চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ৩২নং আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে এবারও নির্বাচন করছেন বিগত তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী। এবার তার নির্বাচনী প্রতীক মিষ্টি কুমড়া। চলমান প্রচারণায় প্রতীক নিয়ে তিনি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। নির্বাচন নিয়ে দৈনিক আজাদীকে নিজের ভাবনার কথা জানাতে গিয়ে বললেন, ‘এবার নির্বাচিত হলে সর্বপ্রথম আন্দকিল্লার ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে উদ্যোগ নেব।’
আজাদী : আবার নির্বাচিত হলে এলাকাবাসীর জন্য কী কী করবেন বলে ভাবছেন?
জহরলাল হাজারী : পর্যটন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি আগামীবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হলে আন্দরকিল্লার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে তুলে ধরার উদ্যোগ নেব। যাতে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা এখানে আসেন। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে আন্দরকিল্লায় তিনটি কিল্লা তৈরি করব। সিটি কর্পোরেশনের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনে প্রণোদনা দিয়ে এবং ট্যাক্স কমিয়ে হলেও সবগুলো ভবনকে যাতে একই রঙের করা যায় সেই চেষ্টা করব। লালদীঘি এলাকায় প্রতি বছর যে বৈশাখী মেলা বসে আমি চেষ্টা করছি সেটিকে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার। আমার পরিকল্পনা রয়েছে আমার এলাকার লালদীঘি, ডিসি হিল সহ বিভিন্ন পার্ককে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়ভাবে সাজিয়ে তোলার।
আজাদী : এলাকাবাসীর জন্য কী কী করেছেন?
জহরলাল : আমি তিন মেয়াদে আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের উন্নয়নে শতভাগ কাজ করেছি। আমার এলাকায় কোনো জলাবদ্ধতা নেই। তারপরও আমি এলাকায় একটি মাস্টারড্রেনের কাজ সমাপ্ত করেছি। সেইসাথে ফুটপাতগুলোতে টাইলস বসিয়ে পথচারী চলাচলের উপযোগী করেছি। সবগুলো সড়কে পর্যাপ্ত আলোকায়নের ব্যবস্থা করেছি। সড়কের আইল্যান্ডগুলোকে গাছ দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়েছি। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও গুণীজনদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে লালদীঘিকে দৃষ্টিনন্দনভাবে গড়ে তুলেছি। এখানে তৈরি করা হয়েছে ওয়াকওয়ে, ম্যুরাল, ছয় দফা মঞ্চ। শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য বড় পর্দার টেলিভিশনে কার্টুন ছবি সহ প্রচার করা হবে বিশ্বকাপের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খেলা।
আজাদী : শিক্ষা, সংস্কৃতির জন্য আপনার কর্মকাণ্ড?
জহরলাল হাজারী : আমাদের এলাকায় দু’টি পাঠাগার আছে। এসব পাঠাগারে বিভিন্ন সময় আমরা কবিতা পাঠের আসর, গুণীজন সংবর্ধনা ইত্যাদির আয়োজন করে থাকি যাতে শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ জ্ঞানার্জনে আগ্রহী হয়। মুসলিম হলের উন্নয়ন চলছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকেও নান্দনিকভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ আছে। ইচ্ছে আছে এলাকায় পুরনো বইয়ের একটি ‘বুক ব্যাংক’ করার। যেখানে মানুষ পুরনো বই দান করলে দরিদ্র শিক্ষার্থী বা অন্যরা সে বই পড়ে উপকৃত হবে।
আজাদী : মাদক, সন্ত্রাস দূর ও তরুণ-যুবকদের জন্য আপনার ভূমিকা কী ছিল ?
জহরলাল হাজারী : আমি যতবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি কোনোবারেই কিশোরদের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করিনি, সন্ত্রাসকে লালন করিনি। সবসময় মাদকবিরোধী সচেতনমূলক কাজ করেছি। এলাকার তরুণ-যুবকদের নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড যেমন রক্তদান কর্মসূচি, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদির আয়োজন করেছি যাতে তারা মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি থেকে দূরে থাকে। এছাড়া ওয়ার্ডে কম্পিউটার ও সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে নারীরা বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ পান। পরে তাদের সেলাই মেশিন কিনে দিয়ে স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করেছি। নির্বাচিত হলে দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে যুবকদের জন্য প্রতি তিন মাস পর পর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব।
অনেকেই অভিযোগ করেন যে হকারদের জন্য রাস্তায় চলাচলে সমস্যা হয়। কিন্তু আমি বলব, তারাও আমাদের সমাজেরই অংশ, তাদেরও জীবিকা অর্জন করে পরিবার চালাতে হয়। ভবিষ্যতে তারা যাতে পথচারীদের সমস্যা না করে ব্যবসা করে আয় করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করব। এ ওয়ার্ডের কাটা পাহাড় এলাকায় সাপ্তাহিক একটি উদ্যোক্তা হাট বসানোর চিন্তা-ভাবনা আছে। যেখানে তরুণ উদ্যোক্তারা তাদের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বিপণন করতে পারবে।
আজাদী : নির্বাচনে জয়লাভের ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
জহরলাল হাজারী : আমি গত তিনবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি এ ওয়ার্ড থেকে। দল, মত নির্বিশেষে এ ওয়ার্ডের অধিবাসীদের সাথে আমার একটি সুসম্পর্ক আছে। সাধারণ সময়ের মতো করোনাকালীন দুর্যোগেও আমি সবসময় তাদের পাশে ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকব। তাই আমি মনে করি মানুষ আমাকে মিষ্টি কুমড়া প্রতীকে আবারও ভোট দিয়ে চতুর্থবারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত করবেন।