম ওয়াসা, রেলওয়েসহ অন্যান্য সরকারি দপ্তরে সেটা কার্যকর করা হয়। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনে সেটা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এতে ক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা বিভিন্ন সময় আন্দোলনও করেন।
চসিকের সচিবালয় শাখা সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির তৃতীয় শ্রেণির শ্রমিকরা ৪৩৬ টাকা এবং চতুর্থ শ্রেণির শ্রমিকরা ৩৫৭ টাকা করে বেতন পেয়ে আসছিলেন। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত বেতনের চেয়ে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৯২০ টাকা কম বেতন পায় চসিকে কর্মরত শ্রমিকরা। এরই মধ্যে গত এপ্রিল মাস থেকে চতুর্থ শ্রেণির কিছু শ্রমিকের বেতন দৈনিক ৯৫ টাকা করে বাড়ানো হয়। অর্থাৎ ৩৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫২ টাকা করা হয়। বর্তমানে ৩ হাজার ২৩২ জন ৪৫২ টাকা এবং ৯৮৮ জন ৩৫৭ টাকা করে বেতন পান। যা সরকার নির্ধারিত বেতনের চেয়েও কম।
এদিকে এপ্রিল মাসে যেসব শ্রমিকের বেতন বাড়ানা হয়নি তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির যাদের বেতন বাড়ানো হয়েছে তাদের বেতন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের চেয়ে বেড়ে যায়। কারণ বর্ধিত বেতনে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা ৩৫২ টাকা পেলেও তৃতীয় শ্রেণির শ্রমিকদের বেতন ৪৩৬ টাকা বহাল থাকে। ফলে পদাধিকার বলে এগিয়ে থাকলেও বেতন কম পাওয়ায় বৈষম্যের দাবি করে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা আপত্তি জানান। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে ডোর টু ডোর প্রকল্পে কর্মরত অনেকের বেতন একই শ্রেণির অন্য কর্মচারীর চেয়ে বেশি ছিল। সেটা নিয়েও আপত্তি উঠে।
এ বিষয়ে চসিকের কর্মচারী বুলবুল আহমেদ আজাদীকে বলেন, ১৮ বছর ধরে চাকরি করছি। বর্তমানে আমার বেতন মাত্র ১০ হাজার ৭০০ টাকা। অথচ পরিচ্ছন্ন বিভাগের ডোর টু ডোর শ্রমিকদের চাকরির বয়স মাত্র তিন বছর। তাদের বেতন ১৪ হাজার টাকা। একই সমস্যা শিক্ষা বিভাগেও আছে। কিন্তু আমাদের অপরাধটা কী তাও জানি না। আমাদের দাবি হলো, সরকার নির্ধারিত বেতন বাস্তবায়ন করা হোক। তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারী বলেন, আমার বেতন মাত্র ১৩ হাজার ৮০ টাকা। অথচ চতুর্থ শ্রেণির অনেকের বেতন আমার চেয়ে বেশি।
এদিকে বৈষম্য নিরসনে গত এপ্রিল মাসে চসিকের সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল ওই কমিটির সভা হয়েছে। কমিটির সদস্য ও চসিকের সিবিএ সভাপতি ফরিদ আহমদ আজাদীকে বলেন, আমরা ৩০ ও ২৭ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করেছি। আশা করছি কর্তৃপক্ষ সেটা বাস্তবায়ন করবে।
বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনের নেতা চসিক চালক ঐক্য পরিষদের অর্থ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ১৫ থেকে ২৮ বছর যাবত আমাদেরকে স্থায়ী করা হচ্ছে না। তার উপর আমাদের সরকারের বর্ধিত বেতন পর্যন্ত দিচ্ছে না। এতে দৈনন্দিন জীবন যাপন করতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। আজকের (গতকাল) সভায় আমাদের বেতন বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা সরকারের বর্ধিত নায্য বেতন থেকে চার হাজার টাকা কম। এর কারণ হিসেবে তারা অর্থ সংকটের কথা বলছে। আমরা শ্রমিক কর্মচারীরা আগামী অর্থ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারপর আমরা নতুন করে আনদোলন করার সিদ্ধান্ত নিব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাবাই ভাড়াটে খুনি দিয়ে নিজের সন্তানকে হত্যা করেন
পরবর্তী নিবন্ধক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ে নতুন গতি