আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরের প্রয়াস বাস্তবায়িত হোক

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

| রবিবার , ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করার প্রয়াস নিয়েছেন। এ লক্ষ্যে নেওয়া পরিকল্পনাগুলো আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে সম্পন্নের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। গত ২৫ ডিসেম্বর বুধবার পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ট্যুরিস্টদের বিনোদন সুবিধা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন সিটি মেয়র। এদিন তিনি বিচের ১০টি স্পটে বর্জ্যের বিন স্থাপন এবং সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন। এছাড়া নারী ট্যুরিস্টদের জন্য টয়লেট নির্মাণের এবং বিচ আলোকায়নের ঘোষণা দেন তিনি। সিটি মেয়র বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে আন্তর্জাতিক মানের ট্যুরিস্ট স্পটে রূপান্তর করতে কাজ করছি। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার রাখতে আমরা ১০টি স্পটে বর্জ্যের বিন স্থাপন করেছি, যাতে ময়লাআবর্জনা যেখানেসেখানে না পড়ে এবং এলাকার সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন থাকে। ধারাবাহিকভাবে পুরো সৈকত এলাকাতে পরিচ্ছন্ন রাখতে বিন স্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি গণসচেতনতা কার্যক্রমও আয়োজন করেছি। সৈকত এলাকাটি আগে সন্ধ্যার পরে অন্ধকার হয়ে যেত। আমরা সেই সমস্যা সমাধানে লাইটিং ব্যবস্থা উন্নত করেছি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই নতুন লাইটিং সুবিধা চালু করব। পর্যটকদের আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা গ্রিন প্লান্টেশন বা বনায়ন ও সবুজায়ন এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করছি। বসার জায়গাগুলো রঙিন করা হয়েছে, যাতে এগুলো আরও দৃষ্টিনন্দন হয়।

আসলে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম শহরের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। ওপারে সুন্দর প্রকৃতি পরিবেষ্টিত মেরিন একাডেমি। কর্ণফুলী নদীর মোহনায় সৃষ্টি হয়েছে মায়ার এই পর্যটন কেন্দ্র। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ঘাঁটি বিএনএস ঈসা খান পতেঙ্গার একেবারে সন্নিকটে অবস্থিত। পতেঙ্গা সৈকতে যাওয়ার পথে নৌবাহিনীর গল্ফ ক্লাব ও পাশের বোট ক্লাব পর্যটকদের চাহিদা মেটায়। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের অনেক জেটি এখানে অবস্থিত। এখানে বসে পর্যটকদের মিলনমেলা। ইতোমধ্যে এই সৈকত ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ফলে বিকেল নামার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমায় এই সমুদ্র সৈকতে।

নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আদলে সাজানোর পরিকল্পনা করেছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এ জন্য পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছিল। আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, সমুদ্র সৈকত এলাকায় ব্যবসা, আলোকচিত্র, সিসি ক্যামেরা, খাবারের মূল্য নির্ধারণ, ফুটওভার ব্রিজসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করার পরিকল্পনা। বলা হয়েছে, চাঁদাবাজি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে, আনা হবে স্বচ্ছতা। পর্যটনকেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন ও পর্যটকবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উপকমিটিও গঠন করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, মাস্টারপ্ল্যানের আদলে চট্টগ্রামের পর্যটনকেন্দ্রগুলো সাজানো হবে।

আমরা সিটি মেয়র ডা. শাহাদাতের কথায় আশ্বস্ত হলাম। আগে নেওয়া পরিকল্পনার সঙ্গে তাঁর ভাবনার তেমন ফাঁরাক নেই। সিটি মেয়র বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো এই এলাকাটিকে আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। এখানে পার্কিং এরিয়া, রেস্টুরেন্ট ও বিভিন্ন রিসোর্ট থাকবে। এটি স্থানীয় জনগণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং একটি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। তবে নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি সবাইকে অনুরোধ করছি, যেন বিনলাইটসহ চসিক থেকে যেসব সুবিধা দেয়া হবে সেগুলো যেন রক্ষা করা হয়। লাইট ও অন্যান্য জিনিস যাতে চুরি না হয়, সেজন্য টুরিস্ট পুলিশ ও সিকিউরিটি সার্বক্ষণিক কাজ করছে। আমরা পতেঙ্গা এলাকায় একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করেছি, যা দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সহায়ক হবে। আমাদের এই উদ্যোগগুলোকে সাফল্যমণ্ডিত করতে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের সর্বশেষ উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র, যেখানে মানুষ অবসর সময়ে গিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারে। প্রকৃতির দানে গড়ে ওঠা এই সম্পদ, কোনো ব্যক্তি বিশেষের তৈরি নয়। চট্টগ্রাম শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত যেসব স্থান ছিল উন্নয়নের নামে প্রায় সবগুলো একে একে ধ্বংস করা হয়েছে। ফয়েস লেককে বেসরকারি খাতে ইজারা দিয়ে তা সর্বসাধারণের জন্য অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। তাঁরা বলেন, চট্টগ্রাম শহরে এখন মানুষের ঘুরে বেড়ানোর জন্য এক টুকরো উন্মুক্ত প্রান্তর আর অবশিষ্ট নেই। একমাত্র পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতই পুরো চট্টগ্রামের সম্বল। তাই এর উন্নয়ন ও বহুমুখীকরণ জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে