আন্তর্জাতিক মানের উচ্চ শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও অঙ্গীকার নিয়ে ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। এর প্রতিষ্ঠাতা প্রাক্তন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। শুরুতে ২টি অনুষদের অধীনে ৩টি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ৬টি অনুষদের অধীনে ১৩টি বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নগরীর প্রবর্তক মোড়ের দুটি ভবন ছাড়াও দামপাড়া, হাজারি লেইন, জিইসি মোড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিশাল ও সুদৃশ্য ভবন রয়েছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসের সব শর্ত পূরণ করায় প্রতিটি ভবনকে অনুমোদিত স্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউজিসি। ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রথম স্থায়ী সনদ পায় প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩টি বিভাগের অধীনে প্রোগ্রামগুলো হলো– ১. ব্যাচেলর অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) ২. ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ৩. ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ইলেক্ট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ৪. ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ৫. ব্যাচেলর অব সায়েন্স (অনার্স) ইন ম্যাথমেটিক্স ৬. বিএসসি (অনার্স) ইন কেমিস্ট্রি ৭. ব্যাচেলর অব আর্টস (অনার্স) ইন ইংলিশ ৮. ব্যাচেলর অব সোশ্যাল সায়েন্স ইন ইকোনোমিক্স ৯. বিএসএস (অনার্স) ইন স্যোশিওলজি এন্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ১০. ব্যাচেলর অব আর্টস ইন ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড টেকনোলজি ১১. বিএ (অনার্স) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ১২. ব্যাচেলর অব ল’স এলএলবি (অনার্স) ১৩. মাস্টার অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ)-রেগুলার ১৪. মাস্টার অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ)-এক্সিকিউটিভ ১৫. মাস্টার অব আর্টস ইন ইংলিশ ১৬. মাস্টার অব সোশ্যাল সায়েন্স ইন ইকোনোমিক্স ১৭. এমএসএস ইন স্যোশিওলজি এন্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ১৮. মাস্টার অব ল’স (এলএলএম) ১৯. এমএসসি ইন ম্যাথমেটিক্স ২০. মাস্টার্স অব পাবলিক হেলথ।
এছাড়াও কয়েকটি ডিপ্লোমা এন্ড সার্টিফিকেট কোর্সও রয়েছে। এসব কোর্সের মধ্যে রয়েছে– ১. পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন লাইব্রেরি এন্ড ইনফরমেশন সায়েন্স ২. সিসকো সার্টিফাইড নেটওয়ার্ক অ্যাসোসিয়েটস (সিসিএনএ) ৩. আইওটি এন্ড ডাটা অ্যানালাইটিকস ৪. অ্যামাজন ওয়েভ সার্ভিস (এডব্লিউএস) ক্লাউড ফাউন্ডেশন ৫. ফ্যাশন ডিজাইন ৬. ফ্যাশন মার্চেন্ডাইজিং ৭. অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং ৮. চীনা (মান্দারিন) ও জাপানি ভাষা শিক্ষা কোর্স।
সবমিলিয়ে প্রায় ৮,০০০ শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাদানে বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে আড়াইশ শিক্ষক। এর মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষক আছেন দুইশ জন। আর অতিথি শিক্ষক ৫০ জন।
শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই দেশ–বিদেশে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বেশ কয়েকজন শিক্ষক এখন শিক্ষাছুটি নিয়ে দেশে–বিদেশে পিএইচডি গবেষণারত আছেন। এছাড়াও কয়েকজন শিক্ষক ইউজিসি স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি গবেষণা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের দাবি– এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উন্নতমানের যুগোপযোগী শিক্ষা অর্জন করতে পারছে। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা পাশ করে বেরিয়ে যাওয়ার পর দেশে–বিদেশে যোগ্য ও উচ্চ পদে সমাসীন হচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দক্ষ শিক্ষকদের কাছে শিক্ষা অর্জনের সুবিধা ছাড়াও এই শিক্ষা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হিসেবে লাইব্রেরি, ওয়াইফাই (ডরভর), অডিটোরিয়াম এবং এসি সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। এছাড়া প্রশাসনিক ভবন এবং বিভাগগুলোর শিক্ষকবৃন্দ ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ব্যবহারের জন্য ৫ শতাধিক কম্পিউটার রয়েছে। ক্লাসরুমে ব্যবহারের জন্য ১০০টি প্রজেক্টর রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দামপাড়াস্থ ক্যাম্পাসে স্থাপন করা হয়েছে সুপরিসর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। এছাড়াও আইন বিভাগ, ইংরেজি বিভাগ, ব্যবসা–শিক্ষা অনুষদ ও অর্থনীতি বিভাগে আরো চারটি সেমিনার লাইব্রেরি রয়েছে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও ওয়াইফাই (Wifi) আওতাভুক্ত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও সেমিনার লাইব্রেরিসমূহের কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করা হয়। বর্তমানে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও সেমিনার লাইব্রেরিগুলোতে প্রায় ২৮,২০০ বই, ২৫০০ মুদ্রিত জার্নাল এবং ৭৫০ অডিও ভিজ্যুয়াল শিক্ষাসামগ্রী আছে।
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির এই লাইব্রেরি এখন ইউজিসি ডিজিটাল লাইব্রেরি এবং লাইব্রেরি কনসোর্টিয়াম অব বাংলাদেশ–এর সদস্য। এই লাইব্রেরির জন্য অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, ইবাসকোসহ আরো অনেক পৃথিবীর বিখ্যাত পাবলিশার্সের ই–জার্নালে একসেস সুবিধা আছে। একারণে ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের পক্ষে লক্ষাধিক ই–জার্নাল ও ই–বুকে পড়ার এবং ডাউনলোড করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে যোগ্যতা সাপেক্ষে মেরিট স্কলারশীপ ছাড়াও দরিদ্র অথচ মেধাবী এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটা–সহ বিভিন্ন কোটায় প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত ওয়েভার প্রদান করা হয়ে থাকে।
কেবল জ্ঞান দানেই সীমাবদ্ধ নয়, জ্ঞান সৃষ্টিও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন।
উপাচার্য বলেন, মানসম্মত উচ্চ শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ক্রীড়া ও বিজ্ঞানসহ সমসাময়িক বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার লক্ষ্যে নিয়মিত আলোচনা অনুষ্ঠান, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে কর্পোরেট কর্মকর্তারা এসে সেমিনার ও কর্মশালার মাধ্যমে নিয়মিত তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গাইডেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে এদেশের আর্থ–সামাজিক প্রেক্ষাপটে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করাও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য বলে অভিমত উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন।
লেখক : স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক আজাদী