আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন মাহমুদউল্লাহ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ১৩ মার্চ, ২০২৫ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

কদিন আগেই ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। সেই রেশ মিলিয়ে যেতে না যেতেই দেশের ক্রিকেটে আরেকটি প্রস্থান পর্ব দেখলো ক্রিকেটপ্রেমীরা। এবার অবসরের ঘোষণা দিলেন তার ভায়রা ভাই মাহমুদউল্লাহ। টেস্ট ও টিটোয়েন্টি ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি আগেই। খেলছিলেন ওয়ানডে ক্রিকেট। সম্প্রতি শেষ হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন এই ব্যাটিং কিংবদন্তী। এবার সেই ওয়ানডেকেও বিদায় বলে দিলেন তিনি। এতে করে শেষ হয়ে গেল তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অধ্যায়।

সামাজিক মাধ্যমে গতকাল বুধবার রাতে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানান ৩৯ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। যেখানে তিনি লিখেন, সকল প্রশংসা কেবল সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার সকল সতীর্থ, কোচ এবং বিশেষ করে আমার ভক্তদের ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা সবসময় আমাকে সমর্থন দিয়েছে। বিশেষ ধন্যবাদ দিতে চাই, আমার মাবাবাকে, আমার শ্বশুরকে এবং আমার ভাই এমদাদউল্লাহকে, যে একজন কোচ এবং পরামর্শক হিসেবে শৈশব থেকেই আমার পাশে ছিল। তার বিদায়ী বার্তায় আছে স্ত্রীসন্তানদের কথাও। সবশেষে, ধন্যবাদ আমার স্ত্রী ও সন্তানদের, যে কোনো পরিস্থিতিতে সবসময় যারা আমার সাপোর্ট সিস্টেম হয়ে ছিল। আমি জানি, রাইদ (মাহমুদউল্লাহর ছেলে) আমাকে লালসবুজের জার্সিতে মিস করবে।

সমৃদ্ধ এক আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষটা মাঠ থেকে না হওয়া যেকোনো ক্রিকেটারের জন্যই কিছুটা হলেও কষ্টের। মাহমুদউল্লাহরও সেই আক্ষেপ নিশ্চয়ই থাকবে। তিনি লিখেছেন, ‘সবকিছুর শেষটা হয়তো সুন্দর হয় না কিন্তু আপনাকে মেনে নিতে হয় এবং এগিয়ে যেতে হয়। শান্তিআলহামদুলিল্লাহ। আমার দল এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য শুভকামনা।’

এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে দারুণ ফর্মে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ফিফটি করেছিলেন টানা চার ম্যাচে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথম ম্যাচটি খেলতে পারেননি চোটের কারণে। দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নেমে ৪ রান করে তিনি আউট হয়ে যান বাজে শটে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর মুশফিকের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর ভবিষ্যৎ নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছিল।

আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপ আড়াই বছর পর। ততদিনে তার বয়স থাকবে ৪২ এর কাছাকাছি। সম্প্রতি বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীনের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছিল। গত সোমবার বিসিবির এই বছরের কেন্দ্রীয় চুক্তি ঘোষণার সময় জানানো হয়, তিনি নিজে থেকেই বোর্ডকে অনুরোধ করেছিলেন চুক্তিতে তাকে না রাখতে। তার ভবিষ্যৎ অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায় তখনই। সেটিরই ধারাবাহিকতা এই আনুষ্ঠানিক বিদায়। তবে বিদায়টা যে মনের মতো হয়নি, তার বিদায়ী বার্তার শেষদিকে তার উল্লেখ আছে।

যে সংস্করণ সবার শেষে ছাড়লেন, সেই ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার পথচলা শুরু হয়েছিল। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর শ্রীলংকা সফরে অভিষেক হয় তার। দলে নিয়মিত হয়ে ওঠেন ২০০৮ সালে। বেশির ভাগ সময় ব্যাট করতেন ছয়সাতআট নম্বরে। বড় ইনিংস খেলার সুযোগ ততটা পেতেন না। তবে অবদান রাখতেন নিয়মিত। সঙ্গে কার্যকর অফ স্পিন মিলিয়ে দলের ভারসাম্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন।

প্রথমবার ওপরের দিকে ব্যাট করার সুযোগ পান ২০১১ সালে। বিশ্বকাপের ঠিক পর মিরপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে চার নম্বরে নেমে ৬১ বলে অপরাজিত ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন। তবে পরে আবার তাকে নামিয়ে দেওয়া হয় নিচের দিকে। একটা সময় ‘ফিনিশারের’ ভূমিকায় দলের ভরসা হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে আবার চারে তুলে আনা হয় তাকে। সেই সিরিজে ভালো করার পর বিশ্বকাপেও তাকে চারেই রাখা। তার ক্যারিয়ের স্মরণীয়তম সময়টি আসে তখনই। অ্যাডিলেইডে যে ম্যাচ জিতে কোয়ার্টারফাইনাল নিশ্চিত বাংলাদেশ, সেই ম্যাচেই তিনি খেলেন ১০৩ রানের ইনিংস। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরির কীর্তি সেটি। পরের মাচে তার ব্যাট থেকে আরেকটি শতরান আসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে। খুব লম্বা সময় অবশ্য ব্যাটিং অর্ডারে তিনচারে থাকতে পারেননি। আবার তাকে ছয়সাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কার্ডিফে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বিপর্যয়ের মধ্যে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি ও সাকিব আল হাসানের সঙ্গে রেকর্ড জুটি গড়ে দলকে অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দেন তিনি। ওই ম্যাচ জিতে প্রথমবার আইসিসি আসরের সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ছিলেন তিনি আরও অনেক দিন। তবে দুঃসময়ও হানা দেয় একসময়। ২০২৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পর জায়গা হারান দলে। ওই বছরের বিশ্বকাপের আগে আবার ফিরে আসেন দলে। বাংলাদেশের চরম হতাশার বিশ্বকাপে ব্যক্তিগতভাবে তিনি ছিলেন সফল। সাত ইনিংসে ৫৪.৬৬ গড়ে রান করেন ৩২৮। একটি সেঞ্চুরি করেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। পরের বছর আবার তার পারফরম্যান্সে ভাটার টান পড়ে। জায়গা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তিনি জবাব দেন টানা চার ফিফটিতে। দবে শেষ পর্যন্ত এই দফায় আর ততটা দীর্ঘ হলো না পথচলা। ২৩৯ ওয়ানডে খেলে চার সেঞ্চুরি ও ৩২ ফিফটিতে ৫ হাজার ৬৮৯ রান নিয়ে শেষ হলো তার ক্যারিয়ার, ব্যাটিং গড় ৩৬.৪৬। হাত ঘুরিয়ে উইকেট নিয়েছেন ৮২টি। ৫০ টেস্ট খেলে ২০২১ সালে টেস্ট থেকে বিদায় নেন তিনি। ৫০ টেস্ট খেলে প্রায় ৩৩ গড়ে করেছেন ২ হাজার ৯১৪ রান। যেখানে তার নামের পাশে আছে ১৬ ফিফটি আর ৫ সেঞ্চুরি। পাশাপাশি বল হাতে শিকার করেছেন ৪৩ উইকেট। গত অক্টোবরে ভারত সফর দিয়ে ইতি টানেন টিটোয়েন্টি ক্যারিয়ারের। বাংলাদেশের জার্সিতে মাহমুদউল্লাহ টিটোয়েন্টি খেলেছেন ১৪১টি। যেখানে প্রায় ২৪ গড়ে করেছেন ২ হাজার ৪৪৪ রান। পাশাপাশি বল হাতে শিকার করেছেন ৪১ উইকেট। এবার ওয়ানডের বিদায় দিয়ে আন্তর্জাতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি টেনে দিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ বিরল রক্তিম চন্দ্রগ্রহণ, বাংলাদেশে দেখা যাবে না
পরবর্তী নিবন্ধভিয়েতনাম থেকে বন্দরে এলো ১৭ হাজার টন চাল, খালাস শুরু