আন্তর্জাতিক সমালোচনা প্রত্যাখ্যান ইসরায়েলের

গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা

| রবিবার , ১০ আগস্ট, ২০২৫ at ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ

গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা নিয়ে জাতিসংঘ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েও পিছু হটছে না ইসরায়েল। বরং নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত পরিকল্পনাকে আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, নিন্দা বা নিষেধাজ্ঞার হুমকি কোনোভাবেই তাদের সংকল্প দুর্বল করতে পারবে না। আমাদের শত্রুরা আমাদেরকে একটি দৃঢ়, শক্তিশালী মুষ্টি হিসেবে পাবে যা প্রবল শক্তি নিয়ে তাদের ওপর আঘাত হানবে, তিনি এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা যুদ্ধ শেষ করার পাঁচটি মূলনীতি অনুমোদন করেছে তার মধ্যে আছেহামাসকে নিরস্ত্র করা, জীবিতমৃত সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা, গাজার অসামরিকীকরণ নিশ্চিত করা, গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং হামাস বা ফিলিস্তিন (পিএ) কর্তৃপক্ষ ছাড়া বিকল্প কোনো বেসামরিক সরকার গঠন। খবর বিডিনিউজের।

ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলোর তথ্য বলছে, নিরাপত্তা পরিষদ গাজা দখলের যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তাতে প্রাথমিকভাবে পুরো গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দিকেই মনোযোগ দেওয়া হবে, সেখানকার আনুমানিক ১০ লাখ বাসিন্দাকে আরও দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি মধ্য গাজার শরণার্থী শিবির এবং যেসব এলাকায় জিম্মিরা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেগুলোও সেনা নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। কয়েক সপ্তাহ পর মানবিক সহায়তা জোরদারের পাশাপাশি দ্বিতীয় আরেকটি সামরিক অভিযান হবে।

এসব পরিকল্পনা ইসরায়েলের ভেতরেও তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সামরিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গাজায় আটক জিম্মিদের পরিবারের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে এখনও জীবিত আছে বলে ধারণা করা ২০ ইসরায়েলি জিম্মির জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। হোস্টেজেস ফ্যামিলিস ফোরাম বলছে, এ সিদ্ধান্ত জিম্মি ও আমাদের সৈন্যদের এক মহাবিপর্যয়ের পথে নিয়ে যাচ্ছে। হামাস গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনাকে নতুন যুদ্ধাপরাধ আখ্যা দিয়ে সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলকে এ জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।

শুক্রবার যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের পরিকল্পনাটি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এটি এমনিতেই বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে থাকা গাজার অবস্থা আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক সতর্ক করে বলেছেন, সংঘাত আরও বাড়লে বৃহৎ মাত্রায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, আরও প্রাণহানি, অসহনীয় দুর্ভোগ, নির্বিচারে ধ্বংসযজ্ঞ এবং নৃশংসতা ঘটবে। গাজায় ব্যবহৃত হতে পারে এ শঙ্কায় জার্মানি এরই মধ্যে ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠানো স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, জার্মানির এই সিদ্ধান্ত হামাসের সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল সর্বাত্মক যুদ্ধে নামে। তাদের নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬১ হাজার ১৫৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটিয়ায় এনামের নেতৃত্বে বিজয় মিছিল
পরবর্তী নিবন্ধপরমাণু যুদ্ধ নিয়ে সতর্ক করলেন নাগাসাকির মেয়র