আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে এফবিআইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার বৈঠক করবে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ কথা বলেন। খবর বিডিনিউজের।
শফিকুল বলেন, টাকা যেভাবে হোক ফেরত আনার চেষ্টা করব। সেই অনুযায়ী ১০ ডিসেম্বর থেকে অনেকগুলো কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে। এফবিআইসহ আন্তর্জাতিক যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদের সঙ্গে অনেক ধরনের বৈঠক হচ্ছে, কথা হবে। আমাদের পুরো ফোকাস থাকবে টাকাটা কীভাবে ফেরত আনা যায়।
টাকা নেওয়া সহজ হলেও ফেরত আনার বিষয়ে আইনি দিক দেখতে হয়, কোথায় টাকা চলে গেছে তা নিশ্চিত হতে হয় বলেও মন্তব্য করেন প্রেস সচিব। বলেন, এটার জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান আছে। তাদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে, পরামর্শ নিচ্ছি। কীভাবে টাকা ফেরত আনা যায়। টাকা ফেরত আনা কষ্টসাধ্য কাজ। এটা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের একটা।
আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রস্তুত কমিটির প্রতিবেদন দেখে মুহাম্মদ ইউনূস ‘আতঙ্কিত’ হয়েছেন বলেও জানান প্রেস সচিব। অফিসিয়াল তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, না হলে সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তবে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানুষের টাকা কীভাবে লুটপাট হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে ফোকলা করে দেওয়া হয়েছে তার পুরো চিত্র পাওয়া যাবে।
শফিকুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন এটা রক্ত হিম করার মতো অবস্থা। বাংলাদেশের জনগণের ট্যাঙের টাকা এটা। দেশের অনেক গরিব মানুষের টাকা এরা লুটপাট করেছে।
লুটপাটকারী খুব বেশি নয় মন্তব্য করে প্রেস সচিব বলেন, সেখান রাজনৈতিক ব্যক্তি, আমলা, অলিগার্ক কিছু ব্যবসায়ী ছিলেন। তাদের যোগসাজশে এ টাকা পাচার হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মন্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, উনি অনেক বীরত্বের সঙ্গে বলেছিলেন তার পিয়নও চারশ কোটি টাকা বানিয়েছে। ১৫ বছরের লুটপাটের বিচার করা সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, হাজার হাজার লোককে খুন ও গুম করা হয়েছে। সেটার বিচার হবেই। কিন্তু যারা দেশকে ভয়ানক রকমের লন্ডভন্ড অবস্থায় রেখে গেছে, মহাচুরি করেছে, তাদের কোনো ছাড় হবে না। এটার জন্য তথ্য–প্রমাণ সংগ্রহ করেই মামলা করা হবে। কিছু কিছু মামলায় গ্রেপ্তারও হয়েছেন।
শিগগিরই দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হবে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, কারা কারা চুরিতে জড়িত ছিলেন, তা বের করতে তারা খুব দ্রুতই কাজ শুরু করবেন। মেগা প্রকল্পে বড় দুর্নীতি হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেলের উদাহরণই ধরুন। পুরো প্রকল্পটাই সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সংসদীয় এলাকায় যাওয়ার জন্যই করা হয়েছে। সেখানে সাড়ে চারশ কোটি টাকা দিয়ে প্রাসাদ (সাত তারকা হোটেল) তৈরি করেছেন। কিন্তু সেখানে যাবেই বা কে? সবই ট্যাঙের টাকায়। এখন মেইনটেইন্যান্স খরচ ওঠানো যাচ্ছে না। অথচ এই চুরিটা আমাদের চোখের সামনেই হয়েছে।
দ্রব্য মূল্যের মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় আনতে সরকার ধারাবাহিক বৈঠক করছে বলে জানান প্রেস সচিব। সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে ব্যাংককে সহায়তা দেওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে কিনা–এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এতে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়বে না। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক মাস আগেও ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাপানো হয়েছিল। ওই টাকা ছাপানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল এস আলমকে টাকা পাচারে সাহায্য করা। সরকার কিছু ব্যাংককে সহায়তার জন্য টাকা ছাপিয়েছে। এটা বিধি মেনেই করা হয়েছে।